নাবিল হোসেন
জুন ২৫, ২০২০
০৫:৩৭ পূর্বাহ্ন
আপডেট : জুন ২৫, ২০২০
০৫:৪৮ পূর্বাহ্ন
করোনার কালো ছায়া পড়েছে সিলেটে। প্রতিদিন উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। করোনা সংক্রমণ রুখতে গত ২৩মার্চ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। সারা দেশের মত সিলেটেও সাধারণ ছুটিতে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় রেস্টুরেন্টগুলোও। গত ৩০ মে সাধারণ ছুটি প্রত্যাহার হলেও এখনো সিলেটে পুরোপুরি খুলেনি রেস্টুরেন্টগুলো। আর এই দীর্ঘ বন্ধে রেস্টুরেন্ট মালিকরা পড়েছেন বিপাকে। তারা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে সরকারের সহযোগিতা ছাড়া তাদের পক্ষে আর ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে না।
গত কয়েক বছরে সিলেটে রেস্টুরেন্ট ব্যবসার ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। যোগ হয়েছে নানা বৈচিত্রতা। বিশেষ করে নগরের জিন্দাবাজার, নয়াসড়ক, কুমারপাড়া, জেলরোড, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় গেইট এলাকায় অসংখ্য রেস্টুরেন্ট চালু হয়। প্রতিটি রেস্টুরেন্টে সব সময় ভিড় লেগে থাকত। তবে দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে সরকারের সাধারণ ছুটি ঘোষণার আগেই এসব রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে গত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে যে সকল রেস্টুরেন্ট চালু হয়েছিল সেগুলোরর অবস্থা আরও শোচনীয়। এ অবস্থায় সরকারি সহায়তা ছাড়া এই সঙ্কট থেকে উত্তরণের কোনো পথ নেই বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
সিলেট নগরের নয়াসড়কে অবস্থিত ম্যাডগ্রিলের স্বত্ত্বাধিকারী শাহীরাজ চৌধুরী মনে করেন সরকার যদি এখন রেস্টরেন্ট ব্যবসায়ীদের দিকে সাহায্যের হাত না বাড়ায় তাহলে সিলেটের অনেক রেস্টরেন্ট বন্ধ হয়ে যাবে। সিলেট মিরর এর সঙ্গে আলাপে তিনি বলেন, ‘আমরা কেউ এই পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিলামনা। মার্চের প্রথম থেকেই আমাদের কাস্টমার কমতে শুরু করে। পরবর্তীতে লকডাউন ঘোষণার আগেই আমরা রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দেই। বর্তমানে আমাদের টেক ওয়ে ব্যবস্থা আছে। কিন্ত টেক ওয়ে দিয়ে রেস্টরেন্ট টিকিয়ে রাখা অসম্ভব। বর্তমানে যা ব্যবস্যা হচ্ছে তা দিয়ে রেস্টুরেন্টের খরচ মেটানোই সম্ভব হচ্ছে না। প্রতি মাসে পকেট থেকে বড় পরিমাণ অর্থ দিতে হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার বিভিন্ন খাতকে প্রণোদনা দিচ্ছে। কিন্তু আমাদের কোনোখাতে অর্ন্তভুক্ত করা হয়নি।আমরা প্রতি বছর দেশের অর্থনীতিতে বড় জোগান দিচ্ছি। আমাদের যদি সরকার এই সময়ে সহায়তা না করে তা হলে ব্যবস্যা গুটিয়ে নিতে হবে।’
সিলেটের চোহাট্টা এলাকায় করোনা সংক্রমণ শুরুর কিছুদিন আগে যাত্রা শুরু করা ‘কারাগার’রেস্টুরেন্টের একজন অংশীদার আমিনুল ইসলাম ফারহান সিলেট মিররকে বলেন, ‘আমরা রেস্টুরেন্ট খোলার অল্প কিছুদিনের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠি। তবে করোনা সংক্রমণ রুখতে লকডাউনের আগেই আমরা রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দেই। নতুন যাত্রা করা একটি রেস্টুরেন্ট এতদিন বন্ধ রাখায় আমরা গভীর সঙ্কটে পড়েছি। গত তিনমাস রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকলেও আমাদের কর্মচারি, বাবুর্চিদের বেতন দিতে হয়েছে। বর্তমানে টেক ওয়ে চালু আছে। তবে টেক ওয়ে দিয়ে রেস্টুরেন্ট টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। সাধারণ সময়ে যেখানে প্রতিদিন ত্রিশ থেকে পয়ত্রিশ হাজার টাকার ব্যবস্যা হতো এখন সেখানে ৫ হাজারের বেশি হয় না। দোকানভাড়া, কর্মচারীদের বেতন এসব দিয়ে আমাদের হাতে আর কিছু থাকছে না।’
নয়া সড়কে অবস্থিত কাবাব কারিগর-এর স্বত্ত্বাধিকারী ইমাম মোহাম্মদ জহির বলেন, ‘দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় বড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। আমাদের রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকলেও কর্মচারীদের বেতন দিতে হয়েছে। গত মাস থেকে টেক ওয়ে শুরু করেছি। কিন্তু আগে যা ব্যবস্যা হতো বর্তমানে তার চার ভাগের এক ভাগও হয়না। কোনাভাবে প্রতিদিনের খরচটা তুলতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সিলেটে এখনো সেইভাবে টেক ওয়ে জনপ্রিয় নয়। তারমধ্যে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বা মেসে যারা থাকত তারা বাড়িতে চলে গেছেন। বিভিন্ন অফিসেও এখন আর টেক ওয়ে যাচ্ছে না। বর্তমানে রেস্টুরেন্ট শুধু খোলা রেখেছি যাতে কর্মচারীদের বেতন দিতে পারি। তবে এভাবে খুব বেশিদিন চালানো যাবে না।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতি সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও পানসী রেস্টুরেন্টের অংশীদার মো.নুরুজ্জামান সিদ্দিকী সিলেট মিররকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন রেন্টুরেন্ট বন্ধ থাকায় মালিকরা সঙ্কটে আছেন। লকডাউনের শুরুতেই আমরা সিলেট জেলা প্রশাসনের কাছে প্রণোদনার দাবিতে একটি স্মারকলিপি দেই। তবে এখনো আমাদের প্রণোদনার বিষয়ে কোনো ধরণের সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। এছাড়া আমাদের ভ্যাট মওকুফের জন্যও আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়েছি। কারণ দীর্ঘদিন ধরে আমাদের রেস্টুরেন্টগুলো বন্ধ। এ বিষয়ে আমাদের কোনো কিছু জানানো হয়নি। এর আগে কেন্দ্রীয় ভাবে সারাদেশের রেস্টুরেন্ট শ্রমিকদের তালিকা করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গতকালও (মঙ্গলবার) আমরা এই সংকট নিয়ে একটি ভার্চুয়াল সভা করেছি। সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা দ্রুতই জেলা প্রশাসক, মেয়র, পুলিশ কমিশনার এবংসিলেট চেম্বারের সঙ্গে বসে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিকেল ৪টা পর্যন্ত যাতে আমাদের রেস্টুরেন্ট খোলারাখার অনুমতি দেওয়া হয় সেই দাবি জানাব। একই সঙ্গে আমরা দাবি জানাই এই সঙ্কটকালীন সময়ে যাতে রেস্টরেন্টের ভাড়াও মওকুফ করা হয়।’
এএফ/০৪