মীর মোশারফ হোসেন
০৮ জুলাই , ২০২০
প্রভাষক
ইংরেজি বিভাগ
জামালগঞ্জ সরকারি কলেজ
গত মার্চ মাসের শেষার্ধ থেকেই করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশের নিয়মিত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ আছে। এই ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিতব্য এইচএসসি পরীক্ষা এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের বিভিন্ন শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পনের দিনের মধ্যে পরীক্ষা নেওয়া হবে।
বিশেষ করে এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং শিক্ষকগণ বেশ উৎকন্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। দিনে দিনে পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে। পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার তেমন কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। স্বাস্থ্যগত নিরাপদ অবস্থা ফিরে না আসা পর্যন্ত পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে না বলেই সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞগণ মনে করছেন। ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা আরও বাড়ছে। একই সঙ্গে পড়াশোনার মন-মানসিকতাও পরিবর্তন হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে পড়ালেখা যে গতিতে চলছিল সে গতিতেও বেশ ভাটা পড়ছে। যদিও সকলেই শিক্ষার্থীদের মনোবল চাঙ্গা রাখার জন্য উপদেশ দিয়ে চলছেন। তারপরও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখতে না পাওয়ায় সকল মহলেই এক ধরণের হতাশা বিরাজ করছে। নীতি-নির্ধারকগণ প্রতিনিয়তই চিন্তা-ভাবনা করছেন কীভাবে এই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যায়। অনেকেই ধারণা করেছিলেন আগস্টের মধ্যেই হয়তোবা পরীক্ষা নেওযা যাবে। কিন্তু এটাও এখন অনিশ্চিত। নতুন করে বলা হচ্ছে, সিলেবাস ঠিক রেখে পরীক্ষার সংখ্যা কমিয়ে, সময় কমিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে। এতে আসলে প্রকৃত পরীক্ষার দাবি কতটা পূরণ হবেÑএ নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।
এরই মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও অনলাইনে অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া প্রায় সকল বিভাগের দাপ্তরিক কার্যক্রম চলছে। বর্তমানে নির্ধারিত কিছু অঞ্চলে লকডাউন চলছে। এই লকডাউনও এখন পরীক্ষামূলক পর্যায়ে আছে। লকডাউনের সুফল এখনো পাওয়া যায়নি। যদি লকডাউনে কাজ না হয় তবে বিকল্প ব্যবস্থার কথাও চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানা যায়। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির সঙ্গে যোগ হয়েছে বন্যা পরিস্থিতি। অবশ্য বন্যা এই দেশের জন্য নতুন নয়। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলার অভিজ্ঞতা আমাদের আছে।
বিশেষ কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকলে শুধুমাত্র করোনা পরিস্থিতিতে এইচএসসি পরীক্ষা আটকে না রেখে শিল্পকারখানাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কার্যক্রম চালাচ্ছে সেইভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাবলিক পরীক্ষাগুলো নেওয়ার চিন্তা করা যায় কিনা। এখনতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রেণি কার্যক্রম চালানো সম্ভব নয় বলে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত শ্রেণি কার্যক্রম চালানো সম্ভব না। প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষার জন্য ভেন্যু নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে রেখে পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভেন্যুর সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতি বেঞ্চে দুই জন করে এবং এক বেঞ্চ পরপর শিক্ষার্থীদের বসিয়ে পরীক্ষা নেওয়া যায় কি না। নিরাপদ দূরত্বে বসালে পরীক্ষার পরিবেশটাও ভালো থাকবে। আর যাতায়াতের জন্য পরীক্ষার দিন শুধুমাত্র শিক্ষার্থী এবং সংশ্লিষ্টদের ব্যবহারের জন্য গণপরিবহন নির্ধারিত করে দিয়ে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া যায় কিনা। অনেকটা নির্বাচনী কার্যক্রমের কায়দায়। আর কক্ষ পর্যবেক্ষক পেতেও কোনো সমস্যা হবে না যেহেতু সকল শিক্ষকই এখন অবসরে আছেন। প্রবেশ এবং বাহিরের সময় সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য প্রবেশপথে যথেষ্ট ব্যবস্থা রাখলেই হবে। তাছাড়া এতদিনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার চর্চা আমাদের যথেষ্ট হয়েছে। তাছাড়া এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা সকলেই বড়। এছাড়া সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণতো সকলেই সুশীল। বর্তমানে বলা হচ্ছে মাস্ক পরা আর নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে পারলেই করোনা সংক্রমিত হওয়ার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। আমাদের এতদিনের অভিজ্ঞতার আলোকে আমরা যদি শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মোতাবেক নির্ধারিত দূরত্বে বসার ব্যবস্থা করতে পারি তবে এইচএসসি পরীক্ষা নিতে আর কোনো বাঁধা থাকে না। শিল্পকারখানা যদি চালানো যায় তবে এইচএসসি পরীক্ষা নিতে তেমন কোনো সমস্যা হবে না। আমরা যদি এইচএসসি পরীক্ষার ক্ষেত্রে সফল হতে পারি তবে অন্যান্য পরীক্ষাও নিতে পারব।
এইচএসসি পরীক্ষার ওপর আরও অনেক কিছু নির্ভর করছে। এই এইচএসসি পরীক্ষার জট ছাড়াতে পারলে অন্য আরও অনেক সমস্যার জট খুলে যাবে। আশাকরি কর্তৃপক্ষ প্রস্তাবনাটি বিবেচনা করবেন।