Cinque Terre

মো. আজিজুর রহমান রোমান

২৭ জুন , ২০২০


চিকিৎসক

হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ,

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ

সদস্য সচিব,

করোনা প্রতিরোধ এবং সহায়তা কেন্দ্র, বি.এম.এ

সিলেট 


চিকিৎসক আপনার বন্ধু

বাংলাদেশ সংবিধানে মৌলিক অধিকার (ঋঁহফধসবহঃধষ ৎরমযঃং) ও মৌলিক চাহিদার (ইধংরপ হবপবংংরঃরবং) কথা বলা হয়েছে। মৌলিক অধিকার হলো যা কোনো কারণে খর্ব হলে আপনি আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবেন এবং মহামান্য আদালত আপনার অধিকার সংরক্ষণ করবেন। যেমন-আপনার ধর্মীয় স্বাধীনতা। মৌলিক চাহিদা হলো-সেইসব চাহিদা যেগুলো পূরণের জন্য রাষ্ট্র অবকাঠামো ও পরিবেশ  তৈরি করে দেবেন এবং আপনি সরকারি ভাবে না পেলে নিজ খরচে চাহিদা মেটাবেন। চাহিদা পূরণ না হলে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবেন না। পাঁচটি মৌলিক চাহিদার কথা বলা হয়েছে যেমন-অন্ন , বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা।

আপনি যদি অন্ন না পেয়ে উপোস থাকেন তাহলে আপনি যেকোন খাবার দোকানে বিনামূল্যে খাবার চাইতে পারবেন না বা ওই দোকানে আক্রমন চালাতে পারবেন না। তেমনি আপনি বস্ত্র না পেয়ে কাপড়ের দোকানে, বাসস্থান না পেয়ে বাড়ির মালিকদের কাছে, শিক্ষা না পেয়ে স্কুল বা কলেজে  গিয়ে দাবি করতে পারবেন না কিংবা আক্রমন চালাতে পারবেন না। আপনি এগুলো জানেন তাই এই চাহিদাগুলো পূরণ না হলে আপনি দাবিও করেননা বা আক্রমনও করেন না। বরং এই মহামারীতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মূল্যে কিনছেন তাতেও আপনার আপত্তি নাই।

এখন বাকি থাকলো চিকিৎসা। এখানে জনগন, মিডিয়া মৌলিক অধিকার ও মৌলিক চাহিদার পার্থক্য করতে পারেন না বোঝে বা না বোঝে। অন্য চারটি মৌলিক চাহিদার মত এই চাহিদা পূরণের জন্য যে অর্থ ব্যয় করতে হবে তা মানতে নারাজ। অন্যগুলোতে যেরকম বিনিয়োগ আছে বলে আপনি বিনামূল্যে দাবি করেন না তেমনি চিকিৎসা খাতেও অনেক বিনিয়োগ আছে। কেউ যদি বিনামূল্যে চিকিৎসা না দেন তাহলে আপনি দাবি করতে পারেন না বা আক্রমন চালাতে পারেন না। যারা বিনামূল্যে চিকিৎসা দেন সেটা তাদের মানবিক আচরণ আপনার অধিকার নয়। এই সত্যটি আমাদের সবাইকে মানতে হবে। চিকিৎসকরা হচ্ছেন স্বাস্থ্য ব্যবস্থার গড়ে উঠা বিশাল সিন্ডিকেটের প্রান্তিক গোষ্ঠী। একজন প্রান্তিক কৃষক যেমন কঠোর পরিশ্রম করে পণ্য উৎপাদন করেন কিন্তু সেই পণ্যের সিংহভাগ মুনাফা ভোগ করে মধ্যসত্ত্বভোগীরা। তেমনি চিকিৎসকরা তাদের মেধা ও  জ্ঞান দিয়ে, কঠোর পরিশ্রম করে সকল দায়দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে রোগীদের সেবা প্রদান করেন। কিন্তু স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রায় ৯৫ ভাগ সুবিধা ভোগ করে ওষুধ কোম্পানিসহ বিভিন্ন কোম্পানি, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান, ডায়াগনষ্টিক সেন্টার এবং অনান্য মধ্যসত্ত্বভোগীরা। সবাই ইচ্ছেমত মুনাফা করছেন এবং সুকৌশলে সকল দায় চিকিৎসকদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন। জনসাধারণ এই কৌশল সরলভাবে বিশ্বাস করেন এবং চিকিৎসকদেরকে দোষারোপ করেন। তাই চিকিৎসকদের উচিত নিজ দায়িত্বটুকু ছাড়া বাকিগুলোর দায়িত্ব সংশ্লিষ্টদের কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া।

মনে রাখবেন ‘আপনার চিকিৎসক, আপনার বন্ধু’।