বিশ্বাসঘাতক 'রাজসাক্ষী' বদিকে ভালোবাসে সবাই!

বিনোদন ডেস্ক


ডিসেম্বর ২৬, ২০২০
০৩:০৪ অপরাহ্ন


আপডেট : ডিসেম্বর ২৬, ২০২০
০৩:০৪ অপরাহ্ন



বিশ্বাসঘাতক 'রাজসাক্ষী' বদিকে ভালোবাসে সবাই!

কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের লেখা ‘কোথাও কেউ নেই’ ধারাবাহিক নাটকটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় নাটক। সেই নাটকে ‘বদি’ চরিত্রে অভিনয় করে তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন সদ্যপ্রয়াত অভিনেতা আব্দুল কাদের। সেই আলোচনার মাত্রা এতটাই ছিল যে ‘বাকের ভাইয়ের’ বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষী না দিতে আব্দুল কাদেরের বাড়ির চারপাশে পোস্টার লাগানো হয়েছিল। পোস্টারে লেখা ছিল, ‘বদি তুমি সাক্ষী দিলে, ভাসবে তুমি খালে-বিলে’।

ধারাবাহিকটির মুল চরিত্র বাকের, বদি ও মজনু। তারা তিনজনই মোটর সাইকেলে করে চলাফেরা করতো। অধিকাংশ সময় মোটর সাইকেল চালাতো মজনু, বদি বসতো পিছনে, বাকের ভাই বসতো মাঝে। বাকের ভাইয়ের একটা মুদ্রাদোষ ছিল, সে একটা চেইন হাতের তর্জনিতে অনবরত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে প্যাঁচাতো, আবার উল্টোদিকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে প্যাঁচ খুলে আবার প্যাঁচাতো। সক্রিয় ডায়লগ না থাকলে প্রায়ই তাকে এরকম করতে দেখা যেত। পাড়ার মাস্তান তারা, তবে একটু অন্য কিসিমের। অন্যের উপকার করাই তাদের কাজ। ফলে বেশ শত্রু জুটেছিল, তার মধ্যে ভয়ংকর খারাপ লোকও ছিল। তাদের চক্রান্তে তিনজনেই ফেঁসে গেল খুনের মামলায়।

নাটকটিতে এক প্রভাবশালী নারী তার বাড়িতে কুকুর পালন করতেন বলে বাকের ভাই তাকে কুত্তাওয়ালী বলে ডাকতেন। এরই মধ্যে রাতের অন্ধকারে "কুত্তাওয়ালীর" দারোয়ান তার বাড়িতে খুন হয়। ফাঁসানোর জন্য এই খুনের দায় দেয়া হয় বাকের ভাইকে, সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেয় কুত্তাওয়ালীর সাজানো সাক্ষী এলাকার নব্য ছিনতাইকারী মতি। যদিও পদে পদে মতির মিথ্যা সাক্ষ্য বাকের ভাইয়ের উকিল ধরিয়ে দিচ্ছিলেন আদালতের কাছে, কিন্তু এদিকে বাকের ভাইকে ফাঁসানোর জন্য কুত্তাওয়ালী লোভ দেখিয়ে বাকের ভাইয়েরই সাগরেদ বদিকে হাত করে নেয়। বদি, নিরুপায় হয়ে আদালতে শপথ করে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে বাকের ভাইকে পাকাপোক্তভাবে ফাঁসিয়ে দেয়। আদালত ওই খুনের দায়ে নির্দোষ বাকের ভাইকে মিথ্যা সাক্ষ্যের ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ড দেন। বাকের ভাইয়ের পক্ষে উকিল হিসেবে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হন উকিল।

বদি রাজসাক্ষী হওয়ায় সে সময় দর্শকরা ব্যাপকভাবে ক্ষিপ্ত হয় তার ওপরে। বাকেরের ভাইয়ের ফাঁসির বিরুদ্ধে রাজপথে নেমেছিল মানুষ। তবে কি বদিকে তারা ঘৃণা করতো? না। এটা কোনো দৈব দুর্বিপাক নয়, এখানকার সাধারণ মানুষের সাধারণ ট্র্যাজেডি এমন। দর্শক সেটা জানত বটে!

হ‌ুমায়ূন আহমেদ রচিত ও বরকত উল্লাহ নির্দেশিত এ নাটকের আলোচিত অন্য দুই চরিত্র বাকের ভাই ও মজনু করেছিলেন আসাদুজ্জামান নূর ও লুৎফর রহমান জর্জ। দর্শক আজও তাদের ওই নাটকের চরিত্রেই ডাকে। মাঝে একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরালও হয়। সেখানে দুই যুগের ব্যবধানে এক ফ্রেমে দেখা যায় বাকের, বদি ও মজনুকে।

দর্শকদের প্রিয় সেই বদি আজ শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) না ফেরার দেশে চলে গেছেন। তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন অনেকদিন ধরে। ক্যান্সার জটিল আকারে ছাড়িয়ে পড়েছিল সারা শরীরে। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে তাকে গেল ৮ ডিসেম্বর ভারতের চেন্নাইয়ের ভেলোর শহরের সিএমসি হাসপাতালে নেয়া হয়। তবে তাঁর রক্তের হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ায় কেমোথেরাপি দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেন ভারতের চিকিৎসকরা। পরে তাঁকে দেশে ফিরিয়ে এনে রাজধানীরএভার কেয়ার হাসপালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চলছিল তাঁর চিকিৎসা। অবশেষে সব চিকিৎসার ঊর্ধ্বে চলে গেলেন তিনি। নিভে গেল দারুণ উচ্ছ্বাসে ভরা এক প্রাণ।

আরসি-১৫