স্থানীয় লিচুর দখলে বাজার

শিপার আহমেদ, বিয়ানীবাজার


মে ২০, ২০২১
১১:৪৯ অপরাহ্ন


আপডেট : মে ২০, ২০২১
১১:৪৯ অপরাহ্ন



স্থানীয় লিচুর দখলে বাজার

সিলেটের বিয়ানীবাজারে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত লিচুর দখলে এখন বাজার। এখানকার ক্রেতাদের প্রথম পছন্দ স্থানীয় এলাকায় উৎপাদিত লিচু। রাসায়নিক ও ক্ষতিকর কীটনাশকমুক্ত লিচু এখন পৌরশহরের ফলের দোকান, ভ্যানগাড়ি ও ফুটপাতে বেতের ঝুড়িতে শোভা পাচ্ছে। এবার স্থানীয়ভাবে লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। আর দামও অনেকটা ক্রেতাদের নাগালে।

স্থানীয়ভাবে লিচু উৎপাদনের ক্ষেত্রে এ বছর বাদুড়, কাঠবিড়ালি ও বানরের উৎপাত ছাড়া বড় কোনো বিপর্যয় হয়নি। ঝড়-ঝাপটার কবলেও খুব একটা পড়তে হয়নি। এতে লিচু চাষিরা খুশি। আরও কিছুদিন পরে দেশের নানা প্রান্ত থেকে অন্য জাতের লিচু আসাও শুরু হবে। পথচলতি ক্রেতাসাধারণ মৌসুমের শুরুতেই হাত বাড়িয়ে নিচ্ছেন নজরকাড়া মৌসুমী এই ফলকে।  

বিয়ানীবাজার উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বৈশাখ মাসের শেষদিকে শুরু হয়েছে বিয়ানীবাজার উপজেলার পাহাড়ি ও টিলা এলাকা থেকে ছোট-বড় হাট-বাজারে স্থানীয় লিচু আসা। পাইকারি ও খুচরা লিচু বিক্রেতারা পৌরশহরের বিভিন্ন ফুটপাত, পথের মোড় এবং মৌসুমী ফল বিক্রির নির্দিষ্ট স্থানে ভ্যানগাড়ি, বেতের ঝুড়ি ও ডালাভর্তি নজরকাড়া লিচু নিয়ে বসছেন।

সরেজমিনে বিয়ানীবাজার পৌরশহর ঘুরে দেখা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে পৌরশহরের দক্ষিণ বাজার, উত্তর বাজার, কলেজ রোড, পোস্ট অফিস রোড, নিউ মার্কেট, মোকাম মসজিদ রোড, আজির মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় লিচু বিক্রি হচ্ছে। এখন স্থানীয় জাতের লিচু বাজারে এসেছে। আকার ও ধরনভেদে ১০০টি লিচু ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। 

আরও কিছুদিন পর বিভিন্ন জেলা থেকে বাজারে আসবে বিভিন্ন জাতের লিচু। এগুলো বাজারে এলে লিচুর দামও কমবে। কিন্ত অন্য জেলার লিচু খেতে অনেকটা অনাগ্রহী বিয়ানীবাজারবাসী। কারণ এসব লিচুতে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক প্রয়োগ হয়ে থাকে বলে ধারণা স্থানীয়দের। বিয়ানীবাজারের পাহাড়ি এলাকা জলঢুপ, মুল্লাপুর, লাউতা ও কালাইউরায় বিক্ষিপ্তভাবে কম-বেশি লিচুর আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সকাল থেকেই এসব স্থান থেকে লিচু নিয়ে বাজারে আসছেন বিক্রেতারা।

জলঢুপ এলাকার লিচু চাষি সাদিক হোসেন এপলু বলেন, আমার বাড়িতে ১০টি লিচু গাছ রয়েছে। গাছগুলো অনেক পুরোনো। প্রতিবছর অনেক লিচু হয় আমাদের গাছে। এবার ফলন খুব ভালো হয়েছে। প্রতিবছর পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে আমরা বাজারে লিচু বিক্রি করি। পাইকাররা নিজেদের দায়িত্বে গাছ থেকে ফল পেড়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এ বছর প্রায় ৮০ হাজার টাকার লিচু বিক্রি করেছি। 

লিচু গাছের আরেক মালিক মাসুদ রানা শিমুল বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার লিচুর ফলন ভলো হয়েছে। কিন্তু আমাদের লিচুর শত্রু বাদুড়, বানর আর কাঠবিড়ালি। অর্ধেক লিচু তাদের পেটে চলে যায়। গাছ পাহারা দেওয়ার জন্য অবশ্য লোক আছে। পাশাপাশি বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থা করেছি। রাতেও দিনের মতো আলো থাকে গাছে। আমরা লিচুতে কোনো ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করি না।

পৌরশহরের ফল বিক্রেতা লিলু মিয়া বলেন, এ বছর জলঢুপ এলাকায় ২০টি লিচু গাছ কিনেছি। সব গাছের লিচু এখনও পাকেনি। বর্তমানে ১০০টি লিচু ১৫০ থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি করছি। আমাদের কাছে স্থানীয় এলাকার লিচুর চাহিদা বেশি। কারণ এই লিচুতে কোনো ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করেন না গাছের মালিকরা।

লিচু ক্রেতা আবুল হাসান বলেন, আমাদের জলঢুপ এলাকার লিচুর স্বাদ ভালো, এগুলো মিষ্টি। দামও সহনীয়। আমি ১০০টি লিচু কিনেছি ১৫০ টাকায়। দাম বেশি হলেও সমস্যা নেই। কারণ লিচুগুলো রাসায়নিকমুক্ত।

বিয়ানীবাজার উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, বিয়ানীবাজার উপজেলার পাহাড়-টিলাবেষ্টিত এলাকার বাড়িগুলোতে অনেক পুরোনো লিচু গাছ রয়েছে। এখানে কোনো বাণিজ্যিক লিচুর বাগান নেই। স্থানীয় বাজারে এই গাছগুলোর লিচুর চাহিদা অনেক বেশি।

 

এসএ/আরআর-০১