এক সপ্তাহ পর কাজে যোগ দিচ্ছেন তারাপুর চা বাগানের শ্রমিকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক


মে ২৭, ২০২১
০৭:০০ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মে ২৭, ২০২১
০৭:০১ পূর্বাহ্ন



এক সপ্তাহ পর কাজে যোগ দিচ্ছেন তারাপুর চা বাগানের শ্রমিকরা

বকেয়া মজুরি পাওয়ার আশ্বাসে আজ বৃহস্পতিবার থেকে আবারও কাজে যোগ দিচ্ছেন তারাপুর চা বাগানের শ্রমিকরা। গতকাল বাগানের পরিচালনা কমিটি ও শ্রমিকদের মধ্যে একটি সভায় এ সিদ্ধান্ত আসে। 

জানা যায়, দুই সপ্তাহের মজুরি না পাওয়ায় গত ২০ মে থেকে চা বাগানে কাজে যোগ দিচ্ছে না ১৪১ জন শ্রমিক। বাগান কর্তপৃক্ষ জানায়, দেশের সব বাগানের মতো তারাপুর চা বাগানও প্রতিবছর কৃষি ব্যাংকের ঋণে চলে। তবে এ বছরের ৬ মে কৃষি ব্যাংক জানায় তারা ঋণ দিতে পারবে না।

এদিকে, চা পাতা বিক্রি করে ব্রোকারের কাছ থেকে পাওয়া প্রায় ৮ লাখ টাকা কৃষি ব্যাংকে থাকলেও তা উত্তোলন করতে পারছেন তা বাগান কর্তৃপক্ষ। এছাড়া বাগান পরিচালনা কমিটি গত কয়েকমাসে বাগান পরিচালনা করতে গিয়ে প্রায় ২৯-৩০ লাখ টাকা দেনা করে আর্থিক সংকটে পড়েছে। ফলে গত ২০ মে শ্রমিকদের জানিয়ে দেওয়া হয় তাদের ওই সপ্তাহের মজুরি দেওয়া সম্ভব না। এরপর থেকেই শ্রমিকরা চা পাতা উত্তোলনে যোগ দিচ্ছে না। 

এ অবস্থায় গতকাল বুধবার চা বাগানের বাংলোতে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসেন বাগান পরিচালনা কমিটি ও শ্রমিকরা। এ সময় শ্রমিকদের আশ্বাস দেওয়া হয় আজ বৃহস্পতিবার বকেয়া দুই সপ্তাহের মজুরি দেওয়ার। আর বাকি বকেয়া এক সপ্তাহের মজুরি আগামী সপ্তাহের মজুরির সঙ্গে দেওয়া হবে। এমন আশ্বাসে শ্রমিকরা আজ বৃহস্পতিবার থেকে কাজে যোগ দিতে রাজি হন। 

বিয়ষটি নিশ্চিত করে তারাপুর চা-বাগান পরিচালনা কমিটির সম্পাদক শান্তনু দত্ত শন্তু সিলেট মিররকে বলেন, ‘শ্রমিকদের সঙ্গে বুধবার বাগান পরিচালনা কমিটির একটি সভা হয়। সভায় আমরা তাদের আশ্বাস দেই বর্তমান সপ্তাহসহ বকেয়া তিন সপ্তাহের মজুরির মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার তাদের দুই সপ্তাহের মজুরি দেওয়া হবে ও বাকি বকেয়া এক সপ্তাহের মজুরি আগামী বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক মজুরির সঙ্গে তাদের দেওয়া হবে। এ সময় চা শ্রমিকরা আমাদের আশ্বাসে কাজে যোগ দিতে রাজি হন। আজ বৃহস্পতিবার থেকে তারা কাজ যোগ দেবেন।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘তবে এখনও আমরা ব্যাংক ঋণ বা আমাদের বিক্রিত চা পাতার টাকা পাইনি। পরিচালনা কমিটি নিজ উদ্যোগে শ্রমিকদের এই বকেয়া মজুরি পরিশোধ করছে। আমরা আগামী এক সপ্তাহ দেখব, এর মধ্যে যদি ব্যাংক ঋণ না পাই তাহলে জেলা প্রশাসকের কাছে দ্বারস্ত হয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিব।’ 

জানা গেছে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বাগান পরিচালনা কমিটির মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সভাপতি ড. নারায়ণ সাহা, সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট নিলন্দেু দে, সদস্য অ্যাডভোকেট বেদানন্দ ভট্টাচার্য, ডা. বনদ্বীপ লাল দাশ ও সম্পাদক সিটি কাউন্সিলর সান্তনু দত্ত সন্তু। এছাড়া শ্রমিকদের পক্ষে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা, তারাপুর চা বাগানের শ্রমিক নেতা চৈতন্য মোদী ও সুনীল মোদীসহ ১১ জন শ্রমিক নেতা উপস্থিত ছিলেন। 

এ বিষয়ে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা সিলেট মিররকে বলেন, ‘পরিচালনা কমিটির বকেয়া মজুরি দেওয়ার আশ্বাসে শ্রমিকরা আজ থেকে কাজে যোগ দেবেন। এছাড়া আমরা আশ্বাস পেয়েছি দ্রুত ব্যাংক ঋণও পাওয়া যাবে। এদিকে, জেলা প্রশাসক শ্রমিকদের দাবির প্রেক্ষিতে ৮-৯টি ঘর সংস্কার করে দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘বাগান না চললে চা শিল্পের ক্ষতি হবে। শিল্প ক্ষতি হলে শ্রমিকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই সার্বিক দিক বিবেচনা করে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেবেন। আর এক সপ্তাহ কাজ না করায় বাগানের চা পাতাগুলো বড় হয়ে গেছে। তাই বাগানের পরিচালনা কমিটির অনুরোধে শ্রমিকরা শুক্রবারও পাতা তুলবেন।’

 এনএইচ/আরসি-০৪