নিজস্ব প্রতিবেদক
মে ১৬, ২০২১
০৮:০৭ পূর্বাহ্ন
আপডেট : মে ১৬, ২০২১
০৮:৩৯ পূর্বাহ্ন
ঈদের বৈরি আবহাওয়ার শঙ্কা ছিল আগেই। সকালবেলা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হলেও দুপুর থেকেই আকাশ ছিল ঝলমলে। কয়েকবার উকিঝুঁকি দিতে দেখা গেছে সূর্যকেও। অনুকূল আবহাওয়ার সুযোগে ঈদের দিনে একটু প্রশান্তির খুঁজে মানুষ তাই বেছে নিয়েছিলেন নগরের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। তবে বিকেল থেকে আবার বৃষ্টি শুরু হলে ঈদের দিনটা তাই অনেকের কাটে বাসায় বসে। ঈদের দ্বিতীয় দিনে তাই সূর্যের দেখা পাওয়ায় অনেকে বেরিয়ে পরেন পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঘুরতে।
ঈদের দিনে সবাই নগরের আশপাশের এলাকগুলো মুখর করে রেখেছিলেন। তবে দ্বিতীয় দিনে সূর্যের হাসি দেখে অনেকেই ছুটে যান বিছনাকান্দি, রাতারগুল কিংবা সাদাপাথরে ঈদ উৎসব কাটাতে। কিন্তু উৎসবের আমেজে সবার মাঝেই উপেক্ষিত ছিল স্বাস্থ্যবিধি। অনেকেই ঘোরাঘুরি করেছেন মাস্ক ছাড়া, কেউ কেউ ব্যবহার করলেও তা ঝুলে ছিল থুতনিতে। ভিড় বাড়তে একটু সচেতনরা অবশ্য ধরেছিলেন বাড়ির পথ। তবে বোঝার উপায় ছিল না করোনা ভাইরাসের তাণ্ডব ঠেকাতে দেশজুড়ে চলছে লকডাউন।
নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুমিন আহমদ। বৃষ্টির কারণে ঈদের দিন পরিবার নিয়ে ঘোরাঘুরি করতে পারেননি। মেয়ে আর ছোট ছেলের বায়নায় বাধ্য হয়ে ঈদের দ্বিতীয় দিন রাতারগুল ঘুরতে যেতে হয়। কিন্তু আবদার মেটাতে গিয়ে তিনি বেমালুম ভুলে গেছেন স্বাস্থ্যবিধির কথা। ছিল না মুখে মাস্ক।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঈদের সময় মানুষজন ঘুরতে আসবে, এটা ভাবিনি। তাই মাস্ক ব্যবহারের এত প্রয়োজনীয়তা অনুভব করিনি। তাছাড়া মাস্ক ব্যবহার করতে অস্বস্তিও লাগে।
সিলেট মিরর’র গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি জানান, সিলেটের পর্যটনীয় এলাকা জাফলংয়ে ঈদের দ্বিতীয় দিনে স্থানীয় পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত থাকতে দেখা গেছে। বেলা গড়ানোর সঙ্গে মানুষজনও বাড়তে থাকেন। স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত থাকায় পুলিশ বেলা ২টার দিকে অভিযান চালায়। শুক্রবারও অনেক স্থানীয় পর্যটক ছিলেন সেখানে। এছাড়া বিছনাকান্দি ও রাতারগুলেও সিলেটের স্থানীয় পর্যটকরা ঈদ উৎসব উপভোগ করছেন।
সিলেট নগরের মানুষদের জন্য বিনোদন কেন্দ্রের সংখ্যা হাতে গোণা। একটু প্রশান্তির খুঁজে নগরের মানুষজন তাই বেছে নেন মালনীছড়া চা বাগান, লাক্কাতুরা, বিমানবন্দর, বাইশটিলা, চেঙ্গেরখাল, শাহপরাণ বাইপাস ব্রিজ ও কাজীরবাজার ব্রিজের মতো জায়গাগুলো। বন্ধু-বান্ধব কিংবা একা যারা ঘুরতে বেরিয়েছিলেন তাদের কাউকে আবার কিনব্রিজ সংলগ্ন চাঁদনীঘাটেও ঘুরতে যেতে দেখা গেছে। বিধিনিষেধকালের ঈদেও উৎসবমুখর ছিল এসব দর্শনীয় স্থানগুলো। তবে মানুষের পদচারণা থাকলেও এসব স্থানগুলোতে গণপরিবহণের সংখ্যা খুব একটা দেখা যায়নি। মোটরসাইকেল আরোহী আর প্রাইভেট গাড়ির দাপটই বেশি দেখা গেছে।
ঈদের দিন বিকেলে বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ঘুরতে বাইশটিলা যান নগরের কুমারপাড়া এলাকার বাসিন্দা নাজমুস সাকিব। মুখে মাস্ক রেখে স্বাস্থ্যবিধি যথাসাধ্য মেনে ঘুরতে যান তারা। তবে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতে না আসতেই তিনি বাসায় ফেরার পথ ধরেন। এসময় তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঈদের দিনে অল্প সময় ঘোরাফেরা করে তৃপ্তি পাওয়া যায় না। কিন্তু মানুষের আনাগোণা যেভাবে বাড়ছে, করোনাকালিন এসময়ে তাই বেশিক্ষণ থাকা ঠিক হবে না। তাই ফিরে যাচ্ছি।
এবারের ঈদ ছিল শুক্রবার। মুসলিমদের জুমার নামাজ থাকায় একদিনে ছিল দুই উৎসব। পাশাপাশি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ছিল পূজা ‘অক্ষর তৃতীয়া’। ঈদ উৎসবে তাই সামিল হয়েছিলেন দেবাশিষও। যদিও পূজার কথা তার জানা ছিল না। বন্ধুদের ঈদ উৎসব ভাগ করে নিতেই তিনি হাজির হয়েছিলেন সিলেট শহরতলির শাহপরাণ বাইপাস ব্রিজে।
দেবাশিষের মুখে মাস্ক থাকলেও তার বন্ধু মুরাদের মাস্ক ঝুলছিল থুতনিতে। মুরাদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেকক্ষণ মাস্ক পরে থাকায় দম বন্ধ হয়ে আসছিল। তাই মাস্কটা একটু থুতনিতে ঝুলিয়ে রেখেছিলাম।
নগরের চৌকিদেখি এলাকার তন্ময় আহমেদও সন্ধ্যার পরপর বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যান বিমানবন্দর এলাকায়। তবে মোটরসাইকেল আর প্রাইভেট কারের সারি দেখেই থমকে গিয়েছিলেন। এ জায়গা ও জায়গা ঘুরেও কোথাও পাননি বসার জায়গা। শেষে লাক্কাতুরা স্টেডিয়ামের পাশে এসে বসার মতো জায়গা পেয়েছিলেন।
সিলেট মিররকে তিনি বলেন, বিমানবন্দর ও বাইশটিলা এলাকায় বসা তো দূরে থাক, তিল ধারণেরও ঠাই ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে এসেছি লাক্কাতুরায়। এখানেও যে জায়গা পাব নিশ্চিত ছিলাম না।
একই এলাকার বাসিন্দা আমিরুল হোসাইন স্ত্রী সন্তান নিয়ে ঘুরতে যান বের হন। প্রতিবছর গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরা গেলেও এবার করোনায় যেতে পারেননি। ঈদের দিনে বিনোদন আর প্রশান্তির খুঁজে ছুটে যান মালনীছড়া চা বাগান এলাকায়। কিন্তু তার কাছে উপেক্ষিত ছিল স্বাস্থ্যবিধি। তার পরিবারের কাউকেই দেখা যায়নি মাস্ক ব্যবহার করতে। জানতে চাইলে তিনি উত্তরে বলেন, ভুলে গেছি।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্ল্যাহ তাহের বলেন, এ বিষয়ে পুলিশ তৎপর রয়েছে। টহল পুলিশের অভিযানও আছে। সবাইকে এসব জায়গায় যেতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মানতেও সবাইকে বলা হচ্ছে। তবে জরিমানার বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা দেখছেন।
আরসি-০১