ফারহান মাসউদ আফছর, গোলাপগঞ্জ
এপ্রিল ২৯, ২০২১
০২:১৯ পূর্বাহ্ন
আপডেট : এপ্রিল ২৯, ২০২১
০২:৩৪ পূর্বাহ্ন
সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার হাওরের বোরো ধানের মাঠে মাঠে এখন বোরো ধান কাটা আর ঘরে তোলার উৎসব চলছে। বাড়ির ছোট-বড়, নারী-পুরুষ সবাই এখন ধান তুলতে ব্যস্ত। দ্রুত ধান তুলতে দিন-রাত কাজ করে যচ্ছেন তারা। এতটুকু বিশ্রাম নেই কারও। সরকার আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ করায় এবার অনেক দ্রুত ও ঝামেলামুক্তভাবে ধান তোলা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন অনেক কৃষক। ইতোমধ্যে হাওরের ৮০ শতাংশ এবং সমতলের প্রায় ৫০ শতাংশ ধান কাটা হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি অফিস।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর উপজেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭ হাজার ১৫০ হেক্টর। তবে বোরো আবাদ হয়েছে ৭ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০ হেক্টর বেশি। এছাড়া এ বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২৬ হাজার ৪৫৫ মেট্রিক টন। ফলন ভালো হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও উৎপাদন বেশি হওয়ার আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা জানান, ইতোমধ্যে মোট বোরো ধানের প্রায় ৬০ শতাংশ কাটা হয়ে গেছে। আগামী কিছুদিনের মধ্যেই সব ধান তোলা সম্পন্ন হবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেছেন।
জানা যায়, উপজেলার শরিফগঞ্জ ও বাদেপাশা ইউনিয়ন সংলগ্ন হাকালুকি হাওর, লক্ষনাবন্দ, ভাদেশ্বর ও লক্ষীপাশা ইউনিয়নের অন্তর্গত ধামড়ি হাওর এবং বাঘা ইউনিয়নের বাঘা হাওর ও আশপাশের এলাকায় সবচেয়ে বেশি বোরো ধান উৎপাদিত হয়েছে। এছাড়া আমুড়া ইউনিয়নের এরাল বিল ও চাপরা বিল এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে বোরো ধানের আবাদ হয়ে থাকে। এবার আগাম বন্যা না হওয়ায় এবং বড় ধরনের ঝড়-বৃষ্টি না হওয়ায় ভালো ধান হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। এবার ধানের ভালো দাম পাওয়ারও আশা করছেন তারা।
দ্রুত ধান তোলার কাজ করতে পেরে উৎফুল্ল উপজেলার বাঘা ইউনিয়নের বাঘা হাওর এলাকার কৃষক সায়েদ আহমদ ও দেলোয়ার হোসেন জানান, এবার ধান ভালো হয়েছে। যদিও প্রথমদিকে পানি সেচের কিছুটা সমস্যা ছিল এবং কিছুদিন আগের শিলাবৃষ্টিতে কিছুটা ক্ষতি হয়েছিল। তবে কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে দ্রুত ও ঝামেলামুক্তভাবে ধানা কাটা সম্ভব হচ্ছে। কৃষি যন্ত্রপাতি ও বীজ-সার দিয়ে সরকারি সহায়তার জন্য তারা সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান। তারা বলেন, এ বছর তারা জিংক সমৃদ্ধ ৮৪, এসএল, ২৯ ও ২৮ জাতের ধান চাষ করেছেন। এবার ধান বিক্রির সময় ভালো দাম পাবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন তারা।
হাকালুকি হাওরের কৃষক ও সাবেক ইউপি সদস্য ইসমাইল হোসেন জানান, তাদের হাওরের প্রায় ৮০ ভাগ ধান তোলা হয়ে গেছে। তারা এখন খড় শুকিয়ে সংগ্রহ করার কাজ করছেন। এ বছর ফলন ভালো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, 'ধান ভালো হলেও নদী শুকিয়ে যাওয়ায় হাওর থেকে ধান আনতে প্রচন্ড বেগ পেতে হচ্ছে।'
কৃষকরা যাতে তাদের সব ধান ঘরে তুলতে পারেন, সেজন্য তাদের উপজেলা কৃষি অফিস সর্বক্ষণ সহযোগিতা করে যাচ্ছে জানিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান বলেন, 'উপজেলা কৃষি অফিস সার্বক্ষণিক কৃষকদের পাশে রয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে তাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।' এবার কৃষকরা সম্পূর্ণ ধান ঘরে তুলতে পারবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
উপজেলা প্রশাসন বোরো ধান তোলার বিষয়টি সবসময় মনিটরিং করছে জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. গোলাম কবির জানান, তিনি গত রবিবার মাঠে গিয়ে কৃষকদের ধান তোলার বিষয়টি সরেজমিনে দেখে এসেছেন। উপজেলা কৃষি অফিস এ বিষয়ে কাজ করছে। সরকার ৭০ শতাংশ ভর্তুকিতে কৃষি যন্ত্রপাতি দেওয়ায় কৃষকরা সহজেই ধান কাটছেন। যদি কৃষকদের কোনো প্রয়োজন হয়, উপজেলা প্রশাসন সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে বলে জানান তিনি।
এফএম/আরআর-০১