নিজস্ব প্রতিবেদক
মার্চ ২৯, ২০২১
০৭:৫০ অপরাহ্ন
আপডেট : মার্চ ২৯, ২০২১
০৭:৫০ অপরাহ্ন
নগরের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশি নির্যাতনে রায়হান আহমদ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) প্রস্তুত করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। আগামী বুধবারের (৩১ মার্চ) মধ্যে যেকোনো দিন অভিযোগপত্রটি সংশ্লিষ্ট আদালতে জমা দেওয়া হবে।
পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ খালেদ-উজ-জামান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, রায়হান হত্যা মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) প্রস্তুত করা হয়েছে। আগামী বুধবারের (৩১ মার্চ) মধ্যে যেকোনো দিন অভিযোগপত্রটি সংশ্লিষ্ট আদালতে জমা দেওয়া হবে।
চার্জশিট দাখিলের আগে সংবাদ সম্মেলন করে পুরো তদন্ত কার্যক্রম ও আসামিদের বিষয়ে অবগত করা হবে বলেও জানান তিনি।
অভিযোগপত্রে কাদেরকে বা কতজনকে আসামি করা হচ্ছে এব্যাপারে মুহাম্মদ খালেদ-উজ-জামান কিছু জানাতে চাননি। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ (বরখাস্ত) উপ-পরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূইয়া, বরখাস্ত হওয়া টুআইসি উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাসান আলীসহ পাঁচ পুলিশ সদস্য ও একজন গণমাধ্যমকর্মীকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট প্রস্তুত করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, রায়হান আহমদ হত্যা মামলার তদন্তের সময় বর্ধিত করার জন্য গত ১০ ফেব্রুয়ারি সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর বিচারিক হাকিম মো. আব্দুল মুমিনের আদালতে আবেদন করে পিবিআই। ১৪ ফেব্রুয়ারি আবেদনের শুনানির পর আদালত ৩০ কার্যদিবস সময় বৃদ্ধি করেন। এরপর তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ পিবিআই কর্মকর্তারা রায়হান হত্যা মামলার সব তথ্য-প্রমাণ পর্যালোচনা করে অভিযোগপত্র চূড়ান্ত করার কাজ শুরু করেন।
সূত্র আরও জানায়, ইতোমধ্যে অভিযোগপত্রটি চূড়ান্ত করা হয়ে গেছে। এখন আইনি কোনো ফাঁকফোকড় রয়ে গেছে কি-না তা খতিয়ে দেখছেন তারা। আগামী বুধবারের মধ্যে যেকোনো দিন আদালতে এই অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হবে।
রায়হান হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর বন্দরবাজার ফাঁড়ির ছয় পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। অভিযুক্ত ছয়জন এখন কারাগারে রয়েছেন। তারা হলেন- বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির তৎকালীন ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূইয়া, টুআইসি উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাসান আলী, এএসআই আশেকে এলাহী, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, কনস্টেবল তৌহিদ মিয়া ও কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাস।
অভিযোগপত্রে এই ছয়জনকে আসামি করা হবে কি-না তা স্পষ্ট করেননি পিবিআইয়ের এসপি খালেদ উজ জামান। রায়হান হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ ফাঁড়ির সিসি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক পরিবর্তন ও প্রধান অভিযুক্ত এসআই আকবর হোসেন ভূইয়াকে পালাতে সহায়তাকারী কোম্পানীগঞ্জের গণমাধ্যমকর্মী আবদুল্লাহ আল নোমানকে আসামি করা হবে কি-না এ বিষয়টিও এখনো পরিষ্কার নয়।
প্রসঙ্গত, নগরের আখালিয়ার নেহারীপাড়া এলাকার বাসিন্দা রায়হান আহমদকে গত বছরের ১১ অক্টোবর দিবাগত মধ্যরাতে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে ধরে নিয়ে যায় পুলিশের একটি দল। এরপর টাকার দাবিতে তাকের রাতভর ফাঁড়িতে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়।
সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে দিকে তাকে এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে রায়হান হাসপাতালে মারা যান। এ ঘটনায় রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি বাদী হয়ে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানায় হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে অজ্ঞাত পুলিশ সদস্যদের আসামি করে মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহারে তান্নি উল্লেখ করেন, ১০ অক্টোবর শনিবার বিকেল ৩টার দিকে তার স্বামী রায়হান আহমদ কর্মস্থল নগরের স্টেডিয়াম মার্কেটস্থ ডা. গোলাম কিবরিয়া ও ডা. শান্তা রাণীর চেম্বারে যান।
পরদিন ১১ অক্টোবর ভোর ৪টা ৩৩ মিনিটে তার শাশুড়ির (রায়হানের মা সালমা বেগম) মোবাইল ফোনে একটি নম্বর থেকে কল দেয়া হয়। ফোন রিসিভ করেন রায়হানের চাচা (সৎ বাবা) হাবিবুল্লাহ।
ফোনে রায়হান আর্তনাদ করে রায়হান জানান, তিনি বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে আছেন এবং তাকে বাঁচাতে ১০ হাজার টাকা নিয়ে ফাঁড়িতে যেতে বলেন। এরপর হাবিবুল্লাহ ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে রায়হান কোথায় জানতে চাইলে দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্য বলেন, সে ঘুমিয়ে গেছে। আর যে পুলিশ রায়হানকে ধরেছে, তিনিও চলে গেছেন। এরপর তাকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ফাঁড়িতে আসতে বলেন ওই পুলিশ সদস্য।
হাবিুল্লাহ সকাল পৌনে ১০টার দিকে আবার ফাঁড়িতে গেলে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য জানান, রায়হান অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে রায়হানের চাচা ওসমানী হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারেন, রায়হানকে সকাল ৬ টা ৪০ মিনিটে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে তিনি মারা যান। মর্গে হাবিবুল্লাহসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনরা গিয়ে রায়হানের লাশ দেখতে পান।
এজাহারে তান্নি বলেন, ‘আমার স্বামীকে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে নিয়ে গিয়ে পুলিশি হেফাজতে রেখে হাত-পায়ে উপর্যুপরি আঘাত করা এবং হাতের নখ উপড়ে ফেলা হয়েছে। পুলিশ ফাঁড়িতে রাতভর নির্যাতনের ফলে আমার স্বামী মারা গেছে।’
এদিকে সুরতহাল রিপোর্টেও নখে আঘাত, ডান হাতে ও ডান পায়ে আঘাতের উল্লেখ ছিল।
বিএ-০২