Cinque Terre

মুফতি মুহাম্মাদ আকতার আল-হুসাইন

২৫ মে , ২০২০


লেখক

ইমাম ও খতিব, ওল্ডহাম জামে মসজিদ, যুক্তরাজ্য


লকডাউনে ঈদুল ফিতর

আল-হামদুলিল্লাহ! দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনা করার পর মুমিন মুসলমানদের জন্য খুশির বার্তা নিয়ে আগমন করছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। কিন্তু এবারের ঈদে একটু অন্য রকম অনুভ‚তি সবার অন্তরে। আর তার একমাত্র কারণ হচ্ছে মহামারী করোনা ভাইরাস। যদিও এই পরিস্থিতিতে আমরা আমাদের সবটুকু উজাড় করে আনন্দ উৎযাপন করতে পারব না তারপরও মহান মালিকের উপরে সন্তুষ্ট থেকে আমরা যে কাজ গুলো করতে পারি সে বিষয়গুলো আমরা জানব ইনশা আল্লাহ।

ঈদের রাতের নফল ইবাদত করা 

ঈদের রাতে নফল ইবাদত করার ফজিলতের বর্ণনা বিভিন্ন কিতাবে পাওয়া যায়। সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফের হাদিসে এসেছে- ‘হযরত আবূ উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আদ্বহার রাতে (সাওয়াবের নিয়তে, ইবাদতের উদ্দেশ্যে) জাগ্রত থাকবে, সে ব্যক্তির হৃদয় ওই দিন মৃত্যুবরণ করবে না যেদিন অন্য হৃদয়গুলো মৃত্যুবরণ করবে। (অর্থাৎ কিয়ামতের দিনে তার কোন ভয় থাকবে না)।’

অন্য একটি হাদিসে এসেছে-‘হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-যে ব্যক্তি পাঁচটি রাত (ইবাদতের উদ্দেশ্যে) জাগ্রত থাকবে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। তারবিয়ার রাত (জিলহাজ্জ মাসের ৮ তারিখের রাত), আরাফার রাত, কুরবানী দিবসের রাত এবং ঈদুল ফিতরের রাত ও শবে বরাতের রাত’। (আত তারগীব ওয়াত তারহীব লিল আসবাহানী ও লিল মুনজেরী)

ফজরের নামাজ মাসজিদে গিয়ে আদায় করা 

প্রতিদিনের মত ঈদের দিনও যথা সময়ে মাসজিদে গিয়ে ফজরের নামাজ আদায় করার চেষ্টা করা। ফজরের নামাজের ফজিলত সম্পর্কে মুসলিম শরীফের হাদিসে এসেছে-‘হযরত উসমান ইবনে আফফান (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-যে ব্যক্তি জামাআতের সঙ্গে ইশার নামাজ আদায় করল সে যেন অর্ধেক রাত পর্যন্ত নামাজ আদায় করল। আর যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাআতের সঙ্গে আদায় করল সে যেন সারা রাত জেগে নামাজ আদায় করল’।

সকালে গোসল করা

ঈদের দিন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়া ও ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করার লক্ষ্যে সকালে গোসল করা। যেমন সুনানে ইবনে মাজাহ এর হাদিসে এসেছে-‘হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আদ্বহার দিন গোসল করতেন’।

হযরত ইমাম মালিক (র.) উনার কিতাব মুয়াত্তা ইমাম মালিকে একক ভাবে বর্ণনা করেছেন-‘হযরত নাফি (র.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) ঈদুল ফিতরের দিন সকালে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে গোসল করতেন’।

মিসওয়াক করা

মিসওয়াক করার অনেক ফজিলত রয়েছে এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিসওয়াক করাকে অশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। সুনানে আন-নাসাঈ এর মধ্যে এসেছে-‘হযরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-‘মিসওয়াক মুখের পবিত্রতা অর্জনের উপকরণ ও আল্লাহর সন্তোষ লাভের উপায়।’

সুগন্ধি ব্যবহার করা 

ঈদের দিন সুগন্ধি ব্যবহার করার বিষয়ে মুস্তাদরাকে হাকেম এর চতুর্থ খÐে একখানা সুন্দর হাদিস এসেছে-‘হযরত হাসান ইবনে আলী (রা.) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদের দিন আমাদের নির্দেশ দিতেন। আমরা সর্বোত্তম সুগন্ধি ব্যবহার করি।’

উত্তম কাপড় পরিধান করা 

বুখারী শরীফের হাদিসে এসেছে-‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, বাজারে বিক্রি হচ্ছিল এমন একটি রেশমী জুব্বা নিয়ে হযরত উমর (রা.) আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি এটি ক্রয় করে নিন। ঈদের সময় এবং প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এটি দিয়ে নিজেকে সজ্জিত করবেন। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন এটি তো তার পোষাক, যার (আখিরাতে) কল্যাণের কোন অংশ নেই। (অর্থাৎ তাকওয়া ও সওয়াবের)’।

এখানে লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো-নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদ উপলক্ষে সুন্দর পোশাক পরার ব্যাপারে নিষেধ করেননি। কিন্তু তিনি এ জুব্বা কিনতে সম্মতি দেননি যেহেতু সেটি ছিল রেশমের তৈরি জুব্বা।

সহিহ ইবনে খুযাইমা কিতাবে এসেছে-‘হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এমন একটি জুব্বা ছিল যেটা তিনি দুই ঈদের সময় ও জুমার দিন পরিধান করতেন।

মুস্তাদরাকে হাকেম এর চতুর্থ খণ্ড একখানা সুন্দর হাদিস এসেছে- ‘হযরত হাসান ইবনে আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদের দিন আমাদের নির্দেশ দিতেন। আমরা সর্বোত্তম কাপড় পরিধান করি।’

সকালে কিছু আহার করা 

দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনা করার পর শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেলে ঈদের দিন সকালে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিছু আহার করতেন। বিশেষ করে খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। বুখারী শরীফের হাদিসে এসেছে-‘হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন কিছু খেজুর না খেয়ে বের হতেন না। অপর এক বর্ণনায় এসেছে তিনি তা বিজোড় সংখ্যায় খেতেন।’

সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা 

রামাদ্বান মাসের ইবাদত সমূহের মধ্যে অন্যতম একটি ইবাদত হচ্ছে রোজার শেষে ঈদুল ফিতরের দিন সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা। বুখারী শরীফের হাদিসে এসেছে-‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লোকদেরকে ঈদের নামাজের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বেই সাদাকাতুল ফিতর আদায় করার নির্দেশ দেন।’

নফল সাদাকাহ করা 

ঈদের দিন সবার সামর্থ অনুযায়ী নফল সাদাকাহ করা একটা অন্যতম উত্তম কাজ। সহীহ বুখারী শরীফের হাদিসে এসেছে- ‘হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদুল ফিতরে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন। এর পূর্বে ও পরে কোন সালাত আদায় করেননি। অতঃপর বিলাল (রা.) কে সঙ্গে নিয়ে নারীদের নিকট এলেন এবং সাদাকাহ প্রদানের জন্য তাদের নির্দেশ দিলেন। তখন তাঁরা দিতে লাগলেন। নারীদের কেউ দিলেন আংটি, আবার কেউ দিলেন গলার হার।’

নফল নামাজ আদায় না করা 

ঈদের দিন ঈদের নামাজের আগে বা পরে ঘরে, ঈদগাহে অথবা মসজিদে কোন নফল নামাজ না পড়া। বুখারী শরীফের হাদিসে এসেছে-‘হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত বিলাল (রা.) কে সঙ্গে নিয়ে ঈদুল ফিতরের দিন বের হয়ে দুই রাকত নামাজ আদায় করেন। তিনি এর পূর্বে ও পরে কোন নামাজ আদায় করেননি।’

তাকবির পাঠ করা 

ঈদগাহে যাওয়ার পথে তাকবীর পাঠ করা। পবিত্র কুরআনুল কারীমে সূরা বাকারাহ এর ১৮৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-‘তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর।’

সুনানে দারা কুতনী এর দ্বিতীয় খন্ডে এসেছে-

‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন ঘর থেকে বের হয়ে ঈদগাহে পৌঁছা পর্যন্ত তাকবীর পাঠ করতেন। ঈদের নামায শেষ হওয়া পর্যন্ত তাকবীর পাঠ করতেন। যখন নামাজ শেষ হয়ে যেত তখন আর তাকবীর পাঠ করতেন না।’

ইমাম আবু হানিফা (র.) এর মতে ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার সময় তাকবির উচ্চস্বরে বলবে না। (হেদায়া)

মুস্তাদরাকে হাকেমে এসেছে-ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাবার সময় আস্তে আস্তে এই তাকবীর পড়তে থাকা। তবে ঈদুল আদ্বহায় যাওয়ার সময় এ তাকবীর উচ্চ আওয়াজ করে পড়তে থাকবে।

তাকবির হচ্ছে-‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার। আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ’।

অনুবাদ-আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান, আল্লাহ ব্যতিত কোনো উপাস্য নেই ও আল্লাহ মহান। আল্লাহ মহান ও সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।

সকাল সকাল ঈদগাহে রাওয়ানা করা 

ঈদের দিন সকালে ঈদের নামাজের জন্য সকাল সকাল ঈদগাহে রাওয়ানা করা। সুনানে আবু দাউদ শরীফের হাদিসে এসেছে- ‘হযরত আবূ উমাইর ইবনে আনাস (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে একদল আরওহী এসে সাক্ষ্য দিলো যে, গতকাল তারা (ঈদের) চাঁদ দেখেছে। তিনি লোকদেরকে রোজা ভঙ্গ করার এবং পরদিন সকালে ঈদগাহে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন।’

ঈদগাহে ভিন্ন রাস্তায় যাতায়াত করা 

ঈদের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদগাহে যাওয়া আসার সময় ভিন্ন রাস্তা ব্যবহার করতেন। সুনানে আবু দাউদ ও তিরমিজী শরীফের হাদিসে এসেছে-‘হযরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদের দিন এক রাস্তা দিয়ে ঈদগাহে যেতেন এবং অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসতেন।’

তিরমিজী শরীফের হাদিসে আরও এসেছে- ‘হযরত আলী (রা.) থেকে বলেন, পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত।’

আনন্দ উৎযাপন করা

দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনা করার পর আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দাদের খুশির দিন হিসেবে খুশি উৎযাপন করার উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। তবে সেটা হতে হবে শরীয়তের গন্ডির ভিতরে থেকে। সুনানে আবু দাউদ ও নাসাঈ শরীফের হাদিসে এসেছে-‘হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মাদীনাহতে আগমন করেন সে সময় তারা (মদীনা বাসীগণ) দুটো দিনে খেলাধূলা করত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন আল্লাহ তোমাদেরকে এ দুটোর পরিবর্তে উত্তম দুটো দিন দিয়েছেন। আর তা হচ্ছে আদ্বহার দিন ও ফিতরের দিন।’

শুভেচ্ছা বিনিময় করা

ঈদের শিষ্টাচারের মধ্যে রয়েছে পরস্পরের মাঝে উত্তম পদ্ধতিতে শুভেচ্ছা বিনিময় করা। সে শুভেচ্ছার ভাষা যে ধরণেরই হোক না কেন। যেমন কেউ কেউ বলেন, ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম’ তথা আল্লাহ আমাদের ও আপনাদের নেক আমলগুলো কবুল করে নিন। কিংবা ঈদ মোবারকসহ এ ধরণের অন্য যে কোন বৈধ ভাষায়।

হযরত জুবাইর বিন নুফাইর (র.) বলেন, ঈদের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীবর্গ যখন একে অপরের সঙ্গে সাক্ষাত করতেন তখন বলতেন ‘তুকুব্বিলা মিন্না ও মিনকা’ তথা আমাদের আমল ও আপনার আমল কবুল হোক। (ইবনে হাজার বলেন এর সনদ সহিহ। আল-ফাতাহ দ্বিতীয় খÐ)

ঈদের নামাজ আদায় করা

ঈদের দিন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে দুই রাকাত ওয়াজীব নামাজ আদায় করা। কিন্তু আমরা সবাই অবগত আছি যে বর্তমান বিশ্বে করোনা ভাইরাসের কারণে বিগত কয়েক মাস হলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মসজিদে গিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ বা জুমার নামাজ আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। এমতাবস্থায় এখন আমরা ঈদুল ফিতরের নামাজ কীভাবে আদায় করব।

তাহলে আসুন খুব সংক্ষেপে সে বিষয়টি আমরা জেনে নেই।

প্রথমে আমাদের মনে রাখতে হবে হানাফী মাযহাবের ফকিহগনের মতে ঈদের নামাজের শরয়ী হুকুম হচ্ছে এটা আদায় করা ওয়াজীব। এ বিষয়ে আল-মাউসুয়াতুল ফিকহিয়্যাহ এর মধ্যে এসেছে-‘হানাফি মাযহাবের ফকিহগণের বিশুদ্ধ মতে ঈদুল ফিতর ও আদ্বহার নামাজ হচ্ছে ওয়াজীব।’

আল্লামা আব্দুর রহমান আল-জাযীরি (রহ.) তার কিতাব আল ফিকহু আলাল মাযাহিবিল আরবা এর প্রথম খÐে বলেছেন-‘ঈদুল ফিতর ও আদ্বহার নামাজ হচ্ছে ওয়াজীব।’

উক্ত কিতাবের মধ্যে আরও বলা হয়েছেÑ‘ঈদের নামাজ বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য জুমার নামাজের ন্যায় জামাত হওয়া শর্ত। (মাযাহিবুল আরবা প্রথম খÐ)

জামাতে পড়তে না পারলে কি করা?

হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য ফেকার কিতাব হেদায়ার মধ্যে এসেছে-‘যে ব্যক্তির ইমামের সঙ্গে ঈদের নামাজ ফউত হয়ে গেছে, সে তা কাযা পড়বে না। কেননা এই প্রকৃতির নামাজ এমন কিছু শর্তসাপেক্ষেই ইবাদত রূপে স্বীকৃত হয়েছে, যা মুনফারিদ দ্বারা (একজনের দ্বারা) সম্পন্ন হতে পারে না।’

হানাফী মাযহাবের সুপ্রসিদ্ধ কিতাব আল ফিকহু আলাল মাযাহিবিল আরবা এর প্রথম খন্ডে এ বিষয়ে বলা হয়েছে-‘আহনাফের কথা হলো-‘জুমার নামাজ বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য যেমন জামাত শর্ত ঠিক তেমনি ভাবে ঈদের নামাজের জন্যও জামাত শর্ত। তারা আরও বলেন, যদি কোন কারণে ঈদের জামাত ছুটে যায় ওই সময় কিংবা অন্য সময়ে আদায় করা লাগবে না।’

উনারা আরও বলেছেন-‘আর যদি পড়তে চায় তাহলে সে চার রাকাত নামাজ (নফল) আদায় করবে অতিরিক্ত তাকবীর ছাড়া। তাতে প্রথম রাকাতে সূরা ফাতেহা পাঠের পর পড়বে সূরা আলা, দ্বিতীয় রাকাতে পড়বে সূরা দুহা, তৃতীয় রাকাতে পড়বে সূরা ইনশিরাহ, আর চতুর্থ রাকাতে পড়বে সূরা সূরা তীন’। (আল ফিকহু আলাল মাযাহিবিল আরবা প্রথম খণ্ড)

এখানে যদিও বিভিন্ন সূরার নাম এসেছে। কিন্তু আপনি কুরআনুল কারীমের যে কোন সূরা দিয়ে নামাজ আদায় করতে পারেন। বরং আপনার জন্য যেটা সহজ এবং বিশুদ্ধভাবে মুখস্ত আছে সেই সূরা দিয়ে আদায় করা উত্তম হবে। এবং এক সালামে চার রাকাত না পড়ে দুই রাকাত করেও পড়তে পারেন। ইনশা আল্লাহ আপনার পক্ষ থেকে আল্লাহ কবুল করবেন।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহ মোতাবেক আমল করার তৌফিক দান করুন। ঈদের দিনের উছিলায় আমারদের সবাইকে মাফ করে করোনা ভাইরাস থেকে হেফাজতে রাখুন। (আমিন)