Cinque Terre

ওয়াহিদ রোকন

১৬ সেপ্টেম্বর , ২০২০


কবি ও গবেষক 


ইতিহাসের স্বপ্নবীজ

একটি যন্ত্রণা জোরদার করেছে একটি স্বপ্নকে, বর্ণনাটাও যন্ত্রণার। কবিতা যেহেতু নন্দনছোঁয়া, সেহেতু কবিতায় উল্লেখিত যন্ত্রণার বরণ হয়ে উঠেছে সুরে ও স্বরে। ইতিহাস থেকে আগামীর স্বপ্ন দেখানোই ‘নানকার ধানবীজ’। কবি স্বপন নাথ ইতিহাসের কাছে দায়বদ্ধ, গা-ভাসানো অনুকরণকারী নন। এর আগেও তাঁর আরও ৪টি কাব্য ও প্রবন্ধগ্রন্থেও প্রমাণিত।

সিলেট অঞ্চলে সংগঠিত একটি বিপ্লবে জুড়ে বসেছে সারা দুনিয়ার নিপীড়িত কৃষক সমাজ। তেভাগার পরে ডাক পড়েছিল এ দেশের উত্তরপূর্ব ভূমিতে। ইতিহাসে যাবেন না কি ইতিহাসের কিনারে দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ-দোদুল্যমান পরিস্থিতিকে সামাল দিচ্ছে তাঁর কবিতা। একদিকে বিদ্রোহে বিষয়ী, অন্যদিকে কাব্য-কম্পোজিশনে উপভোগ্য হওয়ার যাত্রায় ‘নানকার ধানবীজ’ (২০১৫) কালের সীমা ছেড়ে সর্বস্তরের ডাক পাড়ে। কবি স্বপন নাথ, নানকার ইতিহাস অন্বেষায় যে ধানবীজ বপন করেছেন, তা ফলিত কবিতার মত। কতটুকু পাওয়া বা সে-বিশেষ সময়ের সচেতনতা থেকে কতটুকু পাওয়ার কথা ছিল, তা অর্জনের মাত্রাই বলে দিতে পারবে। 

১৯৪৯ এর বিশেষ প্রেরণা হলেও গ্রন্থটি চিত্রকল্পের কায়দায়, দূরদৃষ্টির বুননে, নানকার উত্তরাধিকার হিসেবে পাঠককে প্রণোদিত করে। এবং তা হয়েছে ঋণ স্বীকৃতির ভেতর দিয়ে। এর মাধ্যমে আমরা ইতিহাসের সঙ্গে সংযুক্ত হই, আবার কল্পনায় নানকা থেকে স্বপ্ন ও বাস্তব ভিত্তি তৈরি করি কবিতার রূপক-উপমান-উপমেয়’র সান্নিধ্যে। নানকার বিদ্রোহ থেকে নানকার-ই উত্তরাধিকার হিসেবে ব্যক্তির স্বাধীন চিন্তায় পাঠ করা যায় গ্রন্থটি। কবি পরম সত্য হিসেবে শিল্পিত মনের স্বাধীনতাকে বেছে নিয়েছেন।

  ‘জীবনের চরম সত্য জেনেছি নিশ্চিত-

  শিল্পিত মহৎ ইন্দ্রিয় সুখ,

  ব্যক্তি স্বাধীনতা পরম সত্য।’ 

[ব্যক্তি স্বাধীনতা, নানকার ধানবীজ : ১০]

এ-ব্যক্তিস্বাধীনতা কাব্যের বিষয়ে নিরপেক্ষ, আবার উপভোগে আরেক। শিল্পমননের কৈফিয়ত মনে করতে পারি। ইতিহাস থেকে কবির ব্যক্তিবোধে যে যন্ত্রণাটি উসকে দিয়েছে একটি স্বপ্নকে ঘিরে। উপমা, উৎপ্রেক্ষা, অনুপ্রাস আর চিত্রকল্পে হয়েছে তা নন্দন-মার্জিত। ইতিহাসে যে ধানবীজ রক্তরাঙা হয়েছিল তা থেকে উত্তরাধিকার গ্রহণের সফলতা বা সচেতনতায় ধারণ করা। যেকোনোভাবে হতে পারে স্বাধীন বোধে পাঠকের ‘নানকার ধানবীজ’। আগেই বলা হয়েছে তিনি ইতিহাসের কাছে দায়বদ্ধ। এরকমটা মনে হয় তাঁর ঐতিহাসিক বিবেচনা থেকে।

 ‘আদি সূর্যোদয়ের সাক্ষী গোচারণ ক্ষেত্র, বিশ্বকর্মা গ্রাম

 এ মাটি ছুঁয়েছেন-বিনয়-বাদল-দীনেশ-ক্ষুদিরাম;

 লাঠি বল্লম হাতে লাউতার মাঠে নুরুলদিন, শমসের

 মুখে হুইসেল শিষ দিয়ে ডাক দেন বিপ্লবী সূর্যসেন।’ 

           [এই মাঠ এই বিলের পারে, না ধা: ১১] 

উল্লেখ করি, কবি জীবননান্দ দাশের ছিল ইতিহাস সচেতনতা প্রখর। পঞ্চ-ইন্দ্রিয়ের উপলব্ধি ছিল তাঁর। সংযোজন ছিল-‘সিংহল সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে’,...আরও দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে’।

কবি স্বপন নাথেরও ইতিহাসস্পৃহা প্রবল। গাঁথুনিতে পাই ইতিহাসের নায়কদের। চেতনাগত পরম্পরায় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের কৃষক নেতা হাজী দানেশ, ফাঁসির মঞ্চ থেকে তরুণ ক্ষুদিরাম, সূর্যসেনরা প্রেরণার নেতৃত্ব দিতে ওঠে আসেন নানকার মাঠে। 

কমরেড অজয় ভট্টাচার্য, বরুণ রায়, হেনা দাসের মত সংগঠকদের ছায়াশক্তি হিসেবে ১৯৪৯-এরও আগের প্রতিবাদীরা পাঠককে টেনে নিয়ে যান ইতিহাসের পরম্পরায়। কবে মানুষ সংগ্রাম করেনি? সভ্যতার শুরু থেকে সংগ্রামী জীবন, বিশেষ রক্তক্ষয়ী ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো মানুষের জীবনকে শক্তি সঞ্চারে সাহায্য করে। স্বপন নাথও সে আত্মানুসন্ধানের উপাদান খুঁজে বেড়ান কবিতায়।

কবিতা প্রেম, কবিতাই দ্রোহ। এসব সময়ের সঞ্জীবন। বিপ্লবের সময়, কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করা মানে এর উপযোগও সঞ্চালন করা। সে সুবাদে নানকার বিদ্রোহ যেকোনোও সময়ের প্রেরণার রোমন্থন। নিপীড়ত কৃষক সমাজ জমিদারী প্রথা বিলুপ্তির অবশিষ্ট এখনও, ভূমিহীন কন্ঠস্বর আজও। 

এ যাত্রায় শুধু বিপ্লবের অবিনাশী বয়ান নয়। এর সঙ্গে জড়িত মানব-মানবীর ব্যক্তির বৈপ্লবিক ব্যাপ্তিও। এ ইতিহাসে বিচরণ করলে রসিক হৃদয় বেদনার রসটুকুও হারাতে পারে বলে এই দায় আপাতত নিতে চাই না। নির্বিঘেœ কবিতার চরণে চরণে, চিত্রে চোখ বুলিয়ে নিতে পারি।

‘আধুনিক কাব্যের পটভূমি’ গ্রন্থ লেখক জে. আইজাকস্-এর কথাকে ধরে যদি কবিতা পাঠ করি, তা হলে দেখি-‘কবির কবিতা একই সঙ্গে যে সভ্যতার মূল ও ফল, সেখানে যখন সে প্রতিধ্বনিত হবে তখন এই অনুমান আরও সঠিক রূপলাভ করবে।’

এই ব-দ্বীপে যে ভূমি নানকার রক্তে স্নাত হয়েছিল, সভ্যতার সেই ভূমিমূলে স্বপন নাথ প্রতিধ্বনিত হতে গেলে পরিণামে ওঠে এলো নানকার উত্তরাধিকার। কবিতার ভাষা ইতিহাসের পটভূমিকে ছুঁয়ে যায় ছন্দে-গন্ধে-ক্রোধে-প্রেমে। ফিরে দেখি- ‘গুলি আর চাবুকের আঘাতে ভেঙেছে মাটির বাসন / বুকের ভেতরে ঢুকরে কেঁদে ওঠে রক্তস্নাত বরুদল।’

নির্দিষ্ট করে বললে-১৯৪৯ এর ১৮ই আগস্ট, বিয়ানীবাজারের লাউতা ও সানেশ্বর গ্রামের মাঝখানে সোনাই নদীর তীরে নানকা-প্রজাদের সমাবেশে পাকিস্তানবাদ ও মুসলিমলীগের পুলিশ ও ইপিআর বাহিনি গুলি চালায়। ফলত, ৬ জন কৃষক-প্রজা নিহত হন। এ-অন্তিম বিদ্রোহের আগের জমিদারি অত্যাচারের ইশারা আছে কবির ‘চাবুক’ শব্দটিতে। মূলত, ইতিহাসের ব্যক্তি, স্থান হয়ে ওঠে উপকরণ। না হলে আকর হারিয়ে যাওয়ার হুমকিতে পড়ে যায় পাঠ। যেমন, খুঁজতে হয় কোথায় সেই বিভীষিকাময় অত্যাচার? 

‘এক মানচিত্রের বৃত্তে বাহাদুরপুর সানেশ্বর-লাউতা

ফুলবাড়ি-আমুড়া-রণকেলি-ভাদেশ্বর-মৌরাপুর

দিনাজপুর-নাচোল-সন্দীপ-সুসং-দুর্গাপুর;

নানকা জমিনে পা রেখেছেন ইলা-প্রীতিলতা

এখানেই প্রতিদিন দলিত সংগ্রামের সংবর্ধনা।’ 

  [এই মাঠ এই বিলের পারে, না ধা: ১১]

একই মানচিত্রের ভেতরে বিদ্রোহের পটভূমিকেও স্মরণ করেছেন। যেমন নিয়ে এলেন দিনাজপুর, নাচোলের দ্রোহ, নানকার প্রেরণায়। এভাবে সন্দীপ-সুসংসহ বিদ্রোহের সব ভূমিকে একাকার করেছেন একই সমতলে। তাই ইতিহাসের চরিত্রগুলো আর অন্যান্য আখ্যানকে সমন্বিত করেছেন নানকার সঙ্গে । 

‘নান’ ফারসি শব্দ; অর্থ-রুটি। ‘কার’ শব্দের অর্থ কাজ। নানকার বলতে সেই জমি বুঝায় যা কেবল ভোগের জন্য অন্যকে দেওয়া হয় । মালিকানায় নয়। সিলেট অঞ্চলে এই রেওয়াজকে বেগার বা চাকরান প্রথাও বলা হত। কিরান, নমশূদ্র পাটনি, মালি, ঢুলি, ক্ষৌরকার প্রভৃতি পেশাভিত্তিক শ্রেণির লোকজন ছিলেন নানকার প্রজাভুক্ত । সামন্তবাদী এ প্রথার বিরুদ্ধে ক্ষোভের প্রথম প্রকাশ ঘটে ১৯২২-২৩ খ্রিষ্টাব্দে। সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার সুখাইর গ্রামে জমিদারের বিরুদ্ধে সংগঠিতভাবে প্রজারা রূখে দাঁড়িয়েছিল। এ বিদ্রোহে জনৈক রমণীকে প্রজারা জমিদারের খপ্পর থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। এরপর এ দ্রোহ ছড়িয়ে যায় বিয়ানীবাজার-বড়লেখার বিভিন্ন অঞ্চলে। পরিণামে ১৯৫০ এর পর নানকার প্রথা বিলুপ্ত হয়। এর ভেতরে রক্তস্রোত বয়ে গেছে অজস্র দিন। 

এখানে আমাদের পাঠ একমাত্র শুধুই ইতিহাসসর্বস্ব নয়। কবিতার চরণে স্বীয় ব্যক্তিসত্তার স্বপ্ন রচনাও এ কাব্যের বিষয়। যদিও বিদ্রোহের ইতিহাস বার্তায় করুণ হয়ে ওঠে কবিতার পংক্তিমালা। 

‘সোনাই এর জলে ভাসে অন্তঃস্বত্ত্বা দুর্গার লাল শাড়ি

ধান-রক্ত-মাটি, মাটি-রক্ত-ধান

হিসেব জানে না খুনি।’ 

[শিলালিপি, না ধা: ১৪] 

সোনাই নদীর তীরে সেদিন নারী নেত্রী, অন্তঃসত্ত্বা অপর্ণা পাল অমানবিকভাবে নির্যাতিত হন। ইতিহাস ছেয়ে আছে তাঁর রক্ত। রক্তের সে-ঋণ লেগে আছে আজকের ফলিত ধানে। কবিতায় দ্বিরুক্তি কেবল অনুপ্রাস নয়-অন্তঃতালের লয়কে ধরে রাখে। নানকার অতীত পুরাণ হয়ে ওঠে কবিতার স্বরে। ইতিহাস ধারণার তাৎপর্যে গেলে আমরা এই কাব্যের কবিকে ইতিহাস কথক হিসেবে ইতিহাস থেকে কিছুটা ভিন্নতায় পাঠ করি। যেখানে নিজস্ব ভঙ্গিতে কবির যাত্রা। 

‘যদি আমি সেই দরজার কাছে আবার দাঁড়াই

যদি আমি নতুন কোনো ঠোঁটের আশ্রয়ে নত করি সরল নদী

অযুত শস্যপোকার কামড়ে পূর্ণ হবে চাষাবাদের জমি।’ 

[আত্মরতি, না ধা: ২২]

এভাবে ঘুরে দাঁড়ানো কী বিদ্রোহের কাছে যাওয়া, না কি সেই বিদ্রোহে বপনকরা বীজে প্রবহমান আজকের শস্যধারা? বোধ করি কবিতার মায়াচরণে আঁকা হয় অবচেতনের সরল নদী। যা শেষাবধি পূর্ণতার আহ্বানই করেছে। এ স্বপ্নের জমিতেই কল্পশৈলির বিস্তার, যা কবিতার রূপ। জনসন বলেন, কবিতা হল মেট্রিক্যাল কম্পোজিশন। আনন্দ এবং সত্য একসঙ্গে মেলাবার শিল্প, যেখানে রিজনকে সাহায্য করার জন্যে ডাক পড়ে ইমাজিনেশনের। স্বপন নাথেরও কবিতায় সত্য হল নানকার বিদ্রোহ। এই সত্যের বাস্তবতাকে বোঝার জন্য ইমাজিনেশনের আনন্দই আমাদের পাঠ। ‘একটু কাছে এলেই ছুঁতে পারি তোমার আকাশ / এতটুকু আসতে মানা কেন, কে রেখেছে বৃত্তের আকার?’

জটিল ঘূর্ণিতে নিজেকে হারিয়ে যেতে যেতে আন্দোলিত হওয়া। পরাধীনতার খোলস ভেঙ্গে বেরিয়ে আসা। বৃত্তের আকার ভাঙ্গা। অবিনাশী প্রেম, যা দ্রোহের কিনারে শঙ্কিত অবস্থাকে ছিঁড়ে ফেলার আহ্বান! কোনও মানবকল্পে তার চিত্রকল্প, অবিনশ্বর মূর্তির বিনির্মাণ। কবি আগত ভবিষ্যত নিয়েও উদাসীন হননি। নিজের কালকেও নিশ্চিন্তে দেখে বলেন। 

‘উচ্ছেদের, বঞ্চনার, আর জমি দখলের হিসেব না বুঝে

সেই থেকে হতচ্ছাড়া, সর্বহারা, মূল্য নেই এই নিঃস্বতার

প্রয়োজন নেই এ নিঃসঙ্গ উপহাসি বন্ধুত্বের

দূরে থাকো বন্ধু, বৃষ্টি।’ 

[বৃষ্টির চুম্বনে, না ধা: ২৮]

কবির জ্বলন্ত হৃদয় সচেতন, সময়ের বিদ্রোহী। ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ উপলব্ধির ভেতরে, বন্ধুত্বের কলঙ্কে। ব্যক্তিগত সম্পর্কের দোটানাকে বর্জন করতে এই বিদ্রোহ। কবির স্বতন্ত্র অভিজ্ঞতাকে নিজের মত করে ভাবতে পারি কিছুটা। তা না হলে কে জানতো-

‘ওখানে সারাবছর জল থাকুক, সাঁতরে পার হবো মাতাল জলা

পেছন থেকে বিদ্ধ করে অশরীরি বোধ, লক্ষ্যবিন্দু শেষে তুমি।’

[বিভাজনে, না ধা: ৩৮]

কে এই তুমি? ব্যক্তিগত স্বাচ্ছন্দ্য-অস্বাচ্ছন্দ্যের নিয়ড়ে কবিতার চিরন্তন ছুটে যাওয়া, তা এ-ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের রেখায় ফুটে উঠেছে। সম্ভবত প্রেম, প্রেমের সঙ্গে না মিশিয়ে কবিতার জীবনও আন্দোলনের হয় না ।

এই কামনা একান্তের হলেও উপাদানে সকলের প্রিয়তমাকে হোক আর অবরোধের দুঃখিনীকে হোক, অধিকারের আকাশ ছোঁয়াই তো সেই নানকার বীজ, আজকের মাঠভর্তি সোনালি ধান ।

‘ইতিহাসের খাতা খুললে অনেকেই বালিতে মুখ লুকায় 

উঠের মতো।

ভেতরে আক্রান্ত ভয় নিয়েই তারা বলে-গঙ্গারিদ

ভয়ানক একটি শব্দ!’ 

 [নিয়তির ইতিহাস নির্মাণ, না ধা : ৫৯]

কবি ব্যঙ্গ করছেন দায়িত্বহীন উত্তরাধিকারের। ‘নানকার ধানবীজ’ এ জন্যই প্রতিবাদমুখর। কবিতা সৃষ্টির জন্যে পূর্বের ধ্বংসকে স্বীকার করে। ইতিহাসের একটি নির্দিষ্ট কালো অধ্যায়কে অবলম্বন করে কবি উত্তরাধিকারের জোরে নিজেকে প্রেম, বিচ্ছেদ আর দ্রোহে ত্রিমাত্রিক করতে পেরেছেন বলে মনে হয় এই গ্রন্থে। যেমন কবি বলেন, ‘মুক্তি নেশায় নাচে কৃষক কন্যা কামিনী নর্তকী’। ব্যক্তি বিজয়ের দ্বারে পৌঁছার আগেই তো কবিতার ভাষা হয়ে ওঠে ভিন্নতর। 

‘যে-ভাষা-শব্দ উচ্চারিত শ্রমিকের

যে দাবি উচ্চারিত কৃষকের

লোক ও গণসংগীতের বাণীতে

কণ্ঠে কণ্ঠে কথা তোমার আমার

নানকার উত্তরাধিকার।’ 

[ নানকার উত্তরাধিকার, না ধা: ৫৭]

বস্তুত, বেদনার ইতিহাসে স্নাত হই আর এর উত্তরাধিকারের আনন্দে পাঠ করি ‘নানকার ধানবীজ’। এ-ই যে কবিতার মাধ্যমে নিয়ে যাওয়া মূলের দিকে, ওখানেই কবি স্বপন নাথ কবিতায় ডাক দিয়েছেন নানকার দ্রোহে।

 

 

এএফ/০২