স্ত্রীর পরিকল্পনায় স্বামীকে ৬ টুকরা করেন ইমাম

সিলেট মিরর ডেস্ক


মে ২৭, ২০২১
০২:৫৬ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মে ২৭, ২০২১
০৩:৩২ পূর্বাহ্ন



স্ত্রীর পরিকল্পনায় স্বামীকে ৬ টুকরা করেন ইমাম
ঢাকায় আজাহার হত্যা

রাজধানীর দক্ষিণখানে স্ত্রী আসমা আক্তারের পরিকল্পনাতেই খুন করা হয় মো. আজাহার (৩০)কে। ‘শত্রু’ সরিয়ে দিতে পরকীয়া প্রেমিক স্থানীয় সরদার বাড়ি জামে মসজিদের ইমাম আব্দুর রহমানের সঙ্গে মিলে তিনি গত এপ্রিল মাস থেকে ওই খুনের পরিকল্পনা করেন। শুরুর দিকে ভাড়াটে খুনি দিয়ে আজাহারকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও তা সম্ভব হয়নি। পরে সেই দায়িত্ব নেন আব্দুর রহমান নিজেই। হত্যার আগে আসমা এবং রহমান মোবাইল ফোনে শলাপরামর্শ করেন। আজাহারকে হত্যা করে ছয় টুকরা করার পর তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলেন। তখন রহমান আসমাকে বলেন, ‘কুপিয়ে শেষ করে দিয়েছি, ছয় টুকরা করে লাশ সেপটিক ট্যাংকে রেখেছি।’ রহমান ও আসমা র‌্যাববের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য দিয়েছেন বলে বৃহস্পতিবার সংশ্নিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

নিহত আজাহার দক্ষিণখান এলাকায় তৈরি পোশাকের একটি কারখানার কর্মী ছিলেন। তিনি স্ত্রী আসমা আক্তার ও চার বছরের শিশু ছেলে নিয়ে ওই এলাকাতেই থাকতেন। তারা ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে গেলেও আজাহার গত ২০ মে একাই ঢাকায় ফিরে নিখোঁজ হন। ওই ঘটনায় র‌্যাব ময়নাতদন্ত করে মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে। তার দেওয়া তথ্যনাযায়ী গত মঙ্গলবার সকালে মসজিদের সেপটিক ট্যাংক থেকে আজাহারের লাশের ছয়টি টুকরা উদ্ধার করা হয়। এরপর ওই রাতেই গ্রেপ্তার করা হয় আজাহারের স্ত্রী আসমা আক্তারকে (২৩)।বুধবার ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই দক্ষিণখান থানায় আব্দুর রহমান ও আসমা আক্তারকে আসামি করে মামলা করেছেন।

র‌্যাব ও পারিবারিক সূত্র জানায়, আজাহারকে খুন করে লাশ গুমের বিষয়টি আসমা জানলেও তিনি নাটক সাজান। স্বামীর ফোন বন্ধ থাকায় তিনি নিখোঁজ রয়েছেন বলে স্বজনদের কাছে গল্প ফাঁদেন। সন্দেহ এড়াতে ঢাকায় এসে স্বামীর সন্ধানও করেন। ‘না পেয়ে’ আবার টাঙ্গাইল চলে যান।

ওই দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর র‌্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, আব্দুর রহমান নিহত আজাহার ও তার শিশু ছেলেকে বাসায় গিয়ে আরবি পড়াতেন। আজাহারের স্ত্রী আসমা ছেলেকে নিয়ে রহমানের কাছে মক্তব্যেও যেতেন। এভাবে তাদের মধ্যে সখ্য গড়ে উঠে। একপর্যায়ে তা পরকীয়ায় রূপ নেয়। ওই দুইজনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড আজাহার দেখে ফেলে বাধা দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আজাহারকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত মার্চের দিকে ইমাম আব্দুর রহমানের সঙ্গে আসমার অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি জেনে যান স্বামী আজাহার। তখন তাকে বাসায় এসে না পড়ানোর জন্য বলা হয়। এতে ক্ষিপ্ত হন ইমাম রহমান ও আসমা। এরপর রহমান তার এক ছাত্রের নামে আসমাকে মোবাইল ফোন ও সিমকার্ড কিনে দেন। সেটি দিয়ে তারা কথোপকথনের পাশাপাশি আজাহারকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে পরিকল্পনা করতে থাকেন। ঘটনার দিন ২০ মে আসমা গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল অবস্থান করলেও ইমামকে ফোন দিয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিষয়ে জানতে চান। তখন ইমাম তাকে বলেন, ‘আজ সন্ধ্যায় ডেকেছি। আসলে আজই কাজ শেষ করে দেব।’ আজাহারকে ছয় টুকরা করে লাশ গুমের পর ইমাম রহমান ফোনে আসমাকে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পুরো বিষয়টি অবগত করেন। তখন রহমান তাকে বলেন, ‘কুপিয়ে শেষ করে দিয়েছি, টুকরা করে লাশ সেপটিক ট্যাংকে রেখেছি।’

এদিকে দক্ষিণখান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুল হক বলেন, মামলার পর বুধবার আব্দুর রহমান ও আসমা আক্তারকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত তাদের পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। নৃশংস ওই ঘটনার বিষয়ে তাদের বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

এর আগে দুপুরে র‌্যাব সদরদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, রোজার সাতদিন আগে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা হলেও আজাহার তখন ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে আসমা ও রহমান সেই পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনেন। আজাহার স্ত্রী আসমা ও সন্তানকে নিয়ে ঈদের আগে গ্রামের বাড়ি চলে গেলেও পরিকল্পনা অনুযায়ী স্ত্রীই তাকে চাকরি করার প্ররোচনা দিয়ে ঢাকা পাঠিয়ে দেন। ঢাকা আসার সঙ্গে সঙ্গেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ইমাম রহমান তাকে মসজিদে নিজের কক্ষে ডেকে নেন।

তিনি বলেন, আজাহারকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে পারলে রহমানকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন আসমা। যদিও রহমানের স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে। তারা গ্রামের বাড়ি থাকেন।

এদিকে র‌্যাব-পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আব্দুর রহমান দাবি করেছেন, আসমার প্ররোচনাতেই তিনি খুনের সিদ্ধান্ত নেন। শুরুর দিকে আজাহারকে মারতে লোক খুঁজছিলেন। তাতে ব্যর্থ হলে আসমা তাকে চাপ দেন। বলতে থাকেন, আজাহারকে মসজিদের কক্ষে ডেকে নিয়ে মেরে ফেলতে হবে। তাকে না মারলে নিজেই আত্মহত্যা করবেন। এর আগে তাকে (রহমানকে) মেরে ফেলবেন। তা না পারলে আত্মহত্যার দায় তার ওপর চাপানো হবে।

দক্ষিণখান থানা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, আব্দুর রহমান মুখ খুললেও আসমা জিজ্ঞাসাবাদে চুপ থাকছেন। তবে দুইজনকে মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

আজাহারের একজন স্বজন জানান, আজাহারকে বিয়ের আগে আসমার আরও দুটি বিয়ে হয়েছিল। তিনি আজাহারের বড়ভাইকে বিয়ে করেছিলেন। ২০১৫ সালে দেবর আজাহারের সঙ্গে পালিয়ে এসে তাকে বিয়ে করেন। তার এমন অনৈতিক কর্মে আজাহারের নিষ্পাপ চার বছর বয়সী ছেলে বিপাকে পড়ল।

বিএ-০৭