লবণ চা আর মুড়ি খেয়ে দিন পার, দেখার নেই কেউ

সজীব দেবরায়, কমলগঞ্জ


এপ্রিল ০৬, ২০২০
০২:০৪ পূর্বাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ০৬, ২০২০
০২:০৪ পূর্বাহ্ন



লবণ চা আর মুড়ি খেয়ে দিন পার, দেখার নেই কেউ
কমলগঞ্জে কর্মহীন পাঁচ শতাধিক শব্দকর পরিবার

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী শব্দকর সম্প্রদায়। এ সম্প্রদায়ের প্রায় ৯০ ভাগ লোক হতদরিদ্র ও দিনমজুর। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারিভাবে জনসমাগম ও চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় এক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ৫ শতাধিক পরিবার কর্মহীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। নেই কোনো কাজ-কর্ম। বেকার সময় পার করেছেন হতদরিদ্র শব্দকররা। গুটিকয়েক পরিবার সরকারি কিছু সহায়তা পেলেও অধিকাংশ পরিবারে জোটেনি সরকারি বা বেসরকারি খাদ্য সহায়তা। দ্রুত পরিবারগুলোর দিকে সহযোগিতার হাত বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলায় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী শব্দকর সম্প্রদায়ের বসবাস। উপজেলার সুরানন্দপুর, সরিষকান্দি, মইডাইল, তিলকপুর, রামচন্দ্রপুর, ধাতাইলগাঁও, লক্ষীপুর, নছরতপুর, জালালিয়া, বালীটেকি, শ্রীনাথপুর, ছলিমবাজার, ধর্মপুর, রাজদিঘীরপার, পতনউষার, হরিশ্মরণ, মধ্যভাগসহ প্রায় ৩৭টি গ্রামে দেড় হাজার পরিবার বসবাস করছে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই দিনমজুর ও ভূমিহীন। আর কেউ কেউ রিকশাচালক, ভিক্ষুক, ঠেলাগাড়ির চালক, বাদ্যযন্ত্রী ও দোকান কর্মচারী।

দেড় হাজার শব্দকর পরিবারের মধ্যে পাঁচ শতাধিক পরিবার খুবই দরিদ্র। করোনাভাইরাস দেশে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কায় দেশ প্রায় লকডাউনের মতো হওয়ায় গত ১ সপ্তাহ ধরে তারা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। কেউ রোজগারে নেই। সবাই বাড়িতে খেয়ে না খেয়ে বসে দিন কাটাচ্ছেন। এই হতদরিদ্র পরিবারগুলোকে দেখার মতো কেউ নেই। ভ্যান, ঠেলা ও রিকশা চালিয়ে আর ভিক্ষাবৃত্তি করে চলা জীবন এখন বন্দি ঘরে। অনাহারে দিন কাটাচ্ছে পরিবারগুলো। অনেক পরিবার ছেলে-মেয়ে নিয়ে লবণ চা আর মুড়ি ভাজা খেয়ে দিন পার করছে। মুন্সিবাজার ও রহিমপুর ইউনিয়নের কয়েকটি পরিবার খাদ্য সহায়তা পেলেও বাকি পরিবারগুলো এখনও কোনো ধরণের ত্রাণ পায়নি।

পনউষার ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামের রিকশাচালক হরেন্দ্র শব্দকর বলেন, চার সদস্যের পরিবার নিয়ে আজ অনেক কষ্টে রয়েছি। কোনো ধরণের সরকারি সহযোগিতা পাইনি। রিকশা চালিয়ে আমার সংসার চলতো। খুবই কষ্টে জীবন চলছে।

একইভাবে আলীনগর ইউনিয়নের শ্রীনাথপুর গ্রামের একটি চায়ের দোকানের কর্মচারী সজল শব্দকর বলেন, মালিক দোকান বন্ধ করায় বেকার হয়ে বাড়িতে দিন কাটছে। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি, কী করব ভেবে পাচ্ছি না। এখনও পর্যন্ত কোনো জনপ্রতিনিধি খোঁজ নিতে বাড়িতে আসেননি।

শব্দকর সমাজ উন্নয়ন পরিষদ, মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক উপেন্দ্র শব্দকর বলেন, সমাজের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী শব্দকর সম্প্রদায়ের অধিকাংশ লোক বর্তমানে কর্মহীন অবস্থায় আছেন। এ জন্য জরুরি ভিত্তিতে তাদেরকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন।

শব্দকর সমাজ উন্নয়ন পরিষদের উপদেষ্টা লেখক ও গবেষক আহমদ সিরাজ বলেন, পিছিয়ে পড়া এ জনগোষ্ঠী সবচেয়ে হতদরিদ্র। দিন আনে দিন খায়। এ মুহূর্তে এসব শব্দকর পরিবারকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিশেষ সহায়তার আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক বলেন, সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী হতদরিদ্রদের খাদ্য সহায়তা দিতে হবে। সরকারি ত্রাণের তালিকায় এসব জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দিয়ে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বলা হয়েছে। এরা যদি কোনো ত্রাণ না পেয়ে থাকেন, তাহলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।