সিলেট মিরর ডেস্ক
মার্চ ২১, ২০২১
০৩:২৩ পূর্বাহ্ন
আপডেট : মার্চ ২১, ২০২১
০৩:২৩ পূর্বাহ্ন
‘সাজানো মামলায়’ গ্রেপ্তার ছেলের মুক্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নগরের জিন্দাবাজারের এমএস ইলেক্ট্রনিক্স সেন্টারের স্বত্তাধিকারী মো. আব্দুল গফুর। শনিবার সিলেট প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন তিনি এই দাবি করেন।
এসময় তিনি গত ১৩ মার্চ বিকেলে নগরের বন্দর বাজারের রংমহল টাওয়ারের সামন থেকে তার ছেলে এবাদুল্লাহ আল সাহাদকে অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায় করেও মুক্তি না দিয়ে পরে ইয়াবা দিয়ে সাজানো মামলায় পুলিশে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন। এজন্য তিনি ছেলের মুক্তি এবং তদন্ত সাপেক্ষে মামলা প্রত্যাহার করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ২০০৭ সালে তিনি ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু শুরু থেকেই তার ব্যবসা লাভজনক হওয়ার কারণে ইর্ষান্বিত হয়ে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি শুরু করেন এখানকার মোহাম্মদ আনিস ও তার সহযোগীরা। একপর্যায়ে ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তাকে জোরপূর্বক মার্কেট থেকে উচ্ছেদও করেন তারা। এরপর তিনি আরমানুল্লাহ বিল্ডিংয়ের অন্য তিনটি দোকান ক্রয় করে সেখানে ব্যবসা শুরু করেন। এরপর ওই চক্রটি আরও রেপরোয়া হয়ে উঠে। নানাভাবে আর্থিক, সামাজিকভাবে তার ক্ষতি করতে ষড়যন্ত্র শুরু করে তারা।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সিটি মেয়রের অনুমতি নিয়ে দোকানের উপরে টিনের চালা দিয়ে একটি গোদাম ঘর নির্মাণ করেন তিনি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওই চক্রের সদস্য আবাদ হোসেনকে (৪০) দিয়ে তার বিরুদ্ধে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে একটি বিবিধ মামলা করানো হয়। একই কায়দায় উর্ধতন সহকারী জজ সদর আদালতেও ২৮৬/২০২১ নং স্বত্ব মামলা করানো হয়। এরপরই গত ১৩ মার্চ তার ছেলেকে অপহরণের পর সাজানো ইয়াবা মামলা দিয়ে জেলে দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘তার ছেলেকে মোবাইল ফোনে কল করে বলা হয়- আমি দেড় থেকে ২ লক্ষ টাকার মাইক ও সাউন্ড সিস্টেম মালামাল কিনবো। এই মালামাল বিক্রির আশায় তিনি ফোনকারীর কথামতো রংমহল টাওয়ারের সামনে গেলে তাকে ‘ফিল্মী স্টাইলে’ একদল যুবক মারধর শুরু করে। এসময় তারা তার কাছ থেকে মোবাইল ফোনও ছিনিয়ে নেয়। ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজে রেকর্ড রয়েছে। তখন প্রতিপক্ষ আদনানের ফোন পেয়ে তিনি সেখানে ছুটে যান। তখন তাকে বলা হয়, তার ছেলেকে অজ্ঞাতনামা একদল যুবক অপহরণ করে নিয়ে গেছে।’
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এরপর তিনি কোতোয়ালি পুলিশকে অবহিত করলে থানা ও গোয়েন্দা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং ছেলেকে উদ্ধারে তৎপরতা চালায়। এর কিছুক্ষণ পরই অপহরণকারীরা তার ছেলের মোবাইল ফোনে কল দিয়ে দোকানের ম্যানেজার শাহীনের কাছে একলাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। ফোনকারীদের কথামতো ম্যানেজার মধুবন সুপার মার্কেটের সামনে এই একলাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে আসলেও তারা তাকে ফেরত না দিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বিভাগীয় গোয়েন্দা শাখার এসআই মোহাম্মদ মোস্তফা কামালের মাধ্যমে ইয়াবা দিয়ে মাদক মামলা সাজিয়ে রাতে থানায় হস্তান্তর করে। এরপর থেকে তার ছেলে জেলে আছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের এ ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহের জন্য ষড়যন্ত্রকারীরা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে মামলা করিয়ে থানায় সোপর্দ করেছে। অথচ অপহরণকালীন ধারনকৃত সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে শাহাদের হাতে কোন ইয়াবা ট্যাবলেট ছিল না। এসময় সাহাদের ডান হাতে মোবাইল ফোন যা কানে লাগানো এবং বাম হাত খালি ছিল। মূলত, জোনাগড়ী নুর মোহাম্মদ আদনান ও মো. আনিসদের সঙ্গে ব্যবসায়িক বিরোধের জের ধরেই শাহাদকে মামলা দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, এই চক্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ আরও রয়েছে। গত ১৪ মার্চ আবাদ, ইরফাদ, ইমদাদ, নূর মো. আদনান ও মো. আনিস এবং তাদের সহযোগীরা বেআইনী অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা করে ব্যাপক ভাংচুর করে এবং ৩ লাখ ২০ হাজার টাকার মালামাল লুটে নেয়। এ ঘটনায় তিনি মামলা দায়ের করেছেন। তবে মামলা দায়েরের পর ওই চক্রের পক্ষ থেকে তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা, অপহরণ ও গুম করার প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে আসছে। এ কারণে তিনি ও তার স্বজনরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছেন বলেও জানান তিনি।
পাশাপাশি তিনি অপহরণ ও মামলা নাটকের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।
বিএ-০৫