Cinque Terre

মোহাম্মদ আব্দুল হক

১৭ অগাস্ট , ২০২১


প্রাবন্ধিক
১৫ আগস্ট আমাদের কাঁদায়, লজ্জিত করে

বাঙালির জীবনে আগস্ট শোকের মাস। ১৫ আগস্ট আমাদেরকে কাঁদায়, লজ্জিত করে। এইদিনে আমরা আরও নিবিড় ভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে খুঁজি।

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আলোচনা কোনো একটি নির্দিষ্ট তারিখে আটকে রাখা যায় না। শেখ মুজিবুর রহমান জন্মেছিলেন বলেই বাঙালি জাতি স্বাধীন সত্ত্বা পেয়েছে।  শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর প্রাণান্ত ভালোবাসা ছিল। তাই সতের মার্চ তারিখকে বাংলাদেশে শিশু দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে ১৯৯৬ সাল থেকে। 

শেখ মুজিবুর রহমান জন্ম গ্রহণ করেছিলেন ১৭ মার্চ ১৯২০ সালে। তৎকালীন ফরিদপুর জেলা অর্থাৎ বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে পৈত্রিক বসতবাড়িতে। তাঁর পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান এবং মাতার নাম সায়রা খাতুন। তাঁরা ছয় ভাই বোনের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান তৃতীয়। মা বাবার আদরের ছেলেকে তাঁরা আদর করে খোকা বলেই ডাকতেন। টুঙ্গিপাড়ার এই খোকাই দিনে দিনে দীর্ঘ সংগ্রামী পথে হেঁটে হয়েছেন বাংলাদেশ ও পৃথিবীতে একজন বঙ্গবন্ধু। 

প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো বাড়ি থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরের গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয় যা ওই সময়ে ওই এলাকায় একমাত্র ইংরেজি মাধ্যম স্কুল। পরে তিনি ১৯৩১ সালে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে। মাঝে তাঁর শারীরিক অসুস্থতা দেখা দেয়। এরপর ১৯৩৭ খ্রীষ্টিয় সালে ভর্তি হন গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে। গোপালগঞ্জ মিশন স্কুল থেকে শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪২ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। এরপর তিনি কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হয়ে সেখান থেকে ১৯৪৪ সালে আই.এ. পাস করেন এবং ১৯৪৭  সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাসে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। ওই ইসলামিয়া কলেজে পড়াকালীন সময়েই শেখ মুজিবুর রহমানের ছাত্র রাজনীতির জীবনের বিকাশ ঘটে। তিনি ১৯৪৬ সালের তৎকালীন ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে ১৯৪৮ সালে শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে এলএলবি তে ভর্তি হন। কৈশোরেই মুজিবের হাতেখড়ি হয় বিভিন্ন সংগঠনে কাজ করার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে তিনি বিভিন্ন ন্যায্য দাবী নিয়ে আন্দোলন করতে শুরু করেন জোরালোভাবে। এরপর আর থেমে থাকেননি। যেখানেই অন্যায় সেখানেই প্রতিবাদে মুখর শেখ মুজিবুর রহমান। কোথায় নেই বঙ্গবন্ধু ! ভাষা আন্দোলন, তারপর শিক্ষা আন্দোলন, স্বাধীকার আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয়দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান সবখানেই শেখ মুজিবুর রহমান নেতৃত্বে।

আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ হয়ে উঠার আগের ঐতিহাসিক ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিশ্ববাসীর কাছে ছিল এক অতুলনীয় নির্বাচন। কিন্তু পাকিস্তানিরা আমাদেরকে ক্ষমতা দেয়নি। এরপরের ইতিহাস, যথা সময়ে নেতার কন্ঠের ঘোষণা- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ তাঁরই নেতৃত্বে দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ শেষে ত্রিশ লক্ষ বাঙালি প্রাণের বিনিময়ে এবং দুই লক্ষ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে এসেছে আমাদের স্বাধীনতা।

কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাস্ত্রো বলেছিলেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি। তবে শেখ মুজিবকে দেখেছি।’

এই কথা থেকেই বঙ্গবন্ধুর বিশালতা অনুধাবন করা করা যায়। কিন্তু বিশ্ব রাজনীতির ষড়যন্ত্র আর পাকিস্তানিদের দোসররা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। দিনটি একটি কলঙ্কিত দিন হিসেবেই থেকে যাবে বাঙালির জীবনে। বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধা।