নিজস্ব প্রতিবেদক
মার্চ ১৪, ২০২১
০৭:২৯ পূর্বাহ্ন
আপডেট : মার্চ ১৪, ২০২১
০৭:৩৩ পূর্বাহ্ন
শিল্পী- নিয়াজ চৌধুরী তুলি
যেখানেই বসবেন, মশার কামড় খেতেই হবে। বিশেষত গত দুই সপ্তাহ ধরে সিলেট নগরের বাসিন্দাদের এমন অতিষ্ঠ যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে কাটাতে হচ্ছে। তবে মশায় কামড়ালেও ওষুধ ছিটানোর বিষয়ে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ উদাসীন বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। নগরবাসীর দাবি, দিন-রাত সমানতালে মশা কামড়াচ্ছে। অথচ এসব মশা নিধনে নেই কোনো উদ্যোগ।
নগরবাসীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছর এখন পর্যন্ত মশা মারার ওষুধ কেনা হয়নি। ফলে একই সময়ে নগরের ২৭টি ওয়ার্ডে মশা মারার ওষুধ ছিটানো সম্ভব হচ্ছে না। নগরের ৫টি ওয়ার্ডে কেবল গত বছরের মজুদ থাকা ওষুধ ছিটানো হয়েছে। নতুন ওষুধ কেনা হলেই কেবল সবকটি ওয়ার্ডে একসঙ্গে মশক নিধন অভিযান পরিচালিত হবে। সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট শাখা জানিয়েছে, মশা মারার ওষুধ কেনার জন্য গত ৯ মার্চ দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। প্রায় দেড় কোটি টাকার ওষুধ কেনা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
বিগত বছরগুলোতে জানুয়ারি মাসেই দরপত্র আহ্বান শেষে ওষুধ কেনার প্রক্রিয়া সিটি করপোরেশন সম্পন্ন করে থাকে। এবার করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচিতে সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ সম্পৃক্ত থাকায় যথাসময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত এ বিভাগটি ওষুধ কেনার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেনি। ফলে মশায় নাগরিকদের কামড়ালেও চলতি বছর এখন পর্যন্ত সিটি কর্তৃপক্ষ ওষুধ ছিটাতে পারেনি।
নগরবাসী জানিয়েছেন, সিলেটে গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে রাতের বেলা বেশ কয়েকদিন বৃষ্টি হয়েছে। এতে নালা-নর্দমাগুলোতে পানি জমে মশার বংশ বিস্তারের সুযোগ তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে নালা-নর্দমা-ছড়াগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না হওয়ার কারণে মশার উপদ্রব আরও বেড়েছে। তাই নগরে পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি মশা মারার ওষুধ ছিটানোর উদ্যোগ নেওয়ার জন্য নগরের বাসিন্দারা আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, কি দিন, কি রাত-মশার কামড় থেকে রেহাই নেই। অফিস-আদালত, দোকান-কারখানা, বাসা-বাড়ি-কোথাও স্বস্তি পাচ্ছেন না নগরবাসী।
আম্বরখানা এলাকার ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী কবির মিয়া জানান, দিনের বেলাও মশা কামড়াচ্ছে। সন্ধ্যার পর থেকে ফুটপাতে বেচাকেনা করা অসহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে মশার উপদ্রবে। সন্ধ্যা নামলেই মশার রাজত্ব শুরু হয়ে যায়। এত উৎপাত বাড়লেও কাউকে ওষুধ ছিটাতে দেখেননি তিনি। সুবিদবাজার এলাকার স্কুলছাত্রী মাহমুদা আক্তার জানান, মশার কামড়ে ঠিকমতো পড়াশোনা করা যায় না। কয়েল জ্বালিয়েও মশার কামড় থেকে নিস্তার পাওয়া যাচ্ছে না। মশার কামড় খেয়েই তাই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হচ্ছে। পনিটুলা এলাকার গৃহিণী জুঁই শুক্লবৈদ্য বলেন, ‘মশায় কামড়ালেও সিটি করপোরেশনের কোনো হুঁশ নাই। মানুষ যে এত দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন, তারা কী বুঝতে পারছে না?’
নগরের কয়েকজন সচেতন বাসিন্দা জানিয়েছেন, নাগরিকদের পরিপূর্ণ সেবা নিশ্চিতের দায়িত্ব সিটি কর্তৃপক্ষের। অথচ এ বিষয়েই তারা উদাসীন। একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান চলবে নিয়মনীতির ভিত্তিতে। অন্যান্য বছর জানুয়ারি মাসের শুরুতেই মশার ওষুধ কেনা হলেও এবার এর ব্যতয় ঘটেছে। এটি জনগণের প্রতি প্রতিষ্ঠানটির অবহেলার বিষয়টিই নির্দেশ করে। বছরের যে সময়ে মশার ওষুধ ছিটানোর কথা, সে সময়ে মশার ওষুধ কেনাই হয়নি, এটি রীতিমতো অপরাধের পর্যায়ে পড়ে।
সরেজমিনে কয়েকটি এলাকায় দেখা গেছে, নালা-নর্দমায় ময়লা-বর্জ্য ভাসছে। পানি জমে থাকার কারণে মশার লার্ভা ও মশা ভাসতে দেখা যায়। বিভিন্ন জায়গায় ময়লা-আবর্জনা জমে মশার প্রজননকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় মশারি, কয়েল, স্প্রে ও মশা মারার ব্যাট বিক্রির পরিমাণ বেড়ে গেছে।
সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের মজুদ থাকা ওষুধ নগরের ৫টি ওয়ার্ডে ছিটানো হচ্ছে। বর্তমানে মজুদ ওষুধের মধ্যে অ্যাডাল্টিসাইড (উড়ন্ত বা পূর্ণবয়স্ক মশা মারার ওষুধ) রয়েছে ২ হাজার ২০০ লিটার এবং লার্ভিসাইড রয়েছে ৪৫০ লিটার। এসব ওষুধ শেষ হলে তাৎক্ষণিক ওষুধ কিনে ছিটানো হবে। তবে এরই মধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। দ্রুতই এ প্রক্রিয়া শেষে ওষুধ কিনে নগরের প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে ছিটানো হবে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম সিলেট মিররকে বলেন, ‘মজুত থাকা ওষুধ এখন ছিটানো হচ্ছে। তবে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। নতুন ওষুধ কেনা শেষে নগরজুড়ে মশক নিধন অভিযান পরিচালিত হবে।’
এএন/আরসি-০১