নাবিল হোসেন
মে ০৪, ২০২১
০১:২৮ পূর্বাহ্ন
আপডেট : মে ০৪, ২০২১
০২:০১ পূর্বাহ্ন
সিলেট জেলায় এপ্রিল মাসে ২ হাজার ৪৬৮ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এই সময়ে করোনায় আক্রান্ত ৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর জেলায় এটিই একমাসে সর্বোচ্চ মৃত্যু ও শনাক্তের রেকর্ড। এছাড়া গত মার্চ থেকে এপ্রিলে শনাক্ত বেড়েছে প্রায় আড়াইগুণ। আর মৃত্যু বেড়েছে ৬ গুণ। তবে মাসের শেষ দিকে এসে শনাক্তের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। যদিও বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী বিভাগের চার জেলার মধ্যে শনাক্ত ও মৃত্যু দুটোতেই সিলেট জেলা শীর্ষে রয়েছে। বিভাগে করোনায় মারা যায় ৬৩ দশমিক ৭১ শতাংশই সিলেট জেলার বাসিন্দা। একইভাবে বিভাগের মোট আক্রান্তের ৬৪ দশমিক ১৩ শতাংশ সিলেট জেলার। সিলেট বিভাগে মৃত্যু হার ১ দশমিক ৬৯ শতাংশ হলেও সিলেট জেলায় করোনায় মৃত্যুর হার ২ দশমিক শূণ্য ৮ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৫ এপ্রিল সিলেট জেলায় প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়। প্রথম মৃত্যু হয় ১৫ এপ্রিল। এরপর এ বছরের এপ্রিলে একমাসে সর্বোচ্চ শনাক্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। গত বছরের এপ্রিলে শনাক্ত হয় ১৮ জন, মৃত্যু হয় ১ জনের। মে মাসে শনাক্ত হয় ৫৩৭ জনের, মৃত্যু হয় ১৪ জনের। জুনে শনাক্ত হয় ১ হাজার ৯৯৫ জনের, মৃত্যু হয় ৪৭ জনের। গত এপ্রিলের আগে এক মার্সে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড ছিল এটি। গত বছরের জুলাই মাসে শনাক্ত হয় ১ হাজার ৭০৪ জনের, মৃত্যু হয় ৪৭ জনের। গত মাসের আগে এটাই ছিল একমাসে সর্বোচ্চ মৃত্যু। আগস্টে শনাক্ত হয় ১ হাজার ৪৯৯ জনের, মৃত্যু হয় ২৭ জনের। সেপ্টেম্বর মাসে শনাক্ত হয় ১ হাজার ১১৭ জনের, মৃত্যু হয় ২২ জনের। অক্টোবরে শনাক্ত হয় ৭৯৪ জনের, মৃত্যু হয় ১২ জনের। নভেম্বর মাসে শনাক্ত হয় ৭৯৩ জনের, মৃত্যু হয় ১২ জনের। গত বছরের ডিসেম্বরে ৬৯০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল, মৃত্যু হয়েছিল ১৮ জনের। এ বছরের জানুয়ারিতে ৪১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়, মৃত্যু হয় ১২ জনের। ফেব্রুয়ারিতে শনাক্ত হয় ২৪৭ জনের, মৃত্যু হয় তিন জনের। মার্চে শনাক্ত হয় ৯৯৪ জনের, মৃত্যু হয় ৯ জনের।
গত বছরের সেপ্টেম্বরের পর সারাদেশের মতো সিলেটেও শনাক্ত রোগীর সংখ্যা কমতে থাকে। তবে করোনার দ্বিতীয় ঠেউয়ে এ বছরের মার্চের শেষ দুই সপ্তাহ থেকে আবারও বাড়তে শুরু করে করোনার সংক্রমণ। এপ্রিলের প্রথম দিকে এসে তা আরও বাড়তে থাকে। তবে মাসের শেষ দিকে কমতে শুরু করেছে শনাক্তের সংখ্যা। মাসের প্রথম ১০ দিনে শনাক্ত হন ৯৪৮ জন, দ্বিতীয় ১০ দিনে শনাক্ত হন ৮৭৬ জন এবং মাসের শেষ দশদিনে শনাক্ত হন ৬৪৪ জন।
শনাক্ত কমলেও শেষ ১০ দিনে মৃত্যু বেড়েছে কয়েকগুণ। মাসের প্রথম দশ দিনে মৃত্যু হয় ৯ জনের, দ্বিতীয় দশদিনে মৃত্যু হয় ১৩ জনের এবং শেষ ১০ দিনে মৃত্যু হয় ৩২ জনের। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার এবারের ভ্যারিয়েন্ট দ্রæত ফুসফুস ড্যামেজ করে দিচ্ছে। তাই মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে।
সংক্রমণ এবং মৃত্যু ঠেকাতে গত ৫ এপ্রিল থেকে দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। এরপর ১৪ এপ্রিল থেকে সর্বাত্মক লকডাউনের ঘোষণা দেওয়া হয়। যা চলবে আগামী ১৬ মে পর্যন্ত। তবে কৌশল পরিবর্তন হতে পারে বলে সূত্রে জানা গেছে। চলমান বিধিনিষেধের কারণে সংক্রমণের হার কমছে বলে মনে করেন সিলেটের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তবে এ নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভোগা যাবে না বলেও মনে করেন তারা।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় সিলেট মিররকে বলেন, ‘চলমান লকডাউনের কারণে সংক্রমণ কিছুটা কমেছে। এছাড়া লকডাউনের সময় প্রশাসনের কড়াকড়ির কারণে মানুষজন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন। এসব কারণেই সংক্রমণ এখন নিম্নমুখী। তবে আত্মতুষ্টিতে ভোগা যাবে না। কারণ মাস্ক না পরলে, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আবারও সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে।’
করোনার ভারতের ধরন সিলেটে ছড়িয়েছে কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নতুন কোনো স্ট্রেইন (ধরন) ছড়িয়েছে কি না তা বুঝতে হলে এক-দুই মাস অপেক্ষা করতে হবে। তাই এখন সবাইকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। তা না হলে অবস্থা ভয়াবহ হতে পারে।’
বিভাগে এপ্রিলে ৩ হাজার ২০১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। সিলেটের পর সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হয়েছে হবিগঞ্জ জেলায়। এ জেলায় একমাসে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩১৩ জনের। মৃত্যু হয়েছে ১ জনের। এছাড়া মৌলভীবাজারে শনাক্ত হয়েছে ২৮০ জনের, মারা গেছেন ৪ জন। এবং সুনামগঞ্জে এপ্রিলে করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৪০ জনের। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১ জন।
শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সিলেট বিভাগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২০ হাজার ৭২০ জন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় সর্বোচ্চ ১৩ হাজার ২৯৮ জন, সুনামগঞ্জে ২ হাজার ৭৩৪ জন, হবিগঞ্জে ২ হাজার ৩৬৯ জন ও মৌলভীবাজারে ২ হাজার ৩১৯ জন রয়েছেন।
সিলেট বিভাগে এ পর্যন্ত ৩৫০ জন করোনাভারাইরাসে আক্রান্ত রোগী মারা গেছেন। মৃতদের মধ্যে সিলেট জেলায় সর্বোচ্চ ২৭৭ জন, সুনামগঞ্জে ২৭ জন, হবিগঞ্জে ১৮ জন এবং মৌলভীবাজার জেলায় ২৮ জন রয়েছেন।
এনএইচ/বিএ-০১