জৈন্তাপুরে সীমান্ত পেরিয়ে পাথর উত্তোলন, ঝুঁকিতে শ্রমিকরা

জৈন্তাপুর প্রতিনিধি


মে ২৫, ২০২১
০৯:০১ অপরাহ্ন


আপডেট : মে ২৫, ২০২১
১১:২১ অপরাহ্ন



জৈন্তাপুরে সীমান্ত পেরিয়ে পাথর উত্তোলন, ঝুঁকিতে শ্রমিকরা

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার প্রধান নদীগুলোর মধ্যে অন্যতম নদী হলো সারী নদী ও রাংপানি নদী। নদী দু'টির উৎসমুখ রয়েছে সীমান্তবর্তী দেশ ভারতে। কিছুদিন আগে বৃষ্টিপাত হওয়ায় নদীগুলোতে পানি বেড়েছে। এতে পাথরখেকো চক্র অর্থের লোভে নিরীহ শ্রমিকদের পাথর সংগ্রহ করার জন্য সীমান্ত অতিক্রম করাচ্ছে। পাথর সংগ্রহের ব্যাপারে কয়েক দফা নিষেধ দিয়েছে বিএসএফ ও খাসিয়ারা। তবু থেমে নেই পাথর সংগ্রহ। 

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, শ্রীপুর কোয়ারির (রাংপানি নদী) লালাখাল নদীর উৎসমুখ থেকে পাথরখেকো চক্রের সদস্যরা শ্রমিক পাঠিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করিয়ে পাথর লুট করে আনার সময় কয়েক দফা বাধা দিয়েছে ভারতীয় খাসিয়া নাগরিক ও ভারতীয় সীমান্ত সুরক্ষাবাহিনী বিএসএফ। কিন্তু কোনোভাবেই সে বাধা মানছে না পাথরখেকো চক্রের মূল হোতারা। সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত সীমান্ত অতিক্রম করে নিরীহ পাথর শ্রমিকদের অতিরিক্ত অর্থের লোভে ফেলে ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করিয়ে পাথর চুরির ঘটনা ঘটিয়ে আসছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন পাথর শ্রমিক জানান, অতিরিক্ত টাকা পাওয়ার কারণে তারা সীমান্ত অতিক্রম করে ভারত থেকে পাথর চুরি করে নিয়ে আসেন। ভারত সীমান্তে প্রবেশের ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মনোনীত সোর্স তাদের তাদের সহায়তা করে থাকে।

জানা গেছে, উপজেলার প্রধান দুই নদীর উৎসমুখ থেকে অপরিকল্পিতভাবে পাথর ও বালু আহরণের কারণে হুমকীর মুখে পড়ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। এছাড়া ভারতীয় সীমান্তের খাসিয়া নাগরিকরা তাদের এলাকা রক্ষার জন্য যে কোনো মুহূর্তে অনাকাঙ্খিত ঘটনার জন্ম দিতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

সারী নদীর লালাখাল অংশে কর্মরত শ্রমিকরা জানান, গত শুক্রবার দিবাগত রাত ১টায় ১৩০০ নম্বর আন্তর্জাতিক সীমান্ত পিলার অতিক্রম করে পাথর আনতে গেলে হঠাৎ করে ভারতীয় খাসিয়ারা তাদেরকে ধাওয়া করে। ধাওয়ার কারণে শ্রমিকরা ফিরে আসেন। অপরদিকে, সন্ধ্যা থেকে ফজর পর্যন্ত ১২৯০ নম্বর আন্তর্জাতিক সীমান্ত পিলার অতিক্রমকালে শ্রীপুর কোয়ারির উৎসমুখে গত কয়েকদিন ধরে ভারতের রংহংকং ক্যাম্পের জোয়ানরা শ্রমিকদের ধাওয়া করছেন। কিন্তু কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। অসাধু পাথরখেকো চক্রের সদস্যরা অর্থের লোভে ফেলে শ্রমিকদের পাথর আনতে সীমান্তের ওপারে পাঠাচ্ছে।

সচেতন মহলের মতে, কোয়ারি বন্ধ থাকার পরও নিরীহ শ্রমিকদের এভাবে অনিরাপদভাবে সীমান্ত অতিক্রম করিয়ে পাথর আনা ঠিক নয়। গত শুক্রবার রাতে উপজেলা খাঁসি হাওর এলাকার খাঁসি নদীর উৎসমুখে খাসিয়ারা গুলি করেছিল শ্রমিকদের ওপর। লালাখাল ও শ্রীপুরে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে দায়ভার কারা নেবে?

এ বিষয়ে জৈন্তাপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম দস্তগির আহমেদ বলেন, এভাবে পাথর চুরির বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ-খবর নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আর বিজিবি'র শ্রীপুর ক্যাম্পের কমান্ডার হাবিলদার আমিনুল ইসলাম বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, শ্রীপুর কোয়ারি এলাকায় কোনো প্রকার পাথর উত্তোলন হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে কথা বলতে লালাখাল বিজিবি ক্যাম্পের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কেউ ফোন রিসিভ করেনি।


আরকে/আরআর-০১