Cinque Terre

ফাহাদ মোহাম্মদ

২৮ মে , ২০২০


প্রাবন্ধিক


আলোকিত গ্রাম

আগামীর বিশ্বে যারা খাদ্য উৎপাদন করতে পারবে তারাই টিকে থাকতে পারবে। গ্রামের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুন্দর একটি পৃথিবী উপহার দেওয়ার জন্য আমার এই প্রস্তাবনা। 

প্রকল্পের নাম : আলোকিত গ্রাম

এক সময় দেশের প্রায় প্রতিটি গ্রামের নাগরিকেরা সম্পূর্ণ কৃষি নির্ভর থাকলেও বর্তমানে গ্রামের অধিকাংশ নাগরিকরা বিভিন্ন পেশায় জীবিকা নির্বাহ করছেন। কেউ শহরে গার্মেন্টসে কাজ করছেন, কেউ ক্ষুদ্র পরিসরে ব্যবসা করছেন। আবার অনেকেই পাড়ি দিয়েছেন প্রবাসে। তার পরেও আমাদের গ্রামগুলোর তরুণদের মধ্যে অনেকেই বেকার জীবনযাপন করছেন যাদের একমাত্র কাজ ফেসবুক ব্যবহার করা। ২০৩০ সালের মধ্যে এই বেকার তরুণদের কাজে লাগিয়ে একটি উন্নত গ্রামীন অর্থনৈতিক বলয় বাস্তবায়নের জন্য আমাদের কিছু কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে হবে। আর সেই কর্মপন্থা গুলো বাস্তবায় করতে পারলে গ্রাম যেমন উন্নত হবে তেমনি বৃদ্ধি পাবে দেশের অর্থনৈতিক গতি।

১. সমবায় সমিতি : জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোনার বাংলা গড়তে সে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কথা বলেছিলেন তার একটি হল সমবায়ভিত্তিক কৃষি ব্যবস্থা। সমবায় সমিতির মাধ্যমে কৃষি প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের একটা বিশাল কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে দেশিও চাহিদা মিটিয়ে কৃষি পণ্য রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন সম্ভব। তার জন্য প্রয়োজন সরকারের স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর আন্তরিকতা।

গ্রামের প্রতিটি নাগরিকদের (যতবেশি সম্ভব) সমন্বয়ে একটি সমবায় সমিতি গঠন করতে হবে। সমিতির সদস্যদের কাছ থেকে প্রতি মাসে আমানত সংগ্রহ করা হবে। সমিতি পরিচালনার জন্য তিনজন লোক থাকবেন। একজন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা একজন কম্পিউটার অপারেটর আরেকজন আমানত সংগ্রহকারী (দুইজন দিয়েও কাজ চালানো যাবে)। সবাই গ্রামের নাগরিক হবেন। সমবায় সমিতি প্রথম এক বছর সদস্যদের নিকট থেকে আমানত সংগ্রহ করবে এবং একটা প্রজেক্ট হাতে নিবে (সেটা হতে পারে গরুর খামার, হাসের খামার কিংবা মোরগের খামার)। সমবায় সমিতি থেকে প্রথম পাঁচ বছর লভ্যাংশ উত্তোলন করা যাবে না। লভ্যাংশ দিয়ে নতুন নতুন প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হবে।

২. জনবল : এই প্রজেক্টের মূল উদ্দেশ্য গ্রামের বেকার জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগানো। প্রজেক্ট বাস্তবায়নের জন্য গ্রাম থেকে দক্ষ লোকদের নিয়োগ দেওয়া হবে। নির্বাচন করা লোকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলা হবে। যাতে তারা সঠিকভাবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে খামার পরিচালনা করতে পারে। তাদেরকে ছয়টি ভাগে ভাগ করা হবে, ক) কৃষি জমি চাষবাদ ও কৃষি পণ্য বাজার জাত গ্রæপ খ) হাসের খামার গ্রæপ গ) গরুর খামার গ্রæপ ঘ) মোরগের খামার গ্রæপ ঙ) মাছ চাষ গ্রæপ চ) শিক্ষা খাত গ্রæপ। প্রত্যেক গ্রæপ যার যার নির্ধারিত কাজ করবে। কর্ম ঘন্টা নির্ধারণ করা থাকবে। প্রতিটি টিমে একজন সুপারভাইজার থাকবেন। সুপারভাইজার সরাসরি সমবায় সমিতির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে রিপোর্ট করবেন। প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রতি মাসে সমিতির আয় ব্যয় অফিসে টাঙ্গিয়ে রাখবেন। সরকারি প্রতিষ্ঠান সেটা প্রতি তিন মাসে অডিট করবে।

৩. জমি চাষাবাদ : আমাদের দেশের অনেক গ্রামের আমন জমি শুধু একবার চাষ করা হয়। সেটা তিন ফসলি করা সম্ভব। যাদের জমি আছে তারা শুধু আমন ধান চাষ করেন। বাকি সময় যেহেতু পতিত থাকে সেই সময়ের জন্য তাদের জমি লিজ নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। গ্রামের পাশ দিয়ে যদি চলমান নদী থাকে তাহলে সেচ ব্যবস্থা অনেক সুবিধা হবে না হলে গভীর নলক‚প স্থাপন করে সেচের ব্যবস্থা করা যাবে। ধানের পাশাপাশি অন্যান্য অর্থকরী ফসল উৎপাদন করা যাবে।

৪. খামার : খামারের জন্য সড়কের পাশের পতিত জমি (যদি থাকে), খাস জমি, অথবা মালিকানা জমি লিজ নিতে হবে। জমির মালিকের সঙ্গে কমপক্ষে ১০ বছরের চুক্তি হবে। গরুর ঘাস চাষের জন্য জমি লিজ নিতে হবে।

বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অনেক বড়বড় কোম্পানির সৃষ্টি হয়েছে সমবায় সমিতির মাধ্যমে। যদিও প্রতিটি গ্রামেই বিভিন্ন প্রকার সমস্যা থাকে। সেই বিরাজমান সমস্যার সমাধান করে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন অনেকটা কঠিন হবে। কিন্তু উদ্যোক্তা থাকলে বাস্তবায়ন সম্ভব। এতে প্রতি গ্রামের কমপক্ষে ২০/৩০ জন মানুষের কর্মসংস্থান হবে। দেশের গ্রামগুলো হবে একটি মডেল গ্রাম। এটা নিয়ে কাজ করলে অনেক নতুন নতুন আইডিয়া আসবে। আমার আইডিয়া সঠিক নাও হতে পারে। যত বেশি শিক্ষিত আর যোগ্য লোকেরা এসব নিয়ে চিন্তা করবেন তত বেশি সুন্দর সুন্দর আইডিয়া আসবে।

নোট : সমবায় সমিতি তার সদস্যদের পাশাপাশি মোট ইনভেস্টমেন্টের একটা নির্দিষ্ট অংশ শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে আমানত সংগ্রহ করতে পারবে। যেমন, একটা গরুর খামার জন্য যদি ৫০ লক্ষ টাকার প্রয়োজন। সমিতির কাছে আছে ৩০ লক্ষ টাকা। বাকি টাকা গ্রামের বিত্তশালীরা ইনভেস্ট করতে পারবেন। ইনভেস্টের আনুপাতিক হারে সবাই লভ্যাংশ পাবেন। প্রয়োজনে ব্যাংক থেকে লোন উত্তলন করা যাবে।