‌'টোকনদা হেসেই বুঝিয়ে দিলো এই আস্পর্ধা অমার্জনীয়’

নিজস্ব প্রতিবেদক


অক্টোবর ২৬, ২০২০
০১:৫১ পূর্বাহ্ন


আপডেট : অক্টোবর ২৬, ২০২০
০১:৫১ পূর্বাহ্ন



‌'টোকনদা হেসেই বুঝিয়ে দিলো এই আস্পর্ধা অমার্জনীয়’

চলচ্চিত্র নির্মাতা মাহমুদ দিদার লিখেছেন, ‘সিনেমা জীবন খায়! জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময় ফুরায়ে যায় এই দেশে একটা সিনেমা ভেবে, বানিয়ে শেষ করতে।  কি এমন টাকা!  তার আবার তছরুপের অভিযোগ। নির্মাতা, কবি টোকন ঠাকুরকে হেনস্তা করার তীব্র প্রতিবাদ জানাই। টোকনদা হেসেই বুঝিয়ে দিলো এই আস্পর্ধা অমার্জনীয়।’

কবি ও নির্মাতা টোকন ঠাকুরকে গ্রেপ্তারের পর এভাবেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রতিবাদ জানিয়েছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা মাহমুদ দিদার।

সরকারি সম্পত্তি তছরুপের অভিযোগে কবি ও চলচ্চিত্র পরিচালক টোকন ঠাকুরকে গ্রেপ্তার করেছে নিউমার্কেট থানা-পুলিশ। রবিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কাঁটাবন এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মূলত ২০১২-২০১৩ সালের সরকারি অনুদানে ‘কাঁটা’ চলচ্চিত্রের জন্য অনুদান পান টোকন ঠাকুর। সময় মতো ছবিটি তথ্য মন্ত্রণালয়ে জমা না দেওয়ার কারণে অর্থ তছরুপের অভিযোগে টোকন ঠাকুরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে মন্ত্রণালয়। 

এদিকে টোকন ঠাকুরকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে উত্তাল ফেসবুক। সিনেপ্রেমীরা টোকন ঠাকুরের সঙ্গে এমন আচরণের নিন্দা জানিয়েছেন। টোকন ঠাকুরের দ্রুত জামিন চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়েছেন নন্দিত চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীও।  

ফারুকী বলেন, ‘ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা মেরে দেয়ার পরও কত মানুষ রাজার হালে ঘোরে, আর সামান্য কয় লাখ টাকার একটা অনুদানের সিনেমা টাইমলি না দেয়াতে আমার বন্ধু কবি টোকন ঠাকুরকে গ্রেপ্তার করা হইছে! আমি বলছি না, অনুদানের টাকার ছবি টাইমলি না দেয়া উচিত কাজ! কিন্তু একটা ছবি বানাতে গিয়ে কত রকম ঘটনা-দুর্ঘটনা ঘটতে পারে! তাই আশা করি তথ্য মন্ত্রণালয়ের ভাই-বোনেরা ব্যাপারটা আন্তরিকতার সঙ্গে দেখে একটা সুরাহা করবেন!এবং আদালতও ব্যাপারটা আন্তরিকভাবে দেখবেন যাতে টোকনের জামিন দ্রুত নিশ্চিত হয়! আপাতত এইটুকুই বলার!’

চলচ্চিত্র নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী বলেন, ‘কবি টোকন ঠাকুর ছবিটা নির্মাণ করতে পারছেন না হয়তো অর্থের অভাবে, তা ছাড়া কবি মানুষ সিনেমা নির্মাণের ভঙ্গি হয়তো বুঝতে পারেন নাই, তাই দয়া করে ওনাকে গ্রেপ্তার করে বিপদে না ফেলে, সবাই মিলে ওনার সিনেমাটা শেষ করার চেষ্টা করি। মুক্তি দেয়া হোক আমাদের কবিকে।’

কবি সরকার আমিন লিখেছেন, ‌‘দিন-পনেরো আগে টোকন এসেছিলেন। টগবগ করছে। ‘আমিন ভাই, শেষ করে আনছি। মুভিটা এবার মুক্তি পেতে যাচ্ছে।’ খুশি হইলাম শুনে। বললো, প্রচুর ক্যারেক্টার। প্রচুর খরচ। আর্টিস্টরা প্রায় মাগনা কাজ করেছেন। পুরোনো ঢাকায় কয়েক মাস থেকে শুটিং করতে হয়েছে। আজ শুনলাম টোকন গ্রেপ্তার হয়ে গেছে। অভিযোগ-সরকারি টাকা নিয়ে ঠিক টাইমে মুভি জমা দেয় নাই। যদি এটাই একমাত্র অভিযোগ হয়ে থাকে তবে তা দুঃখজনক। দুঃখ পেয়েছি-কারণ টোকন চেষ্টা করছিল কাজটা শেষ করতে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, গ্রেপ্তার না, ওকে মুভিটা বানাতে হেল্প করুন।’

এই সময়ের অন্যতম প্রধান কবি টোকন ঠাকুরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। না, তিনি চুরি করেননি, ডাকাতি করেননি, হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দেননি। কথাশিল্পী শহীদুল জহিরের ছোটগল্প ‘কাঁটা’ অবলম্বনে একই শিরোনামে একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য সরকারি অনুদান পেয়েছিলেন তিনি। সিনেমাটি নির্ধারিত সময়ে জমা না দেওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তথ্য মন্ত্রণালয়। এই মামলায় আদালত তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। ব্যাপারটা আদালতের, তাই টোকন ঠাকুরের মুক্তি পুলিশের এখতিয়ারের মধ্যে নেই।

কথা সাহিত্যিক স্বকৃত নোমান লিখেছেন, ‘এমন নয় যে টোকন ঠাকুর সরকারি অনুদানের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। তিনি চলচ্চিত্রটির দৃশ্যায়ন শেষ করেছেন। বর্তমানে সম্পাদনার পর্যায়ে রয়েছে। এক কোটি ষোল লাখ টাকার ফুটেজ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরে জমাও দিয়েছেন। অনুদানের বরাদ্দ ৩৫ লাখ টাকা থেকে মাত্র সাড়ে ১০ লাখ টাকা পেয়েছেন। সাড়ে ২৪ লাখ এখনো বাকি। মাত্র সাড়ে ১০ লাখ টাকার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তাঁকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। অথচ সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকার ঋণ খেলাপি গ্রেপ্তার হয় না, সাড়ে ১০ লাখ কোটি টাকা পাচারকারী গ্রেপ্তার হয় না। তার মানে আইন যে সবার জন্য সমান নয় কবি টোকন ঠাকুরকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে আমাদের জানান দেওয়া হলো।

শহীদুল জহিরের মতো একজন কথাশিল্পীর গল্প থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণ এত সহজ ব্যাপার নয়। টোকন ঠাকুর সাত বছর সময় নিয়েছেন। ভালো কাজ করতে গেলে বেশি সময় লাগতেই পারে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের এটা বোঝা উচিত। টোকন ঠাকুর দেশ ছেড়ে কোথাও পালিয়ে যাবেন না। সরকারের সাড়ে ১০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করবেন না। চলচ্চিত্র নির্মাণ তাঁর স্বপ্ন। এই স্বপ্ন তিনি বাস্তবায়ন করবেনই। আমরা নিশ্চিত।

চলচ্চিত্র নির্মাণে এই অনুদান নিয়ে আমাদের কথা আছে। এই অনুদানে ভালো সিনেমা আদৌ নির্মাণ করা যায় কিনা, তা নিয়ে কথা আছে। মধ্য আয়ের দেশ বাংলাদেশ। উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ। ছোটখাটো প্রকল্পে যেখানে হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে, সেখানে শিল্প-সংস্কৃতির খাতে বরাদ্দ এত কম কেন, সে নিয়েও কথা আছে? সেসব কথা পরে। আগে চাই কবির জামিন। আশা করি আগামী কাল তিনি জামিনে মুক্তি পাবেন। আমরা সেই প্রচেষ্টায়।'

বিএ-০৭