শাকির আলম কোরেশী
২৬ অক্টোবর , ২০২০
সম্পাদক
ব্রেকিংস২৪.কম
সিলেটে হঠাৎ করেই একটি বিশেষ বুলিং পার্টির উপস্থিতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে। এর আগে দেশের বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি, রাজনৈতিক বা ব্যবসায়িক প্রতিপক্ষকে হেয় করতে সাইবার বুলিং এর তৎপরতা দেখা গেছে। সম্প্রতিকালে দেখা যাচ্ছে সিলেটে একটি চক্র এমসি কলেজ ও তার অধ্যক্ষকে নিয়ে বিশেষ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অপতৎরতা চালাচ্ছে। তাদের মাধ্যমে সিলেটের বাজারে সাইবার বুলিং জানান দিচ্ছে। নাহলে কেন তারা কলেজের মাঠে গরুর হাট বসানোর ব্যর্থ প্রচেষ্ঠার পর থেকেই ঐ লিস্টেট কিছু ব্যক্তি সামাজি যোগাযোগমাধ্যমে দলবেঁধে কলেজ অধ্যক্ষের পিছনে দফায় দফায় এটা-সেটা নিয়ে বুলিং করতে থাকবে। কলেজের কোন কিছুতে অসঙ্গতি চোখে পড়লে সাংবাদিক হিসেবে যে কেউ একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করতে পারেন বা একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি তুলে ধরে প্রতিকার চাইতে পারেন। সেখানে জনগণ তার মতো করে প্রতিক্রিয়া জানাবে বা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। সরকার বা সংশ্লিষ্ট বিভাগ তাদের মতো করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। অথচ সেই পথে না হেঁটে সামাজিক মাধ্যমে যেভাবে দলবেঁধে আক্রমণাত্মক হয়ে অধ্যক্ষকে বুলিং করার চেষ্টা করছে তার রহস্য উদঘাটন জরুরি। এতে নতুন করে কোন বাণিজ্য আদায়ের গন্ধ স্পষ্ট হয়ে উঠছে। যা অবশ্য সাইবার অপরাধের আওতায় পড়ে।
কলেজ মাঠে কোরবানির গরুর হাট নিয়ে অন্তত কয়েক কোটি টাকার বাণিজ্য হওয়ার কথা ছিল। এখানে ব্যর্থ হলেও কলেজে বেশ কয়েক কোটি টাকার নির্মাণাধীন দশ তলা ভবনের কাজ কিভাবে ওয়াকওভার পায় সেটাই তাদেরকে ভাবিয়ে তুলে। সাইবার বুলিং হচ্ছে অনলাইনে কাউকে প্রলুব্ধ বা হেয় প্রতিপন্ন করা, ভয় দেখানো এবং মানসিক নির্যাতন করা। শুরুতে কিশোর-কিশোরীরাই কেবল এ ধরণের কাজে জড়িত থাকত। পশ্চিমা বিশ্বে স্কুল কলেজে শিশু কিশোররা পরস্পর বুলিং এর শিকার হতো। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলোও এর থেকে মুক্ত নয়। পরে দেখা যায় অনেকক্ষেত্রে স্ব নামে বা ফেক আইডির আড়ালে প্রাপ্ত বয়স্ক অনেকেই এ ধরণের হীন কাজে জড়িত থাকেন। সাইবার বুলিংয়ের ঘটনা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ঘটলেও ফোনে কিংবা ই-মেইলেও অনেক সময় এ ধরণের নির্যাতনের ঘটনা ঘটে থাকে। এক সময় কিছু কথিত সাংবাদিক বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিতে প্রোপাগান্ডা বানিয়ে বুলিং করতেন। এ সব বুলিং ও প্রোপাগান্ডার কালো থাবা থেকে নিজেদের মান-সম্মান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রক্ষা করতে বড় বড় ব্যবসায়ী গ্রুপ নিজেরাই পত্রিকা প্রকাশনা শিল্পে জড়িয়ে পড়েন।
সাম্প্রতিক সময়ে সাইবার অপরাধ জটিল এক মনস্তাত্ত্বিক উপদ্রবের রূপ ধারণ করেছে। যার শিকার হচ্ছে কমবেশি সব বয়সের ও সব শ্রেণী পেশার মানুষ। এই সাইবার বুলিজমের বুলিং বলতে আমরা বুঝি দুইজন ব্যক্তির মধ্যে তর্ক বা কথা-কাটাকাটির জের ধরে একজন ব্যক্তিকে সুনির্দিষ্টভাবে সবার সামনে দোষারোপ বা খারাপ ভাষায় আক্রমণ করা। আবার একজনের ছবি বা ভিডিও বিকৃতি করে অনলাইনে তুলে ধরাও বুলিংয়ের মধ্যে পড়ে। এটি এক ধরণের সাইবার অপরাধ। বর্তমান সরকার আমাদের সংবিধানে কিন্তু এসব অপরাধ দমনে আইনও প্রণয়ন করেছে।
শাহজালালের পুণ্যভূমি সিলেটে সাম্প্রতিক সময়ে পরিলক্ষিত হওয়া বহুমাত্রিক অপরাধ বাণিজ্যের ব্যাপারে আমাদেরকে সজাগ থাকতে হবে। সাইবার বুলিং করে শিক্ষিত চাঁদাবাজ চক্র আমাদেরকে বিপর্যস্ত করে অপরাধ বাণিজ্য করার সুযোগ নিতে চেষ্টা করবে। সাইবার বুলিংয়ে আক্রান্ত হলে কখনোই আপনি সাড়া দেবেন না এবং নিজেও পাল্টা আক্রমণ করবেন না। আপনার রি-অ্যাকশন পেলেই তারা কিন্তু প্রাথমিক বিজয় হিসেবে ধরে নেয় এবং তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ লক্ষ আদায়ে মরিয়া হয়ে উঠে। কাজেই এ ধরণের পরিস্থিতির শিকার হলে আপনাকে প্রথমেই নিজেকে বোঝাতে হবে, এটি আমাদের দোষ নয়। কেউ যদি খুব খারাপভাবে আক্রমণ করে এবং এই নিষ্ঠুর আচরণের জন্য আপনি নিজেকে দোষী ভেবে কষ্ট পাবেন না। মনে রাখবেন অন্যের আচরণের দায় আপনার নয়। আপনি যদি মনে করেন আপনাকে বুলিং করা হয়েছে বা আপনি মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, সম্ভব হলে এর স্বপক্ষে যথাযথ প্রমাণ সংগ্রহ করে তা সংরক্ষণ করুন এবং সুযোগ করে আইনের আশ্রয় নিন।