Cinque Terre

মোহাম্মদ জুনায়েদ খোরাসানী

০৫ জুন , ২০২০


শিক্ষক ও সাধারণ সম্পাদক

বাংলাদেশ স্কাউট

সিলেট সদর উপজেলা


শাওয়াল মাসের নফল রোজার ফজিলত

শাওয়াল মাস বরকতময় মাস। এই মাস অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ মাস। রমজান মাসের রোজার পর শাওয়াল মাসের ছয়টি নফল রোজা খুবই গুরুত্ব বহন করে। তাই মুসলিম ভাইবোনদের উদ্দেশ্য আজকের এ লেখা। বহু হাদীসে এই ছয়টি নফল রোজার ফজিলত সম্পর্কে সুস্পষ্ট বর্ণনা করা হয়েছে।

হাদীস শরীফে আছে, মহানবী হযরত মুহম্মদ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি শাওয়াল মাসে গোনাহের সংস্পর্শ হতে নিজেকে মুক্ত রাখতে সক্ষম হয়, করুণাময় আল্লাহ পাক তার জন্য সুরম্য জান্নাত নির্ধারিত করে রাখেন।

রমজান মাসে শয়তানকে আল্লাহ পাক বন্দি করে রাখেন। যার জন্য আমরা আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকতে পারি। শয়তান আমাদেরকে ধোঁকা দিতে পারে না। আমাদের দেহের রিপুগুলো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠতে পারে না। সবাই কম বেশি আল্লাহর ইবাদত বন্দেগীতে কাটিয়ে দেন সারা মাস। রমজান মাস শেষ হওয়ার পর পরই শয়তান ছাড়া পায় তখনই শয়তান প্রতিশোধ গ্রহণে বদ্ধপরিকর হয়ে ওঠে। শয়তান ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে থাকে। দেহের রিপুগুলোকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করে। ফজরের নামাজ কাযা করার চেষ্টা করে। অথচ দেখেন দু’দিন আগে ও আপনি ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমিয়েছেন। আসুন শয়তানের ষড়যন্ত্রের জাল ছিঁড়ে ফেলি।

আমরা সবাই সতর্কতা অবলম্বন করি যাতে শয়তান আমাদেরকে ধোঁকা দিতে না পারে। আল্লাহ পাক আমাদের সহায় । ইনশাআল্লাহ আমরা জয়ী হব।

শাওয়াল মাসের ফজিলত সম্পর্কে বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) হতে বর্ণিত আছে, হযরত মুহম্মদ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা নিবিষ্ট চিত্তে পালন করবে, করুনাময় আল্লাহ তায়ালা তাঁকে আজাবের শৃঙ্খল ও কঠোরতম জিঞ্জিরের অবেষ্টনী হতে মুক্ত রাখেন। অর্থাৎ আজাব ও গজব তাকে স্পর্শ করতে পারবে না। সে নির্দ্বিধায় আল্লাহর খোশামুদী হাসিলে সক্ষম হবে।

অপর এক হাদীসে আছে, হযরত রাসূলে করীস (সা.) ইরশাদ করেছেন, শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা যে পালন করল, সে যেন সমস্ত বছর রোজা রাখল এবং তার আমলনামায় এক একটি রোজার পরিবর্তে এক হাজার নফল রোজার পূণ্য লেখা হয়। অর্থাৎ সে ছয় হাজার নফল রোজার সওয়াব হাসিল করতে সক্ষম হয়।

রাসলূলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, যে লোক শাওয়াল মাসের ছয়টি নফল রোজা পালন করে তার আমলনামায় সমস্ত উম্মতে মুহাম্মদীর সমসংখ্যক পূণ্য লেখা হয়এবং সে পবিত্র জান্নাতি হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) এর সাথে অবস্থান করবে। সুবহানাল্লাহ।

অন্য এক হাদীসে আছে যে, শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা পালনকারীকে আল্লাহপাক সম্বোধন করে বলেন, হে আমার বান্দা ! তোমরা আমার রেজামন্দির আশায় রমজান মাসের রোজা পালন করেছ এবং শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজাও আদায় করেছ, সুতরাং তোমাদেরকে মাফ করে দেওয়া আমার ওপর আবশ্যক হয়ে পড়েছে। সুবহানাআল্লাহ।

অন্য এক হাদীসে রাসূলে করীম (সা.) ইরশাদ করেছেন, যারা শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখে, তাদেরকে দয়ালু আল্লাহ তায়ালা ফাহেশা কথাবার্তা ও কাম-রিপুর তাড়না হতে পবিত্র রাখেন এবং দোজখের আগুন তাদের ওপর হারাম হয়ে যায়।

অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, জনৈক বুজর্গ বলেন, শাওয়াল মাস নিস্তার লাভের মাস। এই মাসে নিজেকে পাপমুক্ত রেখে আল্লাহর বান্দাগণ আল্লাহর আজাব ও গজবের অবেষ্টনী হতে নিজেদেরকে বিমুক্ত রাখতে সক্ষম হয়।

আল্লাহর রাসূল (সা.) এর আরও হাদীস আছে শাওয়াল মাসের রোজা নিয়ে এখানে কয়েকটি হাদীস মাত্র উল্লেখ করলাম। এখন জানা যাক কীভাবে রোজা রাখবো । একসাথে ছয়টি রোজা না রেখে দু’একদিন ফাঁক রেখে রোজা রাখা ভাল।  কেননা পথভ্রষ্ট খ্রিষ্টানরা শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা একটানা উপবাসের মাধ্যমে আদায় করে থাকে। তাদের এই উপবাস নিছক অনুষ্ঠান মাত্র। কিন্তু মুসলমানের রোজা অনুষ্ঠানের খাতিরে নয়। বরং আল্লাহকে রাজিখুশী ও রেজামন্দি লাভের জন্য পালিত হয়।

আসুন আমরা শাওয়াল মাসের ফজিলতপূর্ণ ছয়টি রোজা নিজে রাখি এরং অন্যকে রাখতে উৎসাহিত করি। এবং বেশি বেশি করে তওবা করি। আল্লাহ পাক তওবাকারীদের পছন্দ করেন। আর দোয়া করি, আল্লাহ পাক যেন আমাদেরকে এই করোনাভাইরাস মহামারী থেকে রক্ষা করেন। পৃথিবীটাকে স্বাভাবিক করে দেন। হে আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন। হে আমাদের মালিক, এই পৃথিবীর গোলামদেরকে ক্ষমা করে দিন। করোনাভাইরাসমুক্ত করে দিন এই পৃথিবীকে। তোমার হাবীবের (দ.) উসিল্লায় আমাদেরকে নাজাত দিন। আমাদের সবাইকে শাওয়াল মাসের ছয়টি রোজা রাখার তৌফিক দিন। আমিন।