জগন্নাথপুর প্রতিনিধি
এপ্রিল ১৫, ২০২২
০৮:৩৮ অপরাহ্ন
আপডেট : এপ্রিল ১৫, ২০২২
০৮:৩৮ অপরাহ্ন
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে কালবৈশাখীর ঝড়ে বসতঘরের নিচে গাছের চাপা পড়ে মা, ছেলে ও মেয়েসহ তিনজনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) ভোরে এ হৃদয় বিদায়ক ঘটনাটি উপজেলার পাটলী ইউনিয়নের সোলেমানপুর গ্রামে ঘটে।
নিহতরা হলেন, নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার চকবানিয়াপুর গ্রামের হারুন মিয়ার স্ত্রী মৌসুমী বেগম (৩৫), তার ছেলে হোসেন মিয়া (১) ও মেয়ে মাহিমা বেগম (৪)।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্র জানায়, জগন্নাথপুর উপজেলার সোলেমানপুর গ্রামের যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বুলু মিয়ার বাড়িতে কেয়ারটেকার হিসেবে হারুন মিয়া তার বাবা, মা, স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তান নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। তিনি প্রবাসীর বাড়ি দেখাশোনার পাশাপাশি স্থানীয় মিনহাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ‘প্যারা শিক্ষক’ (খন্ডকালীন) হিসেবে কাজ করছেন।
বৃহস্পতিবার ভোর ৫টার দিকে উপজেলার ওপর দিয়ে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে গেলে টিনশেড ঘরের ওপর পাশের দুইটি গাছ বসতঘরে পড়ে হারুন মিয়ার স্ত্রী মৌসুমী বেগম, মেয়ে মাহিনা আক্তার, ও ছেলে হোসাইন মিয়া (১) ঘটনাস্থলেই মারা যান। এসময় অলৌকিকভাবে বেঁচে যান তাদের সাথে ঘুমে থাকা হারুন মিয়ার ভাগনি সেলিনা বেগম (১৩), পাশের কক্ষে ঘুমে থাকা হারুন মিয়ার বাবা ইয়াংরাজ মিয়া (৬৫) ও মা নুরজাহান বেগম (৫৫)। ঘটনার সময় হারুন মিয়া ফজরের নামাজের জন্য ঘরের বাহিরে ছিলেন। ঝড়ে দুটি গাছ পড়ে তাঁদের টিনশেড বসতঘরটি গুড়িয়ে গেছে। এলাকার মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেওয়ার পর এলাকাবাসি ঘটনাস্থলে ছুটে যান। ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিটের সঙ্গে স্থানীয়রা উদ্ধার অভিযান শুরু করে।
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ মর্গে প্রেরণ করে।
স্থানীয় ওয়ার্ডে ইউপি সদস্য মালেক মিয়া জানান, ঝড়ে এক সঙ্গে পরিবারের তিনজনের মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমেছে। ময়নাতদন্তের পর বৃহস্পতিবার রাতেই মৃতদের মরদেহ দেশের বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।
পাটলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আঙ্গুর মিয়া বলেন, ২৫ বছর ধরে হারুন মিয়ার পরিবারের লোকজন এ গ্রামে বসবাস করে আসছে। তিনি জানান, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে সুখের পরিবার ছিল হারুনের। পরিবারের সবাইকে হারিয়ে নির্বাক হয়ে গেছে হারুন।
এদিকে কালবৈশাখীর তাণ্ডবে হারুনের সাজানো সংসারটি তছনছ হয়ে গেছে। পরিবারের সবাইকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন হারুন মিয়া। কথা বলার শক্তি প্রায় হারিয়ে ফেলেন তিনি।
বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে হারুন মিয়ার সঙ্গে কথা বলতে গেলে দেখা যায়, তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে আছেন। কথা বের হচ্ছে না তার। অনেকক্ষণ পর হারুন বলেন, রোজার জন্য সাহরি খাওয়ার পর আমার স্ত্রী বাচ্চাদের নিয়ে ঘুমাতে যান। আমি ফজরের নামাজের জন্য অন্য একটি ঘরে ছিলাম। কালবৈশাখী ঝড় আমার সুখের সাজানো বাগান শেষ করে দিল। তাঁদের সঙ্গে আমি কেন মরে গেলাম না বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
জগন্নাথপুর থানার ওসি (তদন্ত) সুশংকর পাল জানান, ময়নাতদন্তের জন্য লাশ পরিবারের লোকজনের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা ওই পরিবারকে নগদ ৬০ হাজার টাকা সহায়তা প্রদান করেছি।
এ এ/বি এন-০৯