Cinque Terre

মো. জেদান আল মুসা

২৫ জুলাই , ২০২০


পুলিশ সুপার

রেঞ্জ ডিআইজি-এর কার্যালয়

সিলেট


‘পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট’ : সহজে পাওয়ার উপায়

বিদেশ গমনের ক্ষেত্রে সাধারণত ‘পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সর্টিফিকেট’ প্রয়োজন হয়। বিদেশে উচ্চশিক্ষা, বিদেশে চাকরি, বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাস ‘পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সর্টিফিকেট’ চেয়ে থাকে। এই সার্টিফিকেটে সার্টিফিকেট প্রাপ্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোন ফৌজদারী অপরাধ (ক্রিমিনাল অফেন্স) রেকর্ড নেই এই মর্মে প্রত্যয়ন করা হয়। সার্টিফিকেটটি আবেদন দাখিল করার পর ঢাকার মধ্যে সাধারণত ০৭ (সাত) কর্মদিবস এবং ঢাকার বাইরে ১০ (দশ) কর্মদিবস এর মধ্যে পাওয়া যাবে।

বাংলাদেশ পুলিশ ইতোমধ্যে পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের সার্টিফিকেট পেতে অনলাইন সেবা চালু করেছে এবং সকল জেলা পুলিশ ও মেট্রোপলিটন পুলিশে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু অনলাইনে সঠিক নিয়ম না জানলে অনেক ক্ষেত্রে আবেদনকারীর আবেদন বাতিল হতে পারে। এছাড়াও পুলিশ ক্লিয়ারেন্স পেতে প্রার্থী কোন প্রকার হয়রানির শিকার হলে মেট্রোপলিটন এলাকায় সংশ্লিষ্ট মেট্রোপলিটন-এর উপ-পুলিশ কমিশনার (সদরদপ্তর ও প্রশাসন)/ উপ-পুলিশ কমিশনার (নগর বিশেষ শাখা) বরাবর এবং জেলার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ দাখিল করতে পারেন।

আপনি অনলাইনে পুলিশ সার্টিফিকেট হাতে পেয়েছেন অথচ সংশ্লিষ্ট অফিসে গিয়ে অনলাইনে খুঁজে পাওয়া না গেলে মনে হবে এটি ভুয়া সার্টিফিকেট! না এটি কোন ভুয়া সার্টিফিকেট নয়। অনেক ক্ষেত্রে অনলাইন সিস্টেমে কাজের আপডেট না হওয়ার কারণে এরকম হয়ে থাকে। আপনাকে যে পুলিশ অফিস থেকে সার্টিফিকেটটি দেওয়া হয়েছে সেই অফিসের কম্পিউটার থেকে আপনার সার্টিফিকেটজনিত কাজের শেষ আপডেট পরিবর্তন করে দিলেই আপনি তখন অনলাইনে দেখতে পাবেন এবং আপনার পিসিসি আইডিতেও দেখতে পাবেন।

পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় শর্তাবলী :

পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পেতে হলে কিছু নিয়ম মেনে আবেদন করতে হবে। সেগুলো হলো-

১. আবেদনকারীর পাসপোর্টে উল্লেখিত স্থায়ী কিংবা বর্তমান ঠিকানার যে কোন একটি অবশ্যই সংশ্লিষ্ট মেট্রোপলিটন/জেলা পুলিশের আওতাধীন এলাকায় অবস্থিত হতে হবে এবং আবেদনকারীকে যার জন্য পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট চাওয়া হয়েছে তাকে অবশ্যই ওই ঠিকানার বাসিন্দা হতে হবে ।

২। মেশিন রিডেবল পাসপোর্টে’র (এম আর পি) এর ক্ষেত্রে যদি পাসপোর্টে ঠিকানা উল্লেখ না থাকে তবে ঠিকানার প্রমাণস্বরূপ জাতীয় পরিচয় পত্র/জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র/স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর এর সনদপত্রের ফটোকপি ১ম শ্রেণির সরকারি গেজেটেড কর্মকর্তা দ্বারা সত্যায়িত করে দাখিল করতে হবে। পাসপোর্টের মেয়াদ অন্তত ০৩ (তিন) মাস থাকতে হবে।

৩। বিদেশে অবস্থানকারী বাংলাদেশী পাসপোর্টধারী কোন ব্যক্তির পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পাওয়ার জন্য তিনি যে দেশে অবস্থান করছেন সে দেশে বাংলাদেশ দূতাবাস/হাইকমিশন কর্তৃক পাসপোর্টের তথ্য পাতার সত্যায়িত কপি তার পক্ষে করা আবেদনের সঙ্গে দাখিল করতে হবে।

৪. বিদেশগামী কিংবা প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিক এবং বাংলাদেশে বসবাস করে স্বদেশে/বিদেশে প্রত্যাবর্তনকারী বিদেশী নাগরিকদের জন্য প্রয়োজনীয় পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এই অনলাইন সিস্টেমের মাধ্যমে ইস্যু করা হয়।

৫. বাংলাদেশের অভ্যন্তরে চাকরি কিংবা অন্য কোন কাজে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট জেলা কিংবা সিটি এসবি (নগর বিশেষ শাখা) শাখায় যোগাযোগ করুন।

টিপস : আপনার আবেদনের সর্বশেষ অবস্থা জানতে চঈঈঝ-এর পর আপনার আবেদনের রেফারেন্স নম্বর লিখে যেকোন মোবাইল থেকে খুদে বার্তা পাঠান ২৬৯৬৯ নম্বরে। ফিরতি এসএমএস এ আপনার আবেদনের সর্বশেষ স্ট্যাটাস পেয়ে যাবেন।

পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট এর জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস :

১. অনলাইনে যথাযথভাবে পূরণকৃত আবেদন পত্র ।

২. ১ম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তা দ্বারা সত্যায়িত পাসপোর্টের তথ্য পাতার স্ক্যানকপি। অথবা বিদেশে অবস্থানকারী বাংলাদেশী নাগরিকগনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশে বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃক সত্যায়িত পাসপোর্টের তথ্য পাতার স্ক্যানকপি অথবা বিদেশী নাগরিকদের ক্ষেত্রে নিজ দেশের জাস্টিস অব পিস (ঔঁংঃরপব ড়ভ চবধপব) কর্তৃক সত্যায়িত পাসপোর্টের তথ্য পাতার স্ক্যানকপি।

৩। বাংলাদেশ ব্যাংক/ সোনালী ব্যাংকের যে কোন শাখা থেকে (১-৭৩০১-০০০১-২৬৮১) কোডে করা ৫০০/- (পাঁচশত) টাকা মূল্যমানের ট্রেজারী চালান অথবা অনলাইনে ক্রেডিট/ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নির্ধারিত সার্ভিসচার্জ সহ ফি প্রদান।

আবেদনের নিয়মাবলী :

১. অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট ওয়েবসাইটে নিবন্ধন করে যে কেউ নিজের জন্য অথবা অন্যের পক্ষে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট এর জন্য আবেদন করতে পারবে।

২. নিবন্ধিত ব্যবহারকারী অনলাইন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট সাইটে লগ-ইন করার পর অঢ়ঢ়ষু মেনুতে ক্লিক করে আবেদনপত্রটি যথাযথভাবে পূরণ করুন।।

৩. আবেদন ফরমের প্রথম ধাপে ব্যক্তিগত বিস্তারিত তথ্য, দ্বিতীয় ধাপে বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানা পূরণ করুন। আপনার বর্তমান ঠিকানা যে জেলা বা মেট্রোপলিটন এলাকায় অবস্থিত সেই ঠিকানায় পুলিশ ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হবে।

৪. আবেদন ফরমের তৃতীয় ধাপে প্রয়োজনীয় ডকুমেণ্টসমূহের স্ক্যান কপি আপলোড করুন।

৫. আবেদন ফরমের চতুর্থ ধাপে আপনার এন্ট্রিকৃত সকল তথ্য দেখানো হবে। আবেদনে কোন ভুল থাকলে তা পূর্ববর্তী ধাপসমূহে ফেরত গিয়ে পরিবর্তন করা যাবে। তবে চতুর্থ ধাপে আবেদনটি সাবমিট করার পর আর কোন পরিবর্তন করার সুযোগ থাকবে না।

৬. চালানের মাধ্যেমে ফি পরিশোধের উপায় এবং পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে প্রদত্ত নির্দেশনা অনুসরণ করুন (যঃঃঢ়://ঢ়পপ.ঢ়ড়ষরপব.মড়া.নফ)।

অনলাইন পুলশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের ক্ষেত্রে একটি কিউআর কোড প্রিন্ট করা থাকে। যে কোনও স্মার্ট ফোন থেকে কিউআর কোড আ্যপ্লিকেশন ব্যবহার করে কোডটি স্ক্যান করলে ইস্যুকৃত সার্টিফিকেটের একটি অনলাইন লিংক পাওয়া যাবে। যেকোনও ইন্টারনেট ব্র্রাউজার ব্যবহার করে লিংটি ভিজিট করলে ইস্যু করা সার্টিফিকেটের একটি অবিকল ডিজিটাল কপি কম্পিউটারে দেখা যাবে। ফলে এখার থেকে ইস্যুকৃত পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট জাল হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না এবং যে কোন বিদেশি মিশন অনলাইনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট যাচাই করতে পারবে।

যে সকল কারণে আবেদন বাতিল হতে পারে :

বিভিন্ন কারণে আবেদন বাতিল হতে পারে। তন্মধ্যে অন্যতম হলো পাসপোর্টের ঠিকানার সঙ্গে আবেদনের ঠিকানার মিল না থাকা। দ্বিতীয় প্রধান কারণ হলো আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যথাযত ভাবে সত্যায়িত না হওয়া। এ ছাড়াও নি¤œলিখিত কারণে আপনার আবেদনটি বাতিল হতে পারে-

১. তথ্যগত ভুল।

২. আপলোডকৃত কাগজপত্র স্পষ্টভাবে দেখা না গেলে।

৩. অন্যের চালানতথ্য নিজের আবেদনে আপলোড করলে।

৪. অন্যের চালানকপি নিজের আবেদনে আপলোড করলে।

৫. আবেদনকারী বিদেশে অবস্থান করলে সংশ্লিষ্ট দেশের বাংলাদেশ হাইকমিশন কর্তৃক পাসপোর্টের তথ্য পাতার কপি সত্যায়িত না থাকলে।

৬. বাংলাদেশী নাগরিক তবে বিদেশী পাসপোর্ট হলে এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল না করলে।

উল্লেখিত পদ্ধতি সমূহ অনুসরন করলে খুব সহজেই পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পেয়ে যাবেন। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট সংক্রান্ত যেকোন তথ্য/ সহায়তার জন্য চ্যাটবটের সহায়তা নিন।

মনে রাখবেন পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সনদ কোনো দালাল বা প্রতারকের মাধ্যমে দেওয়া হয় না। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স প্রাপ্তির ক্ষেত্রে দালাল বা প্রতারকচক্র হতে সর্বদা সাবধান থাকুন।