সিলেট মিরর ডেস্ক
মার্চ ২৫, ২০২১
০৬:২১ পূর্বাহ্ন
আপডেট : মার্চ ২৫, ২০২১
০৬:২১ পূর্বাহ্ন
গাছ হত্যার প্রতিবাদে সিলেটে ‘শোকসভা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার সকালে সিলেট নগরের উপকণ্ঠ খাদিমনগরে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), আদিবাসী অধিকার বিষয়ক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কাপেং ফাউন্ডেশন ও খাসিয়াপুঞ্জির অধিকার আদায়ে কাজ করা কুবরাজ আন্তঃপুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠন বড়লেখার খাসিয়াপুঞ্জিতে গাছকাটার প্রতিবাদে ব্যতিক্রমধর্মী এই শোকসভা আয়োজন করে।
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের আগার খাসিয়াপুঞ্জিতে সম্প্রতি দুটি গাছ কেটে ও আরও প্রায় ২৫টি গাছ কাটার প্রস্তুতির প্রতিবাদ জানাতে এই শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী আয়োজিত শোকসভায় উপস্থিত সবাই গাছ ‘হত্যা’র প্রতিবাদে কালোব্যাজ ধারণ করেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য আব্দুল করিম কিমের সভাপতিত্বে এই শোকসভায় সিলেট বিভাগের বিভিন্ন এলাকার আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। এতে বক্তব্য দেন, কুবরাজ আন্তঃপুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠন-এর সাধারণ সম্পাদক ফ্লোরা বাবলি তালাং, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কাপেং ফাউন্ডেশনের প্রকল্প পরিচালক উজ্জ্বল আজিম, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, সিলেট শাখার সভাপতি গৌরাঙ্গ পাত্র, বৃহত্তর সিলেট ত্রিপুরা উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি জনক দেববর্মন, বৃহত্তর খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের ফিলা পুমী, আদিবাসী উন্নয়ন সংস্থা হবিগঞ্জের সভাপতি স্বপন কুমার সাঁওতাল, সভাপতি খাসি পেনরয় সমাজ কল্যাণ সমিতি গোয়াইনঘাটের সভাপতি ওয়েলকাম লম্বা, বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরামের সদস্য সাজু মারচিয়াং।
এছাড়া বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর তরুণ প্রতিনিধির মধ্যে খাসিয়া থেকে লিসডামন খংজং, গারো থেকে পুর্নিকা স্নাল, হাজং থেকে শিবানন্দ হাজং, বানাই থেকে ধুবুরাজ বানাই, পাত্র জনগোষ্ঠীর সুমেলা পাত্র, চা জনগোষ্ঠী থেকে সোহাগ ছত্রী, মঞ্জু কুর্মী, দীপা গড়াইণ ও আকাশী খাড়িয়া প্রমুখ বক্তব্য দেন।
শোকসভা থেকে বৃক্ষ, বনাঞ্চল ও আদিবাসীদের ঐতিহ্যগত অধিকার সংরক্ষণে বন আইন যুগোপযোগী করার দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি চা-বাগান কর্তৃপক্ষের জমিদারী মনোভাব সংশোধন করে স্থানীয় বনজীবি জনগোষ্ঠীর সাথে মানবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানানো হয়।
শোকসভায় আব্দুল করিম কিম বলেন, ‘বনাঞ্চল হোক, চা-বাগান হোক, নগর হোক, রাজধানী হোক- কোথাও গাছ রক্ষার চেষ্টা নেই। পরিবেশবাদীরা সবুজ আচ্ছাদন রক্ষার জন্য নানাভাবে আন্দোলন সংগ্রাম করে গেলেও কর্তৃপক্ষের কার্যকর কোন ভূমিকা নেই। বরং উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের দোহাই দিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো দেদারসে বৃক্ষনিধন করে।’
তিনি বলেন, ‘গত ১৯ শে মার্চ আগার খাসিয়াপুঞ্জিতে অহেতুক দুটি চাপালিশ গাছ কাটা ও আরও কিছু গাছ কাটার উদ্যোগে স্থানীয় বনজিবী পুঞ্জিবাসীরা শোকাহত হয়েছেন। পুঞ্জির খাসিয়ারা গাছকে সন্তানের মতো ভালোবাসে। গাছের যত্ন নেয়, পরিচর্যা করে। এসব গাছ বেয়ে পানগাছগুলো লতিয়ে উঠে। যা খাসিয়াদের কাছে পানেরজুম বলে পরিচিত। জুমের গাছগুলো তাদের জীবন জীবিকা রক্ষায় অপরিসীম ভূমিকা রাখে। তাই একটি গাছের মৃত্যুতে ওরা সন্তান হারানোর শোক অনুভব করে।’
উজ্জ্বল আজিম বলেন, ‘বাংলাদেশের বন ও পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রীর বাড়ি বড়লেখায়। সেই এলাকায় গাছ হত্যার ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। যদিও সিলেট বিভাগের অনেক চা-বাগানে দেদারসে গাছকাটা হচ্ছে। পাশাপাশি সাবাড় করা হচ্ছে বনজ সম্পদ। বনে বা চা-বাগানে বৃক্ষকর্তনের খবর অধিকাংশ ক্ষেত্রে গোপন থাকে। তবে চা-বাগানের ভেতরে থাকা বা বনের পাশে থাকা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কারণে নির্বিচারে গাছ কাটার খবর ঠিকই বাইরে আসে। আগারপুঞ্জির খাসিয়াদের কারণে চাপালিশ, জাম, কাঁঠাল, আওয়াল, গুঁতগুঁতি, হরীতকী, বহেড়াসহ প্রায় ২৫টি বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় গাছ আপাতত বেঁচে গেলো।’
আরসি-০৩
