সিলেট মিরর ডেস্ক
মে ২০, ২০২১
০৮:০৩ অপরাহ্ন
আপডেট : মে ২০, ২০২১
০৮:০৩ অপরাহ্ন
চায়ের ইতিহাস অনেক পুরোনো। পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতাব্দীতে চীন ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোথাও চায়ের প্রচলন ছিল না। ব্রিটিশরা ১৮৩৮ সালে সিলেট ও কাছাড়ে পরীক্ষামূলকভাবে চা উৎপাদন শুরু হয়। ১৮৫৪ সালে সিলেটের মালনীছড়া চা বাগান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই অঞ্চলে বাণিজ্যিক ভাবে চা চাষ শুরু হয়।
পাহাড়ি জঙ্গল কেটে বাগান তৈরি, রাস্তাঘাট-গৃহ নির্মাণ, বাগান পরিচর্যা, পাতা তোলার জন্য ব্রিটিশ চা বাগান মালিকরা মিথ্যা প্রলোভন, উন্নত জীবন ও আজীবন কাজের আশ্বাস দিয়ে মধ্য ভারতের দারিদ্র ও দুর্ভিক্ষপীড়িত সাঁওতাল, লোহার, কুর্মী, মুন্ডা, কুলবিল কানু, তেলেগু, রবিদাস, গোয়ালাসহ প্রায় ১১৬টি জাতিগোষ্ঠীর মানুষ এবং উড়িষ্যা, বিহার, মাদ্রাজ, মধ্য প্রদেশ ও উত্তর প্রদেশ, বাকুড়া ইত্যাদি অঞ্চলের চাষীদের চা শ্রমিক হিসেবে নিয়ে আসে। কিন্তু এখানে এসে তাদের জোটে নামমাত্র মজুরি, অনাহার, অর্ধাহার, রোগব্যাধি, কোম্পানির লোকের চাবুক ও বুটের লাথি।
প্রতারিত, নিপীড়িত, নির্যাতিত চা শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে নিজ ভূমি অর্থাৎ মুল্লুকে চলে যাবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ১৯২১ সালের ৩ মার্চ ত্রিশ হাজার শ্রমিক দলে দলে চা বাগান থেকে বেরিয়ে রেল লাইন ধরে পায়ে হেঁটে চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। উদ্দেশ্য সেখান থেকে ষ্টিমারে গোয়ালন্দ হয়ে নিজ দেশ-মুল্লুকে ফিরে যাবে।
পথক্লান্ত হাজার হাজার শ্রমিক চাঁদপুর স্টিমার ঘাটে গোয়ালন্দগামী স্টিমার উঠতে চাইলে সশস্ত্র পুলিশ স্টিমারের সিঁড়ির দিকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে। এতে অসংখ্য শ্রমিক নিহত হয়। নদীতে ভেসে যায় অসংখ্য শ্রমিকের লাশ। ছত্রভঙ্গ হয়ে হাজার হাজার চা শ্রমিক চাঁদপুর রেলস্টেশনে জড়ো হয়ে প্লাটফর্ম ও আশাপাশের খোলা জায়গায় অবস্থান নেয়।
১৯২১ সালের ২০ মে কমিশনার কিরণ চন্দ্র দে, ম্যাজেস্টেট সুশীল সিংহ, চা-কর সাহেব ফার্গুসনের উপস্থিতে রাঁতের আধারে ঘুমন্ত শ্রমিকদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে সশস্ত্র গুর্খা সৈনিকরা। শত শত শ্রমিক হতাহত হয়। চাঁদপুরের বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী হরদয়াল নাগের নেতৃত্বে গঠিত ত্রাণ কমিটির মাধ্যমে চাঁদপুরবাসী চা শ্রমিকদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র খুলে ও খাবারের ব্যবস্থা করে। চা শ্রমিকদের সমর্থনে আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তারা এক মাসের ধর্মঘট করে। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় স্টিমার কোম্পানীর শ্রমিক-কর্মচারীরা।
চা শ্রমিকদের অনড় অবস্থান, রেল ও স্টিমার শ্রমিকদের দীর্ঘ ধর্মঘট, দেশব্যাপী রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার ফলে ব্রিটিশ চা বাগান মালিকরা চা শ্রমিকদের সাথে সমঝোতা করতে বাধ্য হয়। মালিক ও প্রশাসনের প্রতিশ্রুতির প্রেক্ষিতে যারা বাগানে ফিরে যেতে চাইলেন তারা বাগানে ফিরে গেলেন। আর যারা নিজ দেশে ফিরতে চাইলেন তাদেরকে প্রশাসনের সহযোগিতায় সেখান থেকেই নিজ মুল্লুকে ফেরৎ পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ ভাবেই পরিণতি পায় হাজার হাজার শ্রমিকের রক্তে রঞ্জিত একটি লড়াই।
আরসি-১১