গোলাপগঞ্জে দুর্ঘটনা : রোগী নিয়ে বাড়ি ফেরা হলো না তাদের

সিপার আহমদ, বিয়ানীবাজার


ডিসেম্বর ৩০, ২০২০
০৬:০১ অপরাহ্ন


আপডেট : ডিসেম্বর ৩০, ২০২০
০৮:৩৩ অপরাহ্ন



গোলাপগঞ্জে দুর্ঘটনা : রোগী নিয়ে বাড়ি ফেরা হলো না তাদের

হাসপাতাল থেকে রোগী নিয়ে বাড়ি ফেরা হলো না সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার রাজন আহমদ ও মাইক্রোবাসচালক সুনাম আহমদের। আজ বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের গোলাপগঞ্জে ট্রাক-মাইক্রোবাসের সংঘর্ষের পর দু'টি গাড়িতেই আগুন ধরে যায়। এতে মাইক্রোবাসটি পুরো ভস্মিভূত হয়ে যায়। আগুনে পুড়ে মাইক্রোবাসের চালকসহ তিন যাত্রী নিহত হন। আর সিলিন্ডারের টুকরো গায়ে পড়ে নিহত হয় পাশের বস্তির এক শিশু।

দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন- বিয়ানীবাজার উপজেলার চারখাই ইউনিয়নের বারইগ্রামের মৃত কুনু মিয়ার ছেলে রাজন আহমদ (২৭), একই গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে মাইক্রোবাসচালক সুনাম আহমদ (২৬), কানাইঘাটের বাসিন্দা মারজান আহমদ এবং গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নের রফিপুর গ্রামের মঞ্জু মিয়ার শিশুপুত্র হাসান আহমদ (৮)। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে রয়েছে মাহিন আহমদ (১৭)। তার অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানা গেছে।

স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা জুনেদ আহমদ জানান, বুধবার ভোরে একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে মাহিন আহমদ নামের এক রোগীকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ভোর সাড়ে ৫টার দিকে মোল্লাগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন স্থানে ট্রাকের পেছনে ধাক্কা দেয় নোহা মাইক্রোবাসটি।

প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার রাতে মাহিন আহমদকে নিয়ে হাসপাতালে যান সুনাম ও রাজনসহ মাহিনের পরিবারের সদস্যরা। ভোর ৪টার দিকে মাহিনকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কের গোলাপগঞ্জে ট্রাক-মাইক্রোবাসের সংঘর্ষের পর দু'টি গাড়িতেই আগুন লেগে যায়। মাইক্রোবাস ও ট্রাকের ভেতরের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে এই আগুন ধরে। আগুনে পুড়ে মাইক্রোবাসের চালকসহ তিন যাত্রী নিহত হন। আজ বাদ আছর জানাজার নামাজ শেষে নিহতদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

বুধবার দুপুরে নিহত সুনাম ও রাজনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাদের মা, বাবা ও আত্মীয়-স্বজনদের হৃদয় বিদারক আহাজারি। পুরো এলাকাজুড়ে বইছে শোকের বাতাস। তাদের নিহত হওয়ার খবরে বাড়িতে এসে ভীড় করেছেন পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনরা।

নিহত মাইক্রোবাসচালক সুনাম আহমদের পিতা আব্দুল জলিল বলেন, 'সংসারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে বিদেশে না গিয়ে সুনাম মাইক্রোবাস চালাত। আমার ছোট ছেলে নাইম আহমদ অটোরিকশা চালায়। আমার দুই ছেলের রোজগারে আমার পরিবার চলত। সবেমাত্র একটু একটু করে সচ্ছলতা ফিরে আসছিল সংসারে। শুরু হয়েছিল সংসারে উন্নতির পালা। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাল আমার ছেলে সুনাম।'

সিলেট জেলা পুলিশের গোলাপগঞ্জ সার্কেলের এএসপি রাশেদুল হক চৌধুরী বলেন, 'দুর্ঘটনায় মাইক্রোবাসের ভেতরে থাকা চালক-যাত্রীসহ ৩ জন মারা যান। আর সিলিন্ডারের টুকরো ছিটকে পড়ে পাশের বস্তির এক শিশু মারা গেছে। ঘটনাস্থল থেকে একশ ফুট দূরে সিলিন্ডারের টুকরো ছিটকে গিয়ে ওই শিশুটিকে আঘাত করে। নিহতদের লাশ সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং আহতদের একই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।'

 

এসএ/বিএন-০৭/আরআর-০৩