Cinque Terre

দীপক রায়

২২ এপ্রিল , ২০২০


উন্নয়ন কর্মী


করোনাযুদ্ধে ব্যক্তিগত সুরক্ষা এবং করণীয়

গোটা বিশ্বে করোনা ভাইরাসের কারণে মহাসংকট চলছে। আমাদের দেশও এ থেকে মুক্ত নয়। যতদিন যাচ্ছে, ভয়ও বাড়ছে। কোভিড-১৯ মহামারিতে এখন প্রায় পুরো বাংলাদেশ আক্রান্ত। আমাদের হাসপাতালগুলোর-কেবিন, ওয়ার্ড, বিছানা, আসবাব-জীবাণুমুক্তকরণ প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। সংক্রমণ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। চিকিৎসকরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। যা উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। এমতাবস্থায় বুদ্ধি, বিবেক আর বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে মুক্তির পথ খুঁজতে হবে। চোখ কান খোলা রাখতে হবে বিশ্বের অন্যান্য দেশ কীভাবে এই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। 

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে একে একে ফ্রন্টলাইনের যোদ্ধা, ডাক্তার-নার্সরাও সংক্রমিত হতে দেখা যাচ্ছে। ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী পিপিই, মাস্ক, প্রটেকশন গিয়ারের সংকট তো আছেই,অতিশিগগিরই এই সংকট চরম আকার ধারণ করবে বলে মনে হচ্ছে। 

পদ্মপুরাণে আছে, লখিন্দরের লোহার বাসরঘরে একটি ছিদ্র ছিল। এখন যেন এই সংকটকালে আমাদের জীবনের পদে পদে কোটি কোটি ছিদ্র তৈরি হয়েছে! তাই এই ছিদ্র বন্ধ করতে না পারলে আমাদের সমূহ বিপদ সামনে অপেক্ষা করছে, এ নিয়ে মোটেই সন্দেহ নেই।

তবে উপায় আমাদের বের করতেই হবে। বিশেষ করে প্রটেকশন গিয়ারগুলোর কথা বলছি। যদি আমরা ব্যক্তিগত প্রটেকশন গিয়ারগুলো বিজ্ঞানসম্মতভাবে সম্পূর্ণরূপে জীবাণুমুক্ত করে পুনরায় ব্যবহারের ব্যবস্থা করতে পারি তাহলে সাশ্রয় হবে। করোনাযুদ্ধে আমাদের দুশ্চিন্তাও একটু হলেও কমবে। শতাধিক বছরেরও অধিককাল ধরে প্রতিষ্ঠিত যে, স্বল্প তরঙ্গ দৈর্ঘ্যরে অতিবেগুনী আলোক রশ্মি UVC ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাস-অণুজীবকে ধ্বংস বা অকার্যকর করে ফেলে। ১৯০৩ সালে নোবেল পুরস্কারও দেওয়া হয় ত্বকের যক্ষায় অতি বেগুনী রশ্মির সফল প্রয়োগের জন্য। বহুকাল থেকেই কৃত্রিম UVC আলোকরশ্মি পানি, বায়ু জীবাণুমুক্ত করতে ব্যবহার হচ্ছে। এমনকি শল্যচিকিৎসার সরঞ্জামাদি স্টেরিলাইজেশনের যন্ত্রাদিতেও এই আলোক রশ্মি ব্যবহৃত হচ্ছে। উল্লেখ্য, সূর্যালোকেও স্বল্প দৈর্ঘ্যরে অতি বেগুনী রশ্মি রয়েছে; যার অধিকাংশই বায়ুম-লের ওজন স্তরে বাধা পেয়ে ভূপৃষ্ঠে পৌঁছতে পারে না। জীবাণুমুক্তকরণে মার্কিন সিডিসি-ও অতি বেগুনী রশ্মির ব্যবহারে অনুমোদন দিয়েছে। সম্প্রতি তা হাসপাতালকক্ষ, গাড়ি, বিমান ইত্যাদি জীবাণুমুক্তকরণে ব্যবহার হচ্ছে বিভিন্ন দেশে। বর্তমানে অতি বেগুনী রশ্মি সৃষ্টিকারী বাসা-বাড়িতে ব্যবহারোপযোগী জীবাণুমুক্তকরণ ডিভাইস ও লাইট (deep UVC LED, 222 nanometer wave length) উন্নত দেশগুলোর বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। দামও তেমন আহামরি কিছু নয়। এক একটি ২০-২৫ ডলার থেকে শুরু।

আমাদের দেশে করোনাযুদ্ধে নানা কারণে একদিকে ডাক্তার-নার্সদের জন্য সংক্রমণরোধী পিপিই-র সংকট চলছে। আরেক দিকে পিপিই-র অনেকগুলোই একবার মাত্র ব্যবহার করে ধ্বংস করে ফেলতে হচ্ছে। এমতাবস্থায় আমাদের হাসপাতালগুলোতে যদি স্বল্প তরঙ্গ দৈর্ঘ্যরে অতি বেগুনী রশ্মির আলোক ব্যবহার করে জীবাণুমুক্ত করা যায় তাহলে, পিপিই একাধিকবার ব্যবহার করা সম্ভব হবে। এভাবে আমরা আমাদের ফ্রন্ট লাইনের যোদ্ধাদের রক্ষা করে স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে পারি। 

সরকারিভাবে এধরনের লাইট বাল্ব আমদানী কঠিন কোনো ব্যাপার নয়। অতি বেগুনী রশ্মির লাইট ব্যবহার করে জীবাণুমুক্তকরণের বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত একটি পদ্ধতি। তাই এ নিয়ে আমাদের আর গবেষণার দরকার পড়ছে না আপাতত। অন্তত এই সংকটকালেতো বটেই। তাই বলছি, পরীক্ষিত বিজ্ঞানসম্মত এই পদ্ধতিটি প্রয়োগ করা যেতে পারে। সামর্থ্যরে কথা বিবেচনা করে আপাতত আমাদের প্রতিটি হাসপাতালে (প্রয়োজন হলে হাসপাতালের প্রতিটি ফ্লোরে) এই কাজটি শুরু করা হোক। এ  ক্ষেত্রে একটি কক্ষে সব দিক থেকে আট-দশটি উপযুক্ত ক্ষমতা সম্পন্ন UVC বাল্ব সেট করে, যথেষ্ট ফাঁক রেখে পিপিই টাঙিয়ে রেখে, যাতে পিপিই-র সব দিকে আলোটি পড়ে, প্রয়োজনীয় সময় লাইটগুলো জ্বালিয়ে রাখতে হবে। 

সাবধানতা : UVC রশ্মি মানুষের জন্য ক্ষতিকর, তবে তা কাঁচ ভেদ করতে পারে না। যখন আলোটা জ্বালানো হবে তখন ওই কক্ষটি বন্ধ রাখতে হবে এবং ভেতরে কেউ থাকবে না। আলোগুলোর সুইচ থাকবে কক্ষের বাইরে বা রিমোট কন্ট্রোলড্।

তবে এটি ঠিক যে, এই পদ্ধতি শুরু করার আগে দেশের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে হবে। আমি শুধু ধারণা দিলাম মাত্র। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা-জার্নাল পড়ে আমার এই ধারণা জন্মেছে। এটি করতে হলে অবশ্যই সরকারের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ও উপযুক্ত বিশেষজ্ঞ দলকে সম্পৃক্ত করতে হবে।