সমুদ্রপৃষ্ঠের সঙ্গে পেরে উঠছে না বেড়িবাঁধ

সিলেট মিরর ডেস্ক


মে ২৭, ২০২১
০৬:৩১ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মে ২৭, ২০২১
০৬:৩১ পূর্বাহ্ন



সমুদ্রপৃষ্ঠের সঙ্গে পেরে উঠছে না বেড়িবাঁধ

পলি জমে নদ-নদীর তলদেশ স্ফীত হচ্ছে। তার সঙ্গে জলবায়ুর পরিবর্তন সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাও বাড়িয়েছে। এই দুয়ে মিলে বাড়িয়ে দিয়েছে জোয়ারের পানির উচ্চতাও। কিন্তু দক্ষিণাঞ্চলের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো রয়েছে সেই ষাটের দশকেরই। ফলে স্বাভাবিক সময়েই জীর্ণ, ভাঙাচোরা বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ছে। আর পূর্ণিমার সঙ্গে চন্দ্রগ্রহণ মিলে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে উপকূলে পানির উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে গেছে। ফলে অধিকাংশ বাঁধ উপচে পানি ঢুকছে নদী আর সাগরতীরের এলাকাগুলোতে।

যদিও ২০০৯ সালে আইলা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গিয়েছিল দক্ষিণ উপকূলবর্তী এলাকার মাটির বাঁধগুলি কতটা ঠুনকো। ঘূর্ণিঝড় আইলা ও পরবর্তিতে মহাসেনের আঘাতে বিভাগের প্রায় ৭৫ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। গেল বছরের মে মাসে আম্ফানে বিভাগের ১৬১ কিলোমিটার নদীর বাঁধ ভেঙেছিল। এরপরেই টেকসই (৫ মিটার উচু ও ৫ মিটার প্রস্থ) উন্নয়ন বাঁধের দাবি জোরদার হয়। সে অনুযায়ী বিভাগের ৩ হাজার ২০০ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে মাত্র ৫৯ কিলোমিটার বাঁধের টেকসই উন্নয়ন হয়েছে। তাই গত বছর আম্ফানে আবার বাঁধ ভেঙে ভাসে গ্রামের পর গ্রাম। ইয়াসেও সেই একই পরিস্থিতি।

আম্ফানের এক বছর পরেও বাঁধ-চিত্রে বিশেষ কোনো পরিবর্তন আসেনি। বহু জায়গায় সেই জোড়াতালি দেওয়া মাটির বাঁধই ভরসা এখনো। তাই বড় ঝড় এলে আবার ভাসতে হবে, ধরেই রেখেছেন উপকূলের মানুষজন। যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলেছিল, ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ পুনর্নির্মাণের জন্য অর্থসহায়তা চেয়ে মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সর্বশেষ আম্পানের পরও একই কথা বলেছিল পাউবো। কিন্তু বরাদ্ধ আসেনি চাহিতা মতো। তাই ষাটের দশকের দীর্ঘ বেড়িবাঁধ বছর বছর জোড়াতালি দিয়ে রক্ষার চেষ্টা করছে পাউবো।

পাউবোর বরিশাল আঞ্চলিক প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয় জানান, আইলার পর ২০১০ সালে বিশ্বব্যাংকের ‘ইসিআরআরপি’ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ সংস্কারের কাজ শুরু হয়। বিভাগে ৮২টি পোল্ডারের আওতায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কারের আওতায় আনা হয়। পরে তহবিল জটিলতার কারণে বছর দুয়েক কাজ বন্ধ থাকে। ২০১৪ সালের জুনে সে কাজ আবার শুরু হয়। এরপর বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে বিশ্বব্যাংকের প্রায় ১ হাজার ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে কোস্টাল এমব্যাংকমেন্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের (সিইআইপি) আওতায় বরগুনা, পটুয়াখালী আর পিরোজপুরে ছয়টি পোল্ডারের বাঁধ উঁচুকরণে উদ্যোগ নেয়। ওই প্রকল্পের আওতায় ৫৯ কিলোমিটার বাঁধ উঁচু করে নতুনভাবে নির্মাণ ও বাঁধের তীর ব্লক দিয়ে বাঁধাই করার কাজ শুরু হয়। এই কাজের ইতোমধ্যেই প্রায় ৭০ ভাগ শেষ হয়েছে।

পাউবোর বরিশাল অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম সরকার বলেন, ‘সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু দক্ষিণাঞ্চলের বাঁধগুলো সেই ষাটের দশকের। পূর্নিমার জোয়ারেই তাই অধিকাংশ বাঁধ পানির কাছাকাছি আসছে। তার সঙ্গে যদি ঘূর্ণিঝড় যুক্ত হয়, তখন বাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে ঢুকছে। যেমনটি এবারের ইয়াসে প্রভাবে হয়েছে। তাই বাঁধগুলোর উচ্চতা বৃদ্ধির বিষয়টি এখন আলোচনা নয়, এটা বাস্তবতা। পাউবো সে লক্ষ্যে প্রতিবছরই প্রকল্প তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে দিচ্ছে। প্রকল্পে বাঁধের উচ্চতা ধরা হয়েছে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫ মিটার এবং চওড়াও ৫ মিটার। এ ধরনের কয়েকটি প্রকল্প অনুমোদনও হয়েছে। তবে অর্থ বরাদ্দ না আসায় কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।

আরসি-০২

সূত্র: কালের কণ্ঠ