ফারহান মাসউদ আফছর, গোলাপগঞ্জ
মার্চ ২৫, ২০২১
১১:১৫ অপরাহ্ন
আপডেট : মার্চ ২৭, ২০২১
০১:০২ পূর্বাহ্ন
সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ ঢাকাদক্ষিণ-সুনামপুর সড়কে দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব হতে যাচ্ছে। চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কটি সংস্কারের পাশাপাশি চলছে প্রশস্তকরণ কার্যক্রম। সড়কটি টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী করতে অধিক ভঙ্গুর অংশে দেওয়া হচ্ছে আরসিসি ঢালাই। ইতোমধ্যে সাড়ে ১০ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারিত উন্নয়নকাজের প্রায় ২০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী আগস্ট মাসের মধ্যেই পুরো কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ঢাকাদক্ষিণ বাইপাস-চন্দরপুর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার সড়কটি ১০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে । সড়কটি টেকসই এবং দীর্ঘস্থায়ী করতে এবার সড়কের ভঙ্গুর অংশ এবং যেসব অংশে পানি জমে যায়, সেসব অংশে আরসিসি ঢালাই দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া গাড়ি চলাচল সুগম করতে সড়কটি প্রশস্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ১২ ফুট প্রস্থের সড়কটি এখন প্রশস্ত করে চওড়ায় ১৮ ফুট করা হচ্ছে। এখন সড়কটি দিয়ে পাশাপাশি দু'টি গাড়ি অনায়াসে যেতে পারবে বলে জানিয়েছেন তারা।
উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক সংস্কারের জন্য দীর্ঘদিন থেকে দাবি জানিয়ে আসছিলেন স্থানীয় জনসাধারণ। সড়কটি সংস্কার হচ্ছে দেখে তাই উৎফুল্ল স্থানীয়রা।
জানা যায়, উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ ঢাকাদক্ষিণ বাইপাস-চন্দরপুর সড়ক উপজেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। গোলাপগঞ্জ উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ, বুধবারীবাজার, বাদেপাশা ও শরিফগঞ্জ ইউনিয়নের মানুষের যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম এ সড়ক। শুধু গোলাপগঞ্জ উপজেলারই নয়, পার্শ্ববর্তী বিয়ানীবাজার ও বড়লেখা উপজেলার মানুষের যাতায়াতের অন্যতম সড়ক ঢাকাদক্ষিণ-চন্দরপুর সড়ক।
উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ-চন্দরপুর প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার সড়কটি দীর্ঘদিন থেকে ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় পড়ে ছিল। পিচের খোয়া উঠে গিয়ে বড় বড় গর্ত হওয়া চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কটি উপজেলার মানুষের কাছে 'দুর্ভোগের সড়ক' বলে পরিচিতি পেয়েছিল। পুরো সড়কে ছোট-বড় গর্তে যান চলাচল কঠিন হয়ে যায়। মানুষ একবার এ সড়ক দিয়ে গেলে দ্বিতীয়বার যাওয়ার কথা কল্পনায়ও আনতেন না বলে জানান অনেকে। সড়কটির উন্নয়নকাজ সম্পন্ন হলে গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, বড়লেখাসহ সংলগ্ন এলাকার মানুষ সহজেই কম সময়ে নিরাপদে গন্তব্য পৌঁছাতে পারবেন বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।
চন্দরপুর এলাকার কবির আহমদ বলেন, 'সড়কটি বেহাল হওয়ার কারণে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। একদিকে ধুলাবালি, অন্যদিকে সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তা কাদা–পানিতে একাকার হয়ে যায়। বর্ষায় বড় বড় গর্ত পানিতে পূর্ণ হয়ে গেলে এসব গর্তে অনেক সময় গাড়ি আটকা পড়ত। সড়কটির কারণে এলাকাবাসী চরম বিপদে রয়েছেন। কৃষিপণ্য বাজারে নিয়ে যেতে বা জরুরি প্রয়োজনে যেতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের।'
চন্দরপুর সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকদের কার্যালয়ের সভাপতি রুহেল আহমদ বলেন, 'সড়কটির অবস্থা এতই খারাপ যে গাড়ি চালাতে চরম বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। সড়কে বড় বড় গর্তে পড়ে যাত্রীদের যাতায়াতে মারাত্মক অসুবিধা হচ্ছে, গাড়িরও ক্ষতি হয়। আমরা অনেকসময় গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হই না। রাস্তাটির অবস্থা খারাপ হওয়ায় যাত্রীরাও চলাচল না করার কারণে আমাদের আয় কমে গেছে।'
চন্দরপুর এলাকার শিক্ষক জয়নাল আবেদীন বলেন, 'রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় নারী ও বৃদ্ধ রোগীদের নিয়ে চলাচলে সীমাহীন কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। রাস্তাটির উন্নয়নকাজ দ্রুত শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।'
আরেক শিক্ষক আব্দুল জলিল বলেন, 'এ অঞ্চলের যোগাযোগের অন্যতম প্রধান সড়ক ঢাকাদক্ষিণ-সুনামপুর সড়ক। সড়কটি দিয়ে গোলাপগঞ্জের ৪টি ইউনিয়নসহ বিয়ানীবাজার ও বড়লেখা উপজেলার মানুষ যাতায়াত করে থাকেন। সড়কটি দীর্ঘদিন থেকে ভাঙা থাকায় তিন উপজেলার হাজার হাজার মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সংস্কারকাজ শুরু হওয়ায় সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হতে যাচ্ছে। এজন্য সরকারকে আমি আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।'
সড়কটির উন্নয়নকাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে জানিয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান বলেন, 'উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ-সুনামপুর সড়কটির উন্নয়নকাজ মানসম্মতভাবে এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে ২০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী আগস্টের মধ্যেই কাজটি সমাপ্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সড়কটি ১৮ ফুট প্রশস্ত করা হচ্ছে ও জলাবদ্ধতাপূর্ণ বেশ কয়েকটি অংশে আরসিসি ঢালাই দেওয়া হচ্ছে। ফলে সড়কটি অনেক বেশি টেকসই ও যাতায়াত আরামদায়ক হবে।'
এফএম/আরআর-০২