নিজস্ব প্রতিবেদক
মে ২৭, ২০২১
০৫:২৬ পূর্বাহ্ন
আপডেট : মে ২৭, ২০২১
০৫:২৭ পূর্বাহ্ন
ঈদের পর থেকে সিলেটে আবারও বাড়তে শুরু করেছে করোনা সংক্রমণ। বিশেষ করে ঈদের পর গত ১৮ মে থেকে বাড়তে থাকে এ সংখ্যা। ফলে গত ৮ দিনে শনাক্ত বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ঈদের আগে মানুষের অবাধ চলাফেরা সংক্রমণ বাড়ার মূল কারণ।
জানা গেছে, ঈদের পর সিলেটসহ দেশের ৭ জেলায় নতুন করে সংক্রমণ বেড়েছে। বাংলাদেশে সীমান্তবর্তী জেলা আছে ৩২টি। এর মধ্যে ভারতের সঙ্গে সীমান্ত আছে ৩০ জেলার। এই ৩০ জেলার মধ্যে সম্প্রতি নতুন করে সংক্রমণ বেড়েছে ৭ জেলায়। জেলাগুলো হচ্ছে সিলেট, যশোর, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণের তালিকায় আছে চাপাইনবাগঞ্জ এবং রাজশাহী। তবে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট কিনা তা এখনও বলা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলার সিভিল সার্জনরা। তবে তারা সংক্রমণ বাড়ার পেছনে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে ঈদ যাত্রাকেই দায়ী করছেন।
সিলেট ছাড়া দেশের বাকি ৬ জেলায় ঈদের পর সংক্রমণের হার কম থাকলেও গত ৫-৬ দিন আগে থেকে তা বাড়তে শুরু করেছে। রাজশাহী বিভাগের চাপাইনবাবগঞ্জে ২২ শতাংশ থেকে ছয়দিনের ব্যবধানে ৫০ শতাংশের বেশি দাঁড়িয়েছে সংক্রমণের হার। গত ১৮ মে থেকে এই সংক্রমণের হার বেড়েছে বলে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। পার্শ্ববর্তী জেলা রাজশাহীতে দাঁড়িয়েছে ৩৩ শতাংশের কাছাকছি। উচ্চ সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে সাতদিন লকডাউন ঘোষনা করেছে জেলা প্রশাসন।
সিলেটের স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলায় ১০ মে থেকে ১৭ মে ৮ দিনে সিলেট জেলায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩০৮ জনের। গড়ে প্রতিদিন শনাক্ত হয়েছে ৩৮ জনের। তবে ১৮ মে থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১ টা পর্যন্ত ৮ দিনে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৫২৯ জনের। গড়ে প্রতিদিন শনাক্ত হয়েছে ৬৬ জনের। অর্থাৎ গত ৮ দিনে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে শনাক্তের সংখ্যা। এসময় করোনা আক্রান্ত হয়ে জেলায় ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগের ৮ দিনে মারা যান ১০ জন।
জেলা সিভিল সার্জন সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের সঙ্গে ভারতের সব সীমান্ত বন্ধ থাকলেও জেলায় এখন পর্যন্ত ২৬ জন ভারতফেরত মানুুষ সিলেটে এসেছেন। এদের মধ্যে করোনা শনাক্ত হয় ৪ জনের। ভারতফেরত যারাই আসছেন তাদের ১৪ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হচ্ছে। এদের মধ্যে যাদের শারীরিক সমস্যা থাকবে তাদের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোয়ারেন্টিনে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হবে। যারা সুস্থ থাকবেন তারা খাদিমপাড়া ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে কোয়ারেন্টিনে থাকবেন। তবে বর্তমানে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভারতফেরত কেউ কোয়ারেন্টিনে নেই বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
আর খাদিমপাড়া ৩১ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মো. মাহমুদ হাসান সিলেট মিররকে বলেন, ‘মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালে ভারতফেরত ৩ জন কোয়ারেন্টিনে আছেন। তাদের শরীরে করোনা আছে কি না তা পরীক্ষা করতে আমরা গত সোমবার তাদের নমুনা সংগ্রহ করেছি। আশা করছি আজ (মঙ্গলবার) রাতে তাদের রিপোর্ট পেয়ে যাব।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে ভারতফেরত ৪ জন করোনা পজিটিভ রোগী ভর্তি ছিলেন। তারা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তাদের শরীরে ভারতের করোনার ধরন আছে কি না তা পরীক্ষা করতে আইইডিসিআরকে জানানো হয়েছে।’
এদিকে গত সোমবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় বিভাগে ১৩৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। যা মে মাসের মধ্যে এটি একদিন সর্বোচ্চ শনাক্ত। সিলেট ছাড়া বাকি তিন জেলায়ও ঈদের পর বেড়েছে শনাক্তের সংখ্যা। গত ৮ দিনে সুনামগঞ্জে করোনা শনাক্ত হয়েছে ২৯ জনের। এর আগের ৮ দিনে এ সংখ্যা ছিল ৯ জনে। হবিগঞ্জে গত ৮ দিনে শনাক্ত হয়েছে ৪৮ জনের। এর আগে গত ১০ মে থেকে ১৭ মে ৮ দিনে জেলায় করোনা শনাক্ত হয়েছিল ১৪ জনের। এছাড়া একই ভাবে শনাক্তের সংখ্যা বেড়েছে মৌলভীবাজার জেলায়ও। গত ১০ থেকে ১৭ মে পর্যন্ত ৮ দিনে জেলায় ২৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। তবে ১৮ মে থেকে শেষ ৮ দিনে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৭ জনে।
জানা যায়, গত বছরের ৫ এপ্রিল সিলেট বিভাগে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। প্রথম দিকে শনাক্তের সংখ্যা কম থাকলেও সে বছরের জুন-জুলাই মাসে শনাক্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। তবে আগস্টের পর থেকে কমতে থাকে এ সংখ্যা। এ বছরের প্রথম দুই মাস বিভাগে সংক্রমণ ছিল নিয়ন্ত্রণে। তবে মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে করোনার দ্বিতীয় ঠেউয়ে আবারো বাড়তে থাকে শনাক্ত। সংক্রমণ ঠেকাতে এপ্রিলের ১৪ তারিখ থাকে শুরু হয় বিধি-নিষেধ। এরপর মাসের শেষ দিকে আবার সংক্রমণ কমতে শুরু করে। তবে গত এক সপ্তাহ থেকে আবারও সংক্রমণের উর্দ্ধমুখী হার দেখা যাচ্ছে।
এবিষয়ে সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় দত্ত সিলেট মিররকে বলেন, ‘গত এক সপ্তাহ থেকে সংক্রমণ কিছুটা উর্ধ্বমুখী। এর প্রধান কারণ হলো ঈদের সময় মানুষজন স্বাস্থ্যবিধি না মেনে শপিংমল-বাজারে ভিড় করেছেন। গাদাগাদি করে বাড়ি ফিরেছেন। এছাড়া সিলেটের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত বন্ধ থাকলেও বেশ কয়েকজন দেশের অন্যান্য সীমান্ত দিয়ে সিলেট এসেছেন। তাদের কেউ কেউ পজিটিভও হয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন দেশ থেকেও প্রবাসীরা দেশে এসেছেন। এটাও একটা কারণ হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে এখনই সংক্রমণ বাড়ছে বলাটা ঠিক হবে না। আমাদের আরও এক সপ্তাহ দেখতে হবে। যদি এভাবে সংক্রমণের হার বাড়ে তাহলে বলা যেতে পারে সংক্রমণ বাড়ছে।’
এদিকে সিলেটে ভারতফেরতদের করোনা পরীক্ষা করা হয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়টির জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও ল্যাব ইনচার্জ জি এম নুরনবী আজাদ জুয়েল সিলেট মিররকে বলেন, ‘সিলেট ভারতফেরত কয়েকজনের নমুনা মঙ্গলবার সকালে আইডিসিআরে পাঠানো হয়েছে। সেখানে ওই নমুনা গুলোর জিনোম সিকুয়েন্সিং হবে।’
এনএইচ/আরসি-০১