নিজস্ব প্রতিবেদক
মে ২২, ২০২১
০৪:৫৬ পূর্বাহ্ন
আপডেট : মে ২২, ২০২১
০৪:৫৬ পূর্বাহ্ন
করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের বিধি নিষেধে চলছে না দূরপাল্লার যান। তবে থেমে নেই বিকল্প পন্থায় সিলেটের বাইরে মানুষের আসা-যাওয়া। দূর গন্তব্যে পৌঁছাতে বাসের পরিবর্তে ব্যবহৃত হচ্ছে মাইক্রোবাস হাইয়েস, নোহার মতো যানবাহন। বিনিময়ে বাড়তি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এ কাজে জড়িয়ে পড়েছে বাসসহ পরিবহন শ্রমিকরা। মাইক্রোবাসগুলোকে এ সুবিধা করে দেওয়ার বিনিময়ে প্রতিদিন দুই লাখ থেকে সোয়া দুই লাখ টাকা তুলে নিচ্ছে তারা। অন্যদিকে স্বাস্থ্যবিধির বালাই না থাকায় করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিও বাড়ছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, সিলেট নগরের দক্ষিণ সুরমার কদমতলী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের কাছে রাস্তায় দাঁড় করানো রয়েছে হাইয়েস, নোহাসহ বিভিন্ন ধরণের মাইক্রোবাস। লকডাউন শুরুর পর এসব যানবাহনকে ঘিরে একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। সাধারণত সিলেটের বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে গন্তব্যগামীরা বাস টার্মিনাল এলাকায় চলে আসেন যানবাহনের খোঁজে। এসব যাত্রীদের পেলেই ঘিরে ধরে এক শ্রেণীর দালাল। তারা যাত্রীর সঙ্গে দর কষাকষি করে ভাড়া নির্ধারণ করে মাইক্রোবাসে তুলে দেয়। গাদাগাদি করে মাইক্রোবাসে যাত্রী তোলা হয়। নোহা গাড়ির ক্ষেত্রে ৭ থেকে ৮ জন এবং হাইয়েস গাড়িতে ১০ থেকে ১১ জন যাত্রী তোলা হচ্ছে। ফলে স্বাস্থ্যবিধি কিংবা সামাজিক দূরত্বে বিষয়টি সেখানে মানার পরিবেশ নেই। অনেকেই জরুরি প্রয়োজনে বাধ্য হয়ে এসব গাড়িতে করে ঢাকাসহ বিভিন্ন গন্তব্যে যাচ্ছেন।
নগরের কানিশাইল এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী এখলাসুর রহমান জরুরি প্রয়োজনে বাধ্য হয়েই ঢাকায় যাচ্ছেন। সিলেট মিরর’কে তিনি বলেন, ‘টার্মিনাল এলাকায় আসলেই দালালরা ঘিরে ধরে। সরাসরি মাইক্রোবাসের চালকের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ নেই। তারা ইচ্ছে মতো ভাড়া হাঁকছে। বাস না থাকায় বাধ্য হয়ে তাদের দাবি মানতে হচ্ছে।’ মাইক্রোবাসে গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহনের কারণে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেকটা জেনে শুনে বিষ পানের মতো গাড়িতে উঠছি। জরুরি প্রয়োজন, যেতেই হবে। আর তো কোনো বিকল্প পথ নাই।’
বাস টার্মিনাল এলাকায় বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘এসব মাইক্রোবাসের নির্ধারিত কোনো ভাড়া নেই। ঢাকাগামী যাত্রীদের ক্ষেত্রে ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত যার কাছ থেকে যত পারা যায় নেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে মাইক্রোবাস চালক মাথা পিছু এক হাজার থেকে ১২শ টাকা পান। বাকি টাকা দালালরা নেন। এসব দালালের প্রায় সবাই পরিবহন শ্রমিক। দূরপাল্লার যানবাহন বন্ধ থাকায় তারা মাইক্রোবাসের যাত্রীর ব্যবস্থা করে দিয়ে আয় করছেন। এছাড়াও প্রতিটি গাড়ির ক্ষেত্রে পরিবহন শ্রমিকরা ১ হাজার টাকা করে নেন। এ থেকে প্রতিদিন তাদের প্রায় দুই লাখ টাকা আয় হয়। কোনো কোনো দিন টাকার পরিমাণ সোয়া দুই লাখ পর্যন্ত উঠে বলে জানা গেছে। এসব টাকা আবার পরিবহন শ্রমিক নেতা থেকে শুরু করে পরিবহন শ্রমিকরা ভাগ করে নেন। এই টাকা দিয়েই বাকি সবকিছু ম্যানেজ করা হয়।
এ বিষয়ে কথা বলতে সিলেট জেলা বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের (১৪১৮) শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ময়নুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সিলেট মিরর’কে তিনি বলেন, ‘বাস চলাচল করছে না। এগুলো মাইক্রোবাস চালকরা করছে। এর সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। মানুষও জরুরি প্রয়োজনে যাচ্ছে সেজন্য আমরা বাঁধা দিচ্ছি না।’ এসবের সঙ্গে পরিবহণ শ্রমিকরাও জড়িত, টাকার ভাগ পাচ্ছে এরকম অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে অবগত নন দাবি করে বলেন, ‘আমি এসব বিষয়ে জানি না। এখন জানতে পারলাম। আমি একটা মিটিংয়ে আছি। বের হয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেব।’
মাইক্রোবাস চালকদের পক্ষে সাফাই গেয়ে তিনি বলেন, ‘তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চার-পাঁচজন যাত্রী পরিবহন করছে’। কিন্তু বাস্তবে নোহায় ৭-৮ জন এবং হাইয়েসে ১০-১১ জন যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে জানালে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বাস মালিক বলেন, ‘সরকার করোনা সংক্রমণ রোধে বাস চলাচল বন্ধ করেছে। কিন্তু নোহা, হাইয়েস দিয়ে যাত্রী টানা হচ্ছে। এতে করে সংক্রমণের ঝুঁকি রোধ হচ্ছে না বরং বাড়ছে। কারণ এসব মাইক্রোবাসে গাদাগাদি করে যাত্রী বহন করা হয়। অথচ বাস চালু থাকলে এসবের তুলনায় নিরাপদে যাত্রীরা যাতায়াত করতে পারতেন।’ তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘সরকারের নির্দেশে বাস বন্ধ রেখে আমরা মালিকরাই শুধু ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। কিন্তু মূল যে উদ্দেশ্য সংক্রমণ রোধ তা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ বিকল্প আয়ের পথ বের করে ফেলায় পরিবহন শ্রমিকরাও বাস চালুর দাবিতে আন্দোলনে আগ্রহী হচ্ছে না। পুরো বিষয়টা সরকারের বিবেচনায় আনা উচিত।’
মাইক্রোবাসে করে যাত্রী পরিবহনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা অবগত। এসব বন্ধে নিয়মিত অভিযানও চালাচ্ছি। কিন্তু তারা নানা কৌশলে যাত্রী পরিবহন করছে। যাত্রীরাও গন্তব্যে যেতে মরিয়া। যে কারণে অভিযান চালিয়েও পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না।’
বিএ-১০