শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বেড়েছে বাল্যবিবাহ

কবির আহমদ, কোম্পানীগঞ্জ


এপ্রিল ২৬, ২০২১
০২:৩৯ পূর্বাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ২৬, ২০২১
০২:৪১ পূর্বাহ্ন



শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বেড়েছে বাল্যবিবাহ

প্রতীকী ছবি

পৃথিবীজুড়ে চলছে করোনাভাইরাসের হত্যাযজ্ঞ। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অনেকটা গৃহবন্দি মানুষ। বাংলাদেশে লকডাউনে গরিব-দুঃখী খেটে খাওয়া মানুষের অভাব-অনটনও চরমভাবে বেড়ে গেছে। দিন আনে দিন খায় শ্রেণির অনেক মানুষের কাজ-কর্ম বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক পরিবারে এক সঙ্গে অবস্থান করছে বহু সদস্য। ফলে খাওয়া-পড়ার খরচও বেড়ে গেছে। কিছু পরিবারের মেয়েশিশুরা নিকট আত্মীয়-স্বজন আর অন্যদের দ্বারা শিকার হচ্ছে যৌন হয়রানিরও।

স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে অনেক পরিবারের উঠতি বয়সী মেয়েদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন পিতা-মাতা। অনিশ্চয়তা ও হতাশায় আচ্ছন্ন হয়ে চিন্তা করছেন এখনই বুঝি বিয়ে দেওয়ার উপযুক্ত সময়। একটি শিক্ষাবর্ষের সময় যখন বিলীন হয়ে গেছে, তখন অভিভাবকগণ উঠে-পড়ে লেগেছেন কন্যাদান করতে। খরচ বাঁচাতে পরিবারের সদস্য সংখ্যা কমাতে চাইছেন তারা। করোনার সময়ে বিদেশ থেকে আসা শ্রমিক পর্যায়ের ছেলেরা পাত্র হিসেবে অনেকেরই পছন্দ তথা তালিকার শীর্ষে। এছাড়া গ্রামে পুরুষদের অল্প বয়সে বিয়ের প্রবণতাও আগের চেয়ে বেড়েছে।

করোনার এই ভয়াবহ সময়ে যখন জীবন-জীবিকা বিপন্ন, ঠিক তখনই বাল্যবিবাহ বেড়ে গেছে। এই সময়ে বিয়ে দিলে কম মানুষকে আপ্যায়ন করতে হবে, খরচও কম পড়বে- এমন ধারণা থেকেও তড়িঘড়ি চলছে বিয়ের কাজ। শহরের চেয়ে গ্রামে এ হার বেশি। আবার শিক্ষিত পরিবারের চেয়ে তুলনামূলক কম শিক্ষিত পরিবারে এই সময়ে বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। মাধ্যমিক স্তরের মেয়েরা (১৩-১৬ বছর বয়সী) বাল্যবিবাহের শিকার হচ্ছে বেশি। কোনোরূপ সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি না মেনে অল্প পরিসরে চলছে বিয়ের কাজ।

প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ক্লাস করে না। তারা অবাধে বিচরণ করছে, অলস জীবনযাপন করছে, সামাজিক দূরত্বও মানছে না। মূলত অসচেতনতা, নারীশিক্ষার অভাব, সামাজিক কুসংস্কার, অনিশ্চিত করোনা পরবর্তী ভবিষ্যৎ এবং দারিদ্রতা এই সময়ে বাল্যবিবাহ বৃদ্ধির প্রধান কারণ। কিছু ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন সনদের সংশোধনের মাধ্যমে বয়সের হেরফের করে কন্যাশিশুকে বিয়ের বয়স 'উপযোগী' করা হয়। লকডাউনে পরিবারের পিতা বা ভাইয়ের উপার্জন সীমিত হয়ে পড়ায় তারা এখনই কন্যা বা বোনের বিয়ে দিয়ে দেওয়ার পক্ষপাতি। তাছাড়া স্থানীয় মেম্বার-চেয়ারম্যান এ বিষয়ে পূর্বের তুলনায় কম তৎপর। ফলস্বরূপ বাল্যবিবাহ বেড়েই চলেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকার সুযোগে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে এই সময়ে প্রায় অর্ধশতাধিক বাল্যবিবাহ অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

এ অবস্থা চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়বে, উচ্চশিক্ষিত নারীর সংখ্যা কমবে, সুশিক্ষিত মায়ের সংখ্যা কমবে, অল্পবয়সী ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভবতী নারীর সংখ্যা বাড়বে, অপ্রাপ্তবয়স্ক প্রসূতি মায়ের কারণে জন্ম নেবে রোগা শিশুরা। নতুন জন্মানো শিশু অপুষ্টিতে ভুগবে। মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার বাড়বে। ছোঁয়াচে রোগের মতো সমাজে ছড়িয়ে পড়বে নানা অসংগতি।

কোম্পানীগঞ্জের ১ নম্বর ইসলামপুর পশ্চিম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন বলেন, 'আমাদের পাশাপাশি সমাজের সচেতন মহলের উচিত বাল্যবিবাহ রোধে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। সমাজের বিজ্ঞ, শিক্ষিতরাও এ বিষয়ে সাবধানতা প্রদর্শন করতে পারেন। সচেতন ও শিক্ষিত মেয়েরা নিজেরাই নিজেদের বিয়ে বন্ধ করতে পারে। বাংলাদেশে ন্যাশনাল হেল্প লাইন ১০৯ চালু আছে। এই সংখ্যাটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের সকল বইয়ের পেছনে প্রিন্ট করে দেওয়া আছে, যেন কোথাও বাল্যবিবাহ ও নারী নির্যাতন সংঘটিত হলে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে জানানো যায় এবং ব্যবস্থা নেওয়া যায়।' 

এ ব্যাপারে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) মজিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, 'পুলিশের কাছে যখনই খবর আসে বাল্যবিবাহের, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যে কোনো মূল্যে বাল্যবিবাহ বন্ধ করে দেই এবং প্রয়োজনে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করি।'

 

এমকে/আরআর-০১