শুভ আজাদ
২৪ এপ্রিল , ২০২০
করোনাভাইরাস ছাড়া এখন আর কোনো কিছুই আলোচনায় স্থান পাচ্ছে না। ঘুম থেকে উঠেই কতজন মারা গেল, কতজন আক্রান্ত হলো, কতজন সুস্থ হলো, এই হলো-প্রথম জানার বিষয়। কীভাবে এ ভাইরাস ছড়িয়েছে, কবে শেষ হবে এর তাণ্ডব সেটা নিয়েও চলছে নানা আলোচনা।
এক কথায় সকল শ্রেণির মানুষের মধ্যে এই ভাইরাসের আবির্ভাব নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে এরই মধ্যে নানা কথাও মানুষের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। টেনিস তারকা মারিত সাফিনের ধারণা, বিল গেটস আসলে ভালো মানুষ সাজার চেষ্টা করছেন। করোনাভাইরাসের মতো কোনো ভাইরাস যে ছড়িয়ে পড়বে, গেটসের এমন সতর্কবার্তা দেখেই নাকি সাফিনের সন্দেহ হয়েছে বড় ধরণের কোনো ষড়যন্ত্র বহুদিন ধরেই চলছে, এবং সেটা মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্যেই।
স্পোর্টস ডট আরইউর সঙ্গে কথোপকথনে সাফিন দাবি করেছেন, ‘আমার ধারণা, তারা মানুষের শরীরে চিপ স্থাপন করতে চায়, সবকিছু এর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল। ২০১৫ সালে গেটস বলে দিয়েছেন, একটা মহামারি হবে। ভবিষ্যতে আমাদের বড় শত্রæ হবে ভাইরাস, কোনো পারমানবিক যুদ্ধ নয়। ওরা ডাভোস ফোরামে এমন কিছু হলে কী হবে তার একটি পরীক্ষা করে নিয়েছিল। আমার মনে হয় না গেটস কোনো ভবিষ্যদ্বানী করেছিল। সে আসলেই জানত কী হতে যাচ্ছে।’
বিশ্বজুড়ে এ পর্যন্ত প্রায় পৌণে দুই লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন এই করোনা ভাইরাসে।
নতুন করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে নানা প্রশ্ন বারবার ঘুরেফিরে আসছে।
অনেকেই একে চেনা যুগের সমাপ্তি এবং নতুন যুগের শুরু হিসেবে দেখছেন। অনেকে আবার বলছেন করোনাভাইরাস একটি গোটা যুগের সমাপ্তি নয়, বরং ইতিহাসের গতি বাড়িয়ে দেওয়ার কাজটি করবে।
অবশ্য প্রতিটি সংকটেরই একটি নিজস্ব প্রকৃতি থাকে। গত শতকের দুটি বিশ্বযুদ্ধই যেমন রাষ্ট্র ও বিশ্বকাঠামো সবকিছুই পাল্টে দিয়েছিল। এই পাল্টে যাওয়াকে চূড়ান্ত রূপ দিয়েছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন। সাধারণ প্রবণতা হচ্ছে, যেকোনো বৈশ্বিক বিন্যাস নতুন কোনো বড় ঘটনায় ওলট-পালট হওয়ার আগপর্যন্ত কাজ করে। এ বিষয়ে মার্কিন সাময়িকী ফরেন পলিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, মোটাদাগে বৈশ্বিক বিন্যাস খোলনলচে বদলে দেওয়ার মতো ক্ষমতা মহামারির নেই বলেই মনে করা হয়। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ, জি-২০, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বৈশ্বিক সংস্থাগুলো যেভাবে হাল ছেড়ে দেওয়া মনোভাব দেখাচ্ছে, তাতে অন্তত তেমনই মনে হচ্ছে। কারণ, বৈশ্বিক এ সংকট সামাল দিতে না পারলে রীতি অনুযায়ী কাঠামো টিকিয়ে রাখা এই সংস্থাগুলোও তো অস্তিত্বের সংকটে পড়ার কথা। তাই এই সংকটের মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক পরিসরে বড় কোনো পরিবর্তন হয়তো হবে না। তবে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিমত্তা হ্রাস, আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিপরীতে দেশে দেশে জাতীয়তাবাদের উত্থান, চীন-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের আরও অবনমনের মতো বিষয়গুলো ঘটতে থাকবে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতির খুব দ্রæত পতন ঘটছে। বিশ্বায়নের কারণে সব দেশ পরস্পর সংযুক্ত হওয়ায় এই পতন থেকে আদতে কেউ সুরক্ষিত নয়। ফরেন পলিসি বলছে, এমন পরিস্থিতি গোটা অর্থনৈতিক কাঠামোকে যদি বদলে নাও দেয়, বড় ধরনের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের জন্ম দেবে। অর্থনৈতিক কাঠামোর
তবে চলমান সংকট এরই মধ্যে সারা বিশ্বের মানুষকে এক ভয়াবহ অনিশ্চয়তায় এনে দাঁড় করিয়েছে, যা বিভিন্ন দেশের সরকারগুলোকে প্রশ্নের মুখে ফেলছে। আর এই প্রশ্নই দেশগুলোকে এক নতুন বাস্তবতায় নিয়ে দাঁড় করাতে পারে। কারণ, মহামারি মন্দার জন্ম দেয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফল ছিল গত শতকের প্রথম বৈশ্বিক জোট গঠন। মন্দার কারণেই সে সময়ের মানুষ ও প্রশাসন অবাধ বাজার ব্যবস্থার ওপর আস্থা হারায়। বাজারের ব্যর্থতার জেরে রাষ্ট্র সেখানে নাক গলায় এবং সেই ভ‚মিকা থেকে রাষ্ট্র কখনো পুরোপুরি সরে আসেনি।
বছরের শুরুটা চীনের জন্য ছিল ভয়াবহ। উহানে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর চীনের কমিউনিস্ট পার্টি প্রথমে সবকিছু চেপে যাওয়ার চেষ্টা করে। অনেকে আবার একে চীনের ‘চেরনোবিল’ হিসেবে আখ্যা দেন, অর্থাৎ চেরনোবিলে পারমাণবিক দুর্ঘটনা যেমন সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ত্বরান্বিত করেছিল, এটিও চীনের বেলায় তা-ই করবে। প্রথম দিকে কিছু ভুলচুক করার পর চীনা সরকার দ্রুতই অভূতপূর্ব লকডাউন শুরু করে। এতে কাজ হয়েছে বলেই মনে হয়। চীনে নতুন রোগী শনাক্ত হওয়ার হার একেবারেই কমে গেছে। দেশটির কলকারখানা খুলতে শুরু করেছে। গবেষকেরা টিকার পরীক্ষামূলক ব্যবহার করছেন। এর মধ্যে এই রোগ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। দেখা গেল, চীনে এই রোগের প্রকোপ শুরু হলেও মৃত্যুর সংখ্যায় ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাকে ছাড়িয়ে গেছে।
ধনী দেশগুলো আবার চীনের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দিহান। কোভিড-১৯-এর টিকা উদ্ভাবনে চীন কী ভ‚মিকা পালন করে, সেখান থেকে তার উচ্চাশার ধরন বোঝা যাবে। তারা দ্রæত টিকা উদ্ভাবন করতে পারলে সেই সফলতা জাতীয় বিজয় হিসেবে চিহ্নিত হবে। আর বৈশ্বিক সহযোগিতার প্ল্যাটফর্ম হবে সেটা।