Cinque Terre

সঞ্জয় কুমার নাথ

০৮ অক্টোবর , ২০২০


লেখক : গদ্যকার


কাশীনাথ দাশ তালুকদার : এক কীর্তিমান পুরুষ

কাশীনাথ দাশ তালুকদার। এক কীর্তিমান পুরুষ। ‘মাষ্টারবাবু’ নামে তিনি সকলের কাছে ছিলেন তুমুল জনপ্রিয়। বহুমুখী প্রতিভার মধ্যে তাঁর অমর কীর্তি-তিনি শ্রীমদ্ভাগবত-এর কাব্যানুুবাদক।

তৎকালীন সুনামগঞ্জ মহকুমার বর্তমান জগন্নাথপুর থানার মেঘারকান্দি গ্রামে ১৯১১ সালের ৮ অক্টোবর, ১৩১৮ বাংলার ২১শে আশ্বিন জন্মগ্রহণ করেন শ্রী কাশীনাথ দাশ তালুকদার। আজ তাঁর ১০৯তম জন্মদিন। জন্মতিথিতে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।

কাশীনাথ দাশ তালুকদারের পিতা ডেঙ্গুররাম তালুকদার এবং মাতা জয়তারা তালুকদার। কাশীনাথ ১৯২০ সালে সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার হরিনাকান্দি পাঠশালায় শিক্ষাজীবন শুরু করেন। পড়াশুনায় তিনি ছিলেন প্রখর মেধাবী। ১৯২৫ সালে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় বৃত্তি লাভের মাধ্যমে তিনি তাঁর মেধার পরিচয় দেন। ১৯২৬ সালে হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ জে. কে. উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি। একই গ্রামের রায়চাঁদ দাশ সরকার তাঁকে বই পাঠে উৎসাহ দিতেন। তিনি ষষ্ঠ থেকে সপ্তম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করে উত্তীর্ণ হওয়ায় একখানি শ্রীমদ্ভাগবত গীতা পুরস্কার পান। তখন থেকে তাঁর গীতা পাঠের প্রতি আগ্রহ জন্মে। গ্রাম থেকে উঠে গিয়ে মফস্বলের এক নামীদামী স্কুলে প্রথম স্থান অর্জন করায় সকল শিক্ষকের মনযোগ আকর্ষণ করেন তিনি। ১৯৩০ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় সংস্কৃত বিষয়ে লেটারসহ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯৩৭ সালে তিনি শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে আসাম ফিজিক্যাল ইনস্ট্রাক্টর হিসেবে প্রশিক্ষণ নেন।

১৯৩০ সালে পিতার মৃত্যুর পর একাডেমিক পড়াশুনায় তাঁর ইস্তফা দিতে হয়। চাকরিজীবনের প্রথমেই তিনি শিক্ষকতা পেশা বেছে নেন। সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার জগদল এম.ই স্কুলে ১৯৩২ সালে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৩৩ সালে একই জেলার টংগর এম.ই স্কুলে যোগ দেন। ১৯৩৪ সালে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার হরিনাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। তবে থানা শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে মতানৈক্যের কারণে তিনি স্বেচ্ছায় শিক্ষকতা থেকে পদত্যাগ করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি সমাজসংস্কারে অধিক মনযোগী হন। 

১৯৫৩ সালে তিনি ডিপ্লোমা এম.বি.বি.এইচ (হ্যোমিওপ্যাথ) ডিগ্রি লাভ করেন। এলাকায় ডাক্তার হিসেবে তিনি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯৬৪ সালে তিনি নিজ থানার গোপালগঞ্জ বাজারে ব্রাঞ্চ পোস্টঅফিস স্থাপনের উদ্যোগ নেন এবং সেখানে পোস্টমাষ্টার হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের পর সরকারের পক্ষ থেকে রিলিফ ফান্ডে টাকা জমা দেওয়ার জন্য ব্রাঞ্চ পোস্টমাস্টারদের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। গোপালগঞ্জ বাজারে অবস্থিত তাদের পারিবারিক ব্যবসাও তিনি দেখাশুনা করতেন। পাশাপাশি গ্রামে বসে তিনি সিলেট থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন দৈনিক সংবাদপত্র যেমন-যুগভেরী, দেশবার্তা, জনশক্তিতে রিপোর্ট পাঠাতেন। তাঁর হাতের লেখা ছিল ‘মুক্তোর মতো’। দলিল লেখক হিসেবেও বেশ নামডাক ছিল তাঁর। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে  দলিল লেখানোর জন্য তাঁর কাছে মানুষ ভীড় করতো। 

কাশীনাথ তালুকদার মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছিলেন যে, পশ্চাদপদ অঞ্চলকে সর্বক্ষেত্রে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সুশিক্ষার বিকল্প নেই। তিনি এই অঞ্চলে শিক্ষা বিস্তারের জন্য তৎপর হয়ে উঠলেন। মানুষকে বুঝাতে লাগলেন এলাকায় স্কুল স্থাপনের বিকল্প নেই। সেই ধারাবাহিকতায় তাঁর বিশেষ ভূমিকা ও প্রচেষ্টায় ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় হরিনাকান্দি দীপচাঁদ প্রকাশচাঁদ মধ্যম ইংরেজি (এম.ই) স্কুল। ১৯৫৮ সালে নিজ গ্রামে ঠাকুরধন নি¤œ প্রাইমারী বিদ্যালয় স্থাপনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। পরে এই বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ হয়ে মেঘারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে পাঠদান শুরু করে। ১৯৬৩ সালে বাল্লা এলাকায় জগন্নাথপুর এস.এন পি উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য টানা দশ বছর কৃতিত্বের সহিত এই বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৩৬ সালে তিনি বিনোদিনী দাশের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের চার ছেলে এক মেয়ে। সন্তানরা হলেন-কৃপেশ তালুকদার, প্রমথেশ তালুকদার, পৃথ্বিশ তালুকদার,সীতেশ তালকদার এবং মেয়ে বীথিকা তালুকদার। 

কাশীনাথ দাশ তালুকদার ছিলেন ছিলেন বিশিষ্ট শালিস বিচারক। তিনি অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালন করতেন। বিচারকের আসনে বসে তিনি কখনও পক্ষপাতের আশ্রয় নেননি। তাই তিনি যে রায় প্রদান করেছেন সেটাই উভয় দল মেনে নিয়েছে। কাশীনাথ তালুকদার জীবনের বড় একটা অংশ সালিশ বিচারে ব্যয় করেছেন। মানুষ তাকে বিচারে নেওয়ার জন্য তাঁর বাড়িতে নৌকা নিয়ে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতো। কাউকে তিনি ফেরাতে পারতেন না। 

১৯৪১ সালে বর্তমান নবীগঞ্জ থানার জগন্নাথপুর গ্রামে কৃষক শ্রমিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে কাশীনাথ তালুকদার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। করুণাসিন্ধু রায়ের সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন শিল্পী নির্মলেন্দু চৌধুরী, জননেতা আব্দুস সামাদ আজাদ, পীর হাবিবুর রহমান, শরদিন্দু দে, রাখাল দত্ত, রাধিকা দত্ত প্রমুখ। পরবর্তী সময়ে তিনি স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে কিশোরগঞ্জের কৃষক শ্রমিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে তাঁর বক্তব্য পেশ করেন। এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কমরেড মনি সিং।

১৯৫৫ সাল। বাল্লা অঞ্চলে নদী ভরাট শুরু হয়। নদী ভরাট হয়ে গ্রীষ্মকালে পানির অভাব দেখা দেয়। তখন গ্রামেগঞ্জে টিউবয়েলের প্রচলন ছিল না। স্বভাবতই এই অঞ্চলের মানুষ পানির জন্য নদীর উপর নির্ভরশীল ছিল। তাই জুন মাসে নদী ভরাট রোধে সুরাইয়া নদীর তীরে এক জনসভার আয়োজন করা হয়। কাশীনাথ তালুকদার তাতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। উক্ত সভায় কমরেড বরুণ রায়, জননেতা আব্দুস সামাদ আজাদ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।

১৯৪৯-৫০ খ্রিষ্টাব্দে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গার সময় ৩১ সদস্য বিশিষ্ট জগন্নাথপুর থানা শান্তিকমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির সভাপতি ছিলেন মৌলানা সৈয়দ জমিরুল হক, সম্পাদক ছিলেন সৈয়দ মাফাচ্ছির আলী ও কাশীনাথ দাশ তালুকদার। অত্র এলাকায় যাতে দাঙ্গা ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য প্রতি সার্কেলে গিয়ে তারা সভা-সমিতি করতেন। কাশীনাথ তালুকদার রাত-দিন কঠোর পরিশ্রম করে অত্র এলাকায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করতে সচেষ্ট ছিলেন। 

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বাল্লা অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধারা আশ্রয় নিতেন। সেখানে তাদের খাবারদাবারের ব্যবস্থা করা হত। এই সময় গোপালগঞ্জ বাজারে মুক্তিযুদ্ধ সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। কাশীনাথ তালুকদার ছিলেন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি। তখন রৌয়াইল বাজারে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় শেরপুর বাজারে যুদ্ধকালীন সময়ে রসদ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে অত্র এলাকার গণ্যমাণ্য ব্যক্তি এবং যুবকদের সহায়তায় সেখানে লঞ্চযোগে রসদ পাঠানো হয়। কয়েকদিন পর এলাকার প্রতিনিধি হিসেবে মহেন্দ্রবাবুকে নিয়ে তিনি বালাট ক্যাম্পে গিয়ে বিভিন্ন রাজনীতিবিদ যেমন- অ্যাডভোকেট আব্দুর রইছ (এমপি), কমরেড বরুণ রায়, মুহিম বাবু, গুলজার আহমদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তসহ অন্যান্যদের সঙ্গে বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করে আবার দেশে ফিরে আসেন। 

শ্রাবণ মাসে বানিয়াচুং থানার মাকালকান্দি গ্রামে পাকসেনারা আক্রমন করে। পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়। শতশত মানুষ মৃত্যুবরণ করে। তখন বাল্লা অঞ্চলে আতংক বিরাজ করে। তাই জীবন বাঁচানোর তাগিদে এই অঞ্চলের মানুষ ভারতের মেঘালয় এবং বালাট ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়। তখন কাশীনাথ তালুকদার পরিবার নিয়ে বালাট ক্যাম্পে আশ্রয় গ্রহণ করেন। সেখানে তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে উল্লেখিত রাজনীতিবিদদের সঙ্গে বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করেন। 

১৯৭৯ সালের দিকে তিনি তীর্থ ভ্রমনের লক্ষ্যে ভারতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। তারপর দেশে ফিরে তিনি সাহিত্যকর্মে মনোনিবেশ করেন। ১৯৭৯ সালে তিনি তাঁর একমাত্র মেয়ের বাড়ী রাজনগর থানার বিলবাড়ী গ্রামে বিশ্রামের উদ্দেশ্যে বেড়াতে যান। ওই গ্রামের ভক্তপ্রবর সাধু গিরিন্দ্র দাশ-এর কাছ থেকে সংস্কৃত ভাষার শ্রী কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন প্রণীত, শ্রী রামনারায়ণ বিদ্যারতেœন প্রকাশিত, মুদ্রিত সন ১২৯২ ভাদ্র, শ্রীমদ্ভাগবতের মূল গ্রন্থখানা সংগ্রহ করেন। তাই শ্রদ্ধার্ঘস্বরূপ তিনি সাধু গিরিন্দ্র দাশকে একটি কবিতা উৎসর্গ করেন। পরবর্তীতে এই গ্রন্থ থেকেই তিনি বাংলায় শ্রীমদ্ভাগবতের কাব্যানুবাদে মনযোগী হন। সাধু গিরিন্দ্র দাশকে নিয়ে লেখা তাঁর কবিতাটিÑ

[...]

কি করি উপায় হায় পঞ্চ বিংশতিবর্ষ প্রায়

গত হইল না পাই সন্ধান।

ভাগবত আস্বাদিতে অমৃত রস পিপাসিতে

খুঁজিলাম বহু বহু স্থান ॥

অসুখের ছল করি আনিলা কানাইর পুরী

কানাইলাল দয়াপরবশে।

বিলবাড়ী গ্রাম নাম তনয়া কানাইর ধাম

চিকিৎসা বিশ্রাম পরিবেশে ॥

গগণে উদিত ভানু বিনীত স্বরে প্রকাশিনু

হেন কালে ভক্ত বৎসল।

আসিয়া গিরিন্দ্র রায় বাসুদেবের কৃপায়

মোর কাছে বলিত লাগিল ॥

ভাগবত মহাগ্রন্থ করে যারা কন্ঠস্থ

হেন গ্রন্থ বিরাজে মোর ঘরে।

দিনরাত্রি পিয়ে পিয়ে মধুর রস আস্বাদয়ে

শান্তি দান কর হে অন্তরে ॥

 

[...]

 

তাঁর জীবন বিশ্লেষণে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, তাঁর উনসত্তর বছরের জীবনে প্রায় পুরোটাই সমাজ সংস্কারক হিসেবে ব্যয় করেছেন। কিন্তু সাহিত্য সাধনার জন্য তিনি সময় পেয়েছেন জীবনের শেষ একটি বছর। আর এই এক বছরেই তিনি শ্রীমদ্ভাগবত এর কাব্যানুবাদ, শ্রী শ্রী কৃষ্ণলীলা কীর্ত্তন এবং রাধাকৃষ্ণ লীলা সঙ্গীত বই তিনটির কাজ সমাপ্ত করেছেন। তবে দুর্ভাগ্য যে তিনি শ্রীমদ্ভাগবতের প্রকাশনা দেখে যেতে পারেন নি। তিনি ভাগবত কাব্যানুবাদে হাত দেওয়ার সময়কালটা সূচনাতেই বর্ণনা করেছেন। তিনি লিখেছেন-

তেরশ ছিয়াশি অব্দে মাস হয় মীন

চতুর্দশ দিবসেতে ভৃগুবাসর দিন।

রচনা আরম্ভ করি আমি অভাজন

বাসুদেব কৃপাই শুধু আমারই প্রার্থনা।

 

এ থেকে বুঝা যায় তিনি ১৩৮৬ বঙ্গাব্দে ফাল্গুন মাসে ১৪ তারিখ রবিবার শ্রীমদ্ভাগবত অনুবাদ শুরু করেন। জানা যায় ভাবগত অনুবাদকালীন সময়ে পাশের বাড়ির ধামাইলগান শুনে মুগ্ধ হয়ে তিনি রচনা করেন ধামাইলগান, ভজন সঙ্গীত, মনশিক্ষা, কালী মালসী ইত্যাদি গানগুলি। এই গানগুলোর সমন্বয়ে তাঁর দ্বিতীয় গ্রন্থ রাধাকৃষ্ণ লীলা সঙ্গীত প্রকাশিত হয়। তাঁর জীবনের শেষ পর্যায়ে অর্থাৎ ১৩৮৬ বঙ্গাব্দ থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ১৩৮৭ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত তিনি সাহিত্য সাধনায় পূর্ণ মনযোগ দিয়েছেন। 

বাউলস¤্রাট শাহ আবদুল করিম ও আবদুস সাত্তারের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তাঁরা বেশ কয়েকবার তাঁর বাড়িতে গান পরিবেশন করেন। তাঁরা আধ্যাত্মিক আলোচনায় মেতে উঠতেন। একবার আবদুল করিম কাশীনাথ তালুকদারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘মাস্টার বাবু, আমি মনে করতাম আপনি শুধু গ্রাম্য পঞ্চায়েত আর বিচার নিয়েই ব্যস্ত থাকেন কিন্তু আজ বুঝলাম আপনি প্রেমরসে ভরপুর একজন মানুষ।’ 

কাশীনাথ দাশ তালুকদারের প্রথম গানের বই ‘শ্রী শ্রী কৃষ্ণলীলা কীর্তন’ ও ধামাইল, মনশিক্ষা, ভজন ও কালী মালসী সমন্বিত ‘রাধাকৃষ্ণ লীলা সঙ্গীত’ প্রকাশিত হয় ১৯৮০ সালের ১৪ মার্চ। শ্রীমদ্ভাগবত-এর প্রথম সংস্করণ বের হয় মার্চ, ১৯৮৭ ইংরেজি (চৈত্র, ১৩৯৩ বাংলা)।  দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয় নভেম্বর, ২০০৭ ইংরেজি (অগ্রহায়ণ, ১৪১৪ বাংলা)। কাশীনাথ তালুকদারের জীবন ও কর্ম নিয়ে বেশ কিছু প্রবন্ধ প্রকাশিত হলেও তাঁর সূর্যব্রত সংগীত ও ধামাইল নিয়ে লোকসংস্কৃতি গবেষক সুমনকুমার দাশ সম্পাদিত ‘সূর্যব্রত সংগীত ও অন্যান্য’ গ্রন্থটি হচ্ছে প্রথম সম্পাদিত গ্রন্থ।  

কাশীনাথ তালুকদারের বাউল পদ নিয়ে সুমনকুমার দাশ বলেন-‘বাংলার অনেক নমস্য মহাজন রয়েছেন, যাঁরা শুধুই বাউলপদ রচনা করেছেন, এঁরা কখনোই প্রচলিত বাউল-আচরণকে গ্রহণ করেন নি। তবে প্রত্যেক মহাজন ভেতরে ভেতরে ঠিকই বাউল-সাধনার ধারাকে বহন করে চলেছেন। কাশীনাথ তালুকদার সেরকম ধারার একজন বাউল-গীতিকার। যদিও বাংলাদেশে শ্রীমদ্ভাগবত গ্রন্থের প্রথম বাংলা কাব্যানুবাদক হিসাবে তাঁর পরিচিতি সর্বজনবিদিত।’

১৬ই কার্তিক ১৩৮৭ বাংলা, ১৯৮০ সালের ২রা নভেম্বর রোজ রবিবার আনুমানিক বিকাল ৪ ঘটিকায় তিনি পরলোক গমন করেন।