Cinque Terre

সৈয়দ ইরমানুল হক

০৩ অক্টোবর , ২০২০


যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী


সৈয়দ মহসীন আলী : উদারমনা এক জননেতা

সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মহসীন আলী’র পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী ছিল ১৪ সেপ্টেম্বর। নিজের শ্রম, মেধা, উদারতা, মানবিকতা, রাজনৈতিক বিচক্ষণতা, সুদৃঢ় চিন্তাশক্তি, তুখোড় দেশ প্রেমের জন্য তিনি মৌলভীবাজারের মাটি ও মানুষের আত্মার মাঝে মিশে আছেন এবং চিরকাল থাকবেন।

জীবদ্দশায় পুরোটা সময় তিনি অতিবাহিত করেছেন সাধারণ মানুষের সাথে মিলেমিশে। নিজের অর্থ-সম্পদ মানুষের মাঝে বিলিয়ে দিতে পছন্দ করতেন তিনি। মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবনপণ সংগ্রামেই দেশের স্বাধীনতার রক্তিম আলোকবর্তিকা হাতে নিয়ে ঘুরে বেরিয়েছেন দিগ্বিদিক। স্পষ্ট ও বস্তুনিষ্ঠ বক্তব্যের কারণে তিনি ছিলেন সমালোচিত এক বীর পুরুষ।

১৯৪৮ সালের ১২ ডিসেম্বর সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর পূর্ব পুরুষ ছিলেন ৩৬০ আউলিয়ার অন্যতম ওলী শের সওয়ার চাবুকমার হজরত সৈয়দ শাহ মোস্তফা বোগদাদী (র.)। ছাত্রলীগের একজন সদস্য হিসেবে সৈয়দ মহসীন আলী ছাত্রজীবনেই আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মহসিন আলী ১৯৭১ ইং এ ২৩ বছর বয়সে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত মহকুমা/জেলা রেডক্রিসেন্ট এর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান হিসেবেও নিয়োজিত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি মৌলভীবাজার Chamber of commerce এর সভাপতি এবং জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সাধারণ সম্পাদক এর দায়িত্বও পালন করেন।

মৌলভীবাজার লায়ন্স ক্লাব, বি,এন,এস,বি, চক্ষু হাসপাতাল, মৌলভীবাজার ডায়বেটিক সমিতি/হাসপাতাল, মৌলভীবাজার সরকারী মহিলা কলেজ, দি ফ্লাওয়ার্স কেজি, এন্ড হাই স্কুল, সিলেট বিভাগ প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই-সংগ্রাম সহ নানাবিধ সমাজ কল্যাণ মূলক প্রতিষ্ঠানের Founding কমিটির অতি গুরুত্বপূর্ণ একজন সদস্য ছিলেন মরহুম জনাব সৈয়দ মহসীন আলী। আমি মনে করি এরই ফলস্বরূপ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুঝেই তাকে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রীর গুরুদায়িত্ব দিয়ে ছিলেন।

সৈয়দ মহসিন আলী আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৯৮৪ সাল থেকে পরপর তিনবার মৌলভীবাজার পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন। জেলা যুবলীগের সভাপতিও ছিলেন। তিনি চেয়ারম্যান থাকাকালে স্থানীয় সরকারের আওতায় বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নেন। তিনি থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনে পরিবার পরিকল্পনা এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৯২ সালে এ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ পৌরসভা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং ১৯৯৮ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাবেক অর্থমন্ত্রী মরহুম এম. সাইফুর রহমানের মতো গুণীজনকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে তিনি আওয়ামী লীগের জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মৌলভীবাজার-৩ আসন হতে পুনরায় জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। সে বছরের ১২ জানুয়ারি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

২০১৭ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করেন। ২০১৫ সালে সৈয়দ মহসীন আলী ভারতের আচার্য দীনেশ চন্দ্র সেন রিসার্চ সোসাইটির কাছ থেকে ‘আচার্য দীনেশ চন্দ্র সেন স্মৃতি স্বর্ণপদক-২০১৪’ লাভ করেন। ‘হ্যালো কলকাতা’ নামে কলকাতাভিত্তিক একটি সমাজকল্যাণ প্রতিষ্ঠান তাকে ‘নেহেরু সাম্য সম্মাননা-২০১৪’ পুরস্কারে ভূষিত করে।

সৈয়দ মহসিন আলী ছিলেন এক বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী। এই নেতা দেশ ও দেশের মানুষকে অনেক দিয়েছেন, কিন্তু নেননি কিছুই, সে কারণে অনেকেই তাকে ‘হাজি মুহাম্মদ মহসীন’ এর সাথে তুলনা করেন। ‘মহসীন’ নামের অর্থ সাহায্যকারী।

আমৃত্যু তিনি গণমানুষকে সেবা-সহায়তা করার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন। ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলনে এবং ১৯৬৯- এর গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধু মৌলভীবাজার সফরে এলে ছাত্রলীগের পক্ষে ব্যতিক্রমী তোরণ নির্মাণ করে তিনি জাতির জনকের নজর কাড়েন। সিংহ হৃদয়ের মহসীনকে চিনতে ভুল করেননি বঙ্গবন্ধু, তিনি তাকে কাছে টেনে নেন পরম মায়ায়। কোন প্রলোভন সৈয়দ মহসিন আলীকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। যখন দেশের অনেক বড় বড় নেতা নীতি ও আদর্শ বিসর্জন দিয়ে বাজারের পন্যের মতো বিক্রি হয়েছেন সে অবস্থা ও সময়কে তিনি পায়ে মাড়াতে সাহস দেখিয়েছেন। বরং নিজের বাপ-দাদার সম্পত্তি বিক্রি করে রাজনীতি করে গেছেন। আজকের যুগে তাঁর মতো এমন নির্লোভ, নির্মোহ, সৎ ও দেশপ্রেমিক নেতা পাওয়া বিরল।

সৈয়দ মহসিন আলী শুধু একজন জননেতাই ছিলেন না তিনি ছিলেন শিল্প-সাহিত্যের প্রতি বিশেষ অনুরাগী। ধ্রুপদী, রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরণের গানই তার মুখস্ত ছিলো। তার স্মৃতিতে প্রায় ৫ হাজার গানের সংগ্রহ ছিলো। সমাজকল্যাণে তার প্রিয় সংগীত ছিলো ‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য’ অথবা ‘আমরা করবো জয়’। এক কথায় বলতে গেলে সৈয়দ মহসিন আলী ছিলেন একজন স্বভাবশিল্পী। এ কারণেই তিনি বিভিন্ন সাহিত্য-সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায় নিঃসংকোচে তাঁর উদার হাত প্রসারিত রাখতেন। সাহিত্য ও সাংবাদিকতা ছিলো তার পছন্দের বিষয়। অবসরে তিনি বই পড়তে ভালবাসতেন। কবি-লেখকদের সঙ্গে নিয়মিত আড্ডা দিতেন। দেশের বড় বড় সাংবাদিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, আমলা অনেকেই ছিলেন তার ব্যক্তিগত বন্ধু।

আল্লাহর ওলীর বংশধর মাজার ভক্ত ওলী আল্লাহর আশিক মরহুম জনাব সৈয়দ মহসিন আলী সাহেব মৌলভীবাজার শহরে অবস্থিত হজরত সৈয়দ শাহ মোস্তফা (রঃ) এর দরগাহ শরীফ, মসজিদ এবং ঈদগাহ র বিবিধ উন্নয়ন মুলক কাজে অতি আন্তরিকতার সাথে আমৃত্যু কাজ করে গিয়েছেন।

তিনি এক সময় বাংলাদেশ টাইমসের প্রকাশনার সাথে সরাসরি ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। তাঁর সততা নিয়ে চরম শত্রুও কোনদিন কোনো প্রশ্ন তুলতে পারেনি। ব্যক্তি চরিত্রে সারল্যতা, দেশ ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা তাঁকে করেছিল অন্যদের চেয়ে সম্পূর্ণ ভাবে আলাদা। তিনি যেমন সাদাকে সাদা বলতেন তেমনি কালোকে কালো বলতে দ্বিধান্বিত ছিলেন না। ভন্ডামী, অসাধুতা, হটকারীতাকে তিনি ঘৃণা করে গেছেন আজীবন।

বলা যায় সৈয়দ মহসিন আলী ছিলেন, মৃত্তিকার সন্তান, মাটি, মানুষের বরপুত্র ও বরেণ্য রাজনীতিক। কাজেই শারীরিক মৃত্যু হলেও তার আত্মা ও আদর্শের মৃত্যু হয়নি। তার আদর্শ অম্লান অমলিন। তিনি তার কর্মের জন্য চিরদিন বেঁচে থাকবেন মানুষের হৃদয়ে এবং অন্তরের মণিকোঠায়।

সৈয়দ মহসিন আলীর চলে যাওয়ার পঞ্চম বর্ষে দাঁড়িয়ে আমরা কেউ ভাবতেই পারছিনা, সৈয়দ মহসিন আলী আমাদের মাঝে নেই। তবু তিনি আছেন এবং থাকবেন আমাদের মাঝে হয়তো স্বশরীরে নয়, থাকবেন অন্য চেতনায়, অন্য অবয়বে।

২০০৮ ইং এ যখন বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী দেশের Control নিয়েছিলেন তখন বিভিন্ন দলের অনেক ছোট-বড় নেতা জান বাঁচানোর ভয়ে দেশে-বিদেশে পালিয়ে বেড়িয়েছেন এবং অনেকেই ধরা খেয়ে সাইজ হয়ে আবার জেলও খেটেছেন। তার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটেছে মরহুম জনাব সৈয়দ মহসীন আলীর ক্ষেত্রে। বুক ফুলিয়ে তখন তিনি তার বাড়ীতে অবস্থান করেছিলেন। উল্টো বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী তার কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের আন্তরিক সাহায্য-সহযোগিতা চেয়েছিলো।

কাক ডাকা ভোরেই বিভিন্ন দল, মতের মানুষ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে জেলার কোনো না কোনো এলাকা থেকে উনার বাড়ীতে আসা শুরু করতেন। এখানে আওয়ামী লীগ, বি,এন,পি,ডান-বাম থেকে শুরু করে সব দলের মানুষ। তবে বিভিন্ন সমস্যার জন্য সবচেয়ে বেশি জমায়েত হতেন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। সবার অপেক্ষা সৈয়দ মহসিন আলী ঘুম থেকে উঠলে দেখা করবেন। এখানে যারা আছেন সবারই কোনো না কোনো সমস্যা আছে যার সমাধান একমাত্র আল্লাহ রাববুল আলামিনের দয়ায় মরহুম সৈয়দ মহসিন আলীই দিতে পারেন। সৈয়দ মহসিন আলী ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় এলেন। একে একে সবাই বলতে থাকলেন নিজের সমস্যার কথা। কেউ নিজে অসুস্থ, কারো মা অসুস্থ, কারো আবার সন্তান অসুস্থ। মেয়ে বিয়ে দিবে, মেয়ের ঘরে ইফতারী দেবে, ঘর বানাবে, চাল দিয়ে পানি পড়ে, পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছে, জমি দখল করে ফেলেছে, টাকা মেড়ে দিয়েছে, যৌতুকের জন্য বউ পিটিয়েছে, পারিবারিক অশান্তি, নানাবিধ সমস্যা।

অনেকের প্রয়োজন টাকা। টাকার জন্য চিকিৎসা করাতে পারছেন না। সৈয়দ মহসিন আলী একে একে সবার কথা শুনে কাউকে ৫০০ কাউকে ১০০০ কাউকে ২০০০ টাকা দিয়ে দিলেন। যাদের সমস্যা বড় তাদেরকে একটা নির্দিষ্ট সময়ে আসার জন্য বলে দিলেন।

মরহুম জনাব সৈয়দ মহসিন আলী সাহেবের বাড়ির একটি ঐতিহ্যগত রেওয়াজ ছিল এবং এখনও আছে আবার লোকমুখে বহুল প্রচলিত ফকির-মিসকিন থেকে শুরু করে কোটিপতি সাহেব কেউ কোনো কাজে গেলে কমপক্ষে চা-নাস্তা না খেয়ে যেতে পারবেনা।

উনার বাড়ী ছিল যেন এক সরাইখানা।

এমনটাই ছিল প্রয়াত সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীর বাড়ির প্রতিদিনের পরিবেশ। দলীয় যেকোনো ব্যাপারে সৈয়দ মহসিন আলী যেমন ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রকৃত আদর্শবান মানুষ তেমনি অসুস্থ বা অসহায় মানুষের কাছে তিনি ছিলেন দল-মতের ঊর্ধ্বে। তাই তার প্রয়াণে হাহাকার ছড়িয়েছে বিরোধী শিবিরেও।

তিনি সংসদ নির্বাচন করার আগে যে ৩ বার পৌরসভার মেয়র হয়েছিলেন তার সিংহভাগ ভোট এসেছে বিরোধী শিবির থেকেই। রাজনীতি করতে গিয়ে তিনি প্রায় ২৫কোটি টাকার পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করেছেন।

তিনি মারা যাওয়ার পর তার পরিবার জানতে পারেন এত ক্ষমতাবান শক্তিশালী সমাজ কল্যাণ মন্ত্রী আরও ৫ কোটি টাকা ঋণ রেখে গিয়েছেন। এখনকার নীতিহীন লুটপাটের রাজনীতিতে এমন ঘটনা বিরল। উনার বাড়ীর গেইট ঘন্টার ২৪ ঘন্টার জন্য খোলা থাকতো।

রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকে Minister হওরার পরও জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই মানবতাবাদী মানুষের অতি কাছে যেতে যে কোনো ধরনের মানুষের কোনো Protocol লাগেনি। Minister থাকাকালীন সময়ে সার্কিট হাউজে ভুলেও একদিনের জন্য পা রাখেননি। বাড়ীতে অবস্থানকালীন সময়ে ছিল না কোনো পুলিশ পাহারা। কারণ তিনি সব সময় বলতেন এসব Protocol সাধারণ জনগণকে তাদের কাংখিত সেবা পেতে সবচেয়ে বড় বাধা হিসাবে কাজ করে।

ব্যক্তি জীবনে তার ৩ মেয়ে থাকলেও এলাকায় ছিল তার শত শত ছেলে মেয়ে। শত শত মানুষ তাকে বাবা বলে ডাকতেন।

মরহুম জনাব সৈয়দ মহসিন আলী Minister হওয়ার পর মিন্টু রোডের বাসার ভিতরে অনেক টাকা খরচ করে অতিরিক্ত আরও দুটি ঘর বানিয়েছিলেন।

এই ঘরে থাকতেন মূলত বৃহওর সিলেট সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকায় আসা অসহায় হত দরিদ্র জনগন এবং তাদের সঙ্গী-সাথী। এরা মূলত চিকিত্সা সেবা নেওয়ার জন্য ঢাকায় এসে মিন্টু রোডের বাসায় অবস্থান করে সুস্থ-সবল হয়ে যার যার বাড়ীতে ফিরৎ যেতেন। এদের রান্না করে খাওয়ানো এবং দেখা শোনার

জন্য আলাদা লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।

মরহুম জনাব সৈয়দ মহসিন আলীর সৃষ্টি করা পরিবেশ উনার জীবনসঙ্গীনি আমার পরম শ্রদ্ধেয়া ভাবী/বোন সাবেক সংসদ সদস্যা সৈয়দা সায়েরা মহসিন এখনও বহাল রেখেছেন।

ভাবীর রক্তধারার মধ্যে আসামের ১ম শিক্ষামন্ত্রীr মরহুম সৈয়দ আব্দুল মজিদ কাপতান মিয়া সাহেবের রক্তের কণিকা প্রবাহিত আছে বলেই ভাবীও এসব ক্ষেত্রে মরহুম সৈয়দ মহসিন আলীর পুরোপুরি সমান্তরাল ছিলেন এবং এখনও আছেন।

এই বাড়িটি এখনও সবার জন্য দিন-রাত উন্মুক্ত। বাড়ীতে কাজের অনেক লোক এবং যৌথ পরিবারের ফলশ্রুতিতে পরিবারের এত সদস্য থাকার পরও ভাবী এই সংসারে আসার পর থেকে নিজ হাতে রান্না করে কত লোককে যে খাইয়েছেন তা হিসাব ছাড়া। দেশ-বিদেশের অজস্র-অগনিত মানুষকে ভাবী নিজ হাতে রান্না করে কত যে আপ্যায়িত করেছেন তাও অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মৌলভীবাজারে প্রতিটি সফরে আসার পূর্বেই ভাবীর হাতের রান্না খাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করতেন।

এমনকি ভাবীর হাতের রান্না করা বিভিন্ন সুস্বাদু খাবার কতবার যে গনভবনে গিয়েছে তা হিসাব ছাড়া।

এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর অতি প্রিয় একটি আইটেম হলো ভাবীর রান্না করা শাতকরা দিয়ে গরু গোশত।

আজ অবধি মরহুম সৈয়দ মহসিন আলী সাহেবের বাড়িতে ঢুকার জন্য কারও অনুমতি নিতে হয় না। ছিন্নমূল মানুষেরা যেকোনো সময় বাসায় ঢুকে নিজের হাতে ফলমূল খেতে পারে। পুকুর থেকে মাছ ধরে নিয়ে যেতে পারে। কিন্তু কেউ তাতে বাধা দেবে না। বাড়িতে ভিক্ষুকরা ভিক্ষার জন্য গেলে খালিহাতে ফিরে আসার কোনো নজির নেই। মরহুম সৈয়দ মহসিন আলী মাঝে মাঝে বড় গরু জবাই করে শিরনি করে খাওয়াতেন মানুষকে।

উনাকে নিয়ে এসবের বিস্তারিত লিখতে গেলে বই আকারে লিখেও শেষ করা যাবেনা।

উনার জীবনের শেষ সময়ে এসে তিনি নিউমোনিয়া, ডায়াবেটিস, কিডনি ও হৃদরোগের সমস্যায় ভুগছিলেন। ২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

হে আল্লাহ্ রাববুল আলামিন তুমি তোমার এই বান্দা কে বেহেশতের সবচেয় উচ্চ মাকামে পৌঁছাও এবং তার পরিবারে পরিজন সহ সবাইকে তোমার হেফাজতে রাখো।

 

তথ্যসূত্র: আমার নিজস্ব দেখা জানা অনেক কিছু তুলে ধরেছি। কিছু লিখা গণমাধ্যমে হতে সংগ্রহ কৃত। সংগ্রহকৃত লিখা কিছুটা এডিট করেছি ভাষাগত সৌন্দর্য রক্ষার জন্য।