Cinque Terre

রুহুল কবির

০৩ মে , ২০২০


সহকারী অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ

ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ


শুভ জন্মদিন ডা. মঈন স্যার

মহামারি করোনার ছোবলে প্রাণ দেওয়া বাংলাদেশের প্রথম চিকিৎসক তিনি। মানবিক অথচ যোদ্ধা ডা. মঈন উদ্দিন স্যারকে শিক্ষক হিসেবে প্রথম পেয়েছিলাম এমডি কোর্সে অধ্যায়নকালে। ভীষণ মিশুক, অমায়িক একজন মানুষ। একবার পরিচয় হলেই হলো, পরেরবার দেখা হলে কাঁধে হাত রেখে এমনভাবে কথা বলবেন, মনে হবে কতদিনের পুরনো আপনজন। 

আমার সমস্যা হলো মানুষের নাম মনে রাখতে পারি না। এখনও আমার সহকর্মীদের অনেকের নাম গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মনে করতে পারিনা বহু চেষ্টা করেও। কিন্তু স্যার এক্ষেত্রে বিস্ময়কর। শুধু সহকর্মীদের নাম-ধামই নয়, অনায়াসে মনে রাখতে পারতেন সকল ইন্টার্নদের নাম, এমনি কী বাড়িসহ চিনতেন তাদের। রাউন্ডে অনেক সময় নিয়ে গল্প করতেন। সে গল্পে রোগী ও রোগ থেকে শুরু করে দেশ, সমাজ কিছুই বাদ যেত না। 

অত্যন্ত সাদাসিধে জীবন যাপন করতেন ডা. মঈন স্যার। সাধারণ পোশাকে অসাধারণ হয়ে ধরা দিতেন। কথা বলার সময় স্বভাববশত একবার চশমা খুলতেন, একবার লাগাতেন। নিজের স্টুডেন্টদের প্রতি ছিল স্নেহের পরশ। কতটা যত্নশীল ছিলেন তা টের পেতাম শিক্ষার্থীরেদ বিভিন্ন সংগঠনের দাতব্য কর্মসূচিতে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে দেওয়া পোস্টে- সেখানে স্যারের নাম থাকতই। নানাভাবে তাদের সহায়তা করতেন। প্রতি রমজানে ট্রেইনীদের বাসায় দাওয়াত দিয়ে নিয়ে ইফতার করাতেন। আমিও দাওয়াতে শরীক হয়েছি একাধিকবার। 

বেশ মনে আছে, পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি অর্জনের পর একদিন অনেকক্ষণ ধরে স্যারে সঙ্গে আলাপ করেছিলাম। বেশ কিছু বিষয়ে কথা হয়েছিল আমাদের। নিজ জন্ম এলাকার (ছাতক) মানুষের জন্য এক অদ্ভুত টান ছিল স্যারের। তাদের কাছ থেকে কখনই ভিজিট নিতেন না চেম্বারে। সময়ের পরিক্রমায় আমি সহকারী অধ্যাপক হিসেবে প্রমোশন পাই। লাউঞ্জেরে ছোট্ট একটা রুমে স্যারসহ আমরা শেয়ার করি। কথাবার্তা হয়, একসঙ্গে টিচার্স ক্যান্টিনে যাই, নামাজ পড়ি। সহযোগী অধ্যাপকদের সম্ভাব্য তালিকা বের করে দেখাই স্যারের সিরিয়াল। হঠাৎ করে এক-দুইদিন ধরে খেয়াল করি স্যার কলেজে অনুপস্থিত। তখনও ভাবিনি এমন একটি দুঃসংবাদ অপেক্ষা করছে পুরো মেডিসিন পরিবারের জন্য। 

হয়ত এক বুক আক্ষেপ নিয়েই না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন মানবিক চিকিৎসক ডা. মঈন উদ্দিন স্যার। তাকে আর কোনদিন দেখা যাবে না প্রিয় প্রাঙ্গণ ওসমানী মেডিকেল কলেজের আঙ্গিনায়। ফেসবুক মনে করিয়ে দিল আজ মঈন স্যারের জন্মদিন। জানিনা এই মহামারির শেষ কবে? জানিনা এই অনাহুত সময়ে আর কত মানবিক মঈন উদ্দিনকে আত্মহুতি দিতে হবে? শুধু সর্বশক্তিমানের নিকট প্রার্থনা করা ছাড়া আমাদের হাতে কি আছে?

জানি এই অন্ধকারাচ্ছন্ন সময় দীর্ঘস্থায়ী হবে না। জানি আবার নতুন ভোর হবেই। শুধু প্রত্যাশা করি মহামারি পরবর্তী পৃথিবী হোক মানবিক এবং বাহুল্য বর্জিত। অর্থ বিলাসিতার অসুস্থ প্রতিযোগিতা ভুলে শত শত মঈন উদ্দিন এর মত মানবিক মানুষের জয়গান রচিত হোক সেই নতুন পৃথিবীতে।