নিজস্ব প্রতিবেদক
জুন ২৩, ২০২৫
০৩:৫০ অপরাহ্ন
আপডেট : জুন ২৩, ২০২৫
০৪:৪৭ অপরাহ্ন
বালাগঞ্জে বোরো ধান সংগ্রহ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে অসাধু সিণ্ডিকেট
সিলেটের বালাগঞ্জে ধান সংগ্রহ কার্যক্রম অসাধু সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। উপজেলা খাদ্য ও কৃষি বিভাগের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের খাদ্য পরিদর্শকদের সহযোগিতায় মাঠ পর্যায়ে একাধিক দালালচক্রের সমন্বয়ে এই সিন্ডিকেট গড়ে ওঠেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কৃষকদের তালিকা তৈরিতেও ব্যাপক অনিয়ম ও অসঙ্গতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে একজনের মোবাইল ফোন নম্বর ব্যবহার করে অন্যজনের নাম দেওয়া হয়েছে। যাদের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে তাদের কেউ শ্রমিক, কেউ ছাত্র, কেউবা আবার গৃহিণী। তালিকার একাধিক মোবাইল নম্বর ব্যবহার হচ্ছে না। আবার অনেকগুলো বন্ধ। এনিয়ে খাদ্য বিভাগ এবং কৃষি বিভাগ একে অপরকে দোষ চাপিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন।
কৃষকরা এসব অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে নতুন করে তালিকা করে ধান সংগ্রহের জোর দাবি জানিয়েছেন।
কৃষকদের অভিযোগ, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই না করেই তালিকা প্রস্তুত করেছেন। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও কৃষি কর্মকতা কৃষকদের না ডেকে গোপনে লটারি করেছেন। মনগড়া লটারি করার পর তালিকা গণমাধ্যমে প্রকাশ বা কোনো ধরনের প্রচারণা করা হয়নি। রাতের আঁধারে খাদ্য গুদামে কমশুকনো মানহীন ধান ঢুকানো হচ্ছে। রাতে ধান না ঢুকানোর জন্য নিষেধ করা হলেও কেউ কর্ণপাত করছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বালাগঞ্জ ইউনিয়নে প্রায় সহস্রাধিক নাম দেয়া হলেও ৩৮জনকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। একটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের চাপে এই তালিকায় আবার ৬জনের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করলে ওই দলের নেতাকর্মীরা নানাভাবে হয়রানি করার ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলে প্রান্তিক কৃষকদের অভিযোগ। এছাড়া, তালিকায় বিভিন্ন গ্রাম ভিত্তিক একাধিক জনের নাম রয়েছে।
বালাগঞ্জ ইউনিয়নের তালিকা ঘেঁটে দেখা গেছে, এই ইউনিয়নে ৪৬টি গ্রাম থাকলেও পাশাপাশি ১৬টি গ্রাম তালিকায় স্থান পেয়েছে। এতে একই পরিবার বা একই গ্রামের একাধিকজনের নাম রয়েছে।
এরমধ্যে তালিকায় তিঁলকচানপুরে একই পরিবারে ৩জনসহ ৮জন, চাঁনপুর ৪জন, থানা কমল্পেক্সের ৩জন, নবীনগরের ১জন, গৌরীরাথপুর ৩জন, সিরিয়া ১জন, কাশিপুর ৬জন, প্রসন্নপুর ১জন, সত্যপুর ৪জন, আদিত্যপুর ১জন, জগৎপুর ১জন, ভট্টপাতন ১জন, বাবরকপুর ১জন, রিফাতপুর ২জন, বালাগঞ্জ বাজার ১জন ও সিরিয়া ১জন।
উপজেলার অন্যান্য ৫টি ইউনিয়নের তালিকায়ও একই চিত্র দেখা গেছে। লটারির নামে তালিকায় এসব অনিয়মের সাথে উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারি, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস ও খাদ্যগুদামের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারি ও মাঠ পর্যায়ের দালালরা জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠেছে।
এদিকে, কৃষি অফিসের ইউনিয়ন ভিত্তিক কতিপয় মাঠকর্মীরা তালিকায় নাম থাকা কৃষকদের নানাভাবে প্রলোভন দিচ্ছেন। কৌশলে কৃষকদের হাত করে কৃষিকার্ড তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে খাদ্যগুদামে ধান দিয়ে বাণিজ্য করার চেষ্টায় লিপ্ত আছেন বলে অনেকেই অভিযোগ তুলেছেন। কৃষক বাছাই ও লটারিতে অনিয়মের বিষয়ে বালাগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আশিকুর রহমান বলেন, স্বচ্ছতার ভিত্তিতে তালিকা করা হয়েছে।
বালাগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (অ:দা:) রিপন রায় বলেন, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে লটারির মাধ্যমে তালিকা প্রণয়ন করার পর ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে।
এবিষয়ে বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজিত কুমার চন্দ বলেন, উপজেলা কৃষি ও খাদ্য বিভাগের সমন্বয়ে প্রস্তুত করা তালিকায় আমি স্বাক্ষর করেছি, অনিয়মের বিষয়ে কারও অভিযোগ থাকলে তদন্ত করে দেখা হবে।
এবিষয়ে সিলেট জেলা খাদ্য নিয়স্ত্রক কর্মকর্তা জাকারিয়া মুস্তফার দৃষ্ঠি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, উপজেলা পর্যায়ে ধান সংগ্রহ কমিটি এই কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করে। তবে, অনিয়ম হয়ে থাকলে খোঁজ নিয়ে দেখবো।
জিসি / ০৭