চাঁদা না দেওয়ায় মামলা, পালিয়ে বেড়াচ্ছেন দিনমজুর!

জকিগঞ্জ প্রতিনিধি


মে ২৭, ২০২১
১০:৫৬ অপরাহ্ন


আপডেট : মে ২৭, ২০২১
১১:২৭ অপরাহ্ন



চাঁদা না দেওয়ায় মামলা, পালিয়ে বেড়াচ্ছেন দিনমজুর!

সিলেটের জকিগঞ্জে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা না পেয়ে এক দিনমজুরকে মামলায় ফাঁসিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সিলেটের পুলিশ সুপারের কাছে দেওয়া লিখিত অভিযোগে এমনটাই জানিয়েছেন জকিগঞ্জের সীমেরবন্দ গ্রামের মৃত রইছ আলীর ছেলে হেলাল আহমদ। সুলতানপুর ইউনিয়নের মৃত জহির উদ্দিনের ছেলে জামাল আহমদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনা হয়েছে।

অভিযোগে হেলাল আহমদ জানিয়েছেন, গঙ্গাজল জায়ফরপুর গ্রামের জহির উদ্দিনের ছেলে জামাল আহমদের চাহিদা অনুযায়ী চাঁদার টাকা পরিশোধ করতে না পারায় জামালের দায়েরকৃত হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলায় তার ভাই দিনমজুর শাহজাহান আহমদ হয়রানি ও হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। উদ্দেশ্যমূলক বানোয়াট মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলার আসামি হয়ে শাহজাহান আহমদ এখন ফেরারি হয়ে দিন কাটাচ্ছেন। এমতাবস্থায় তাদের পরিবার চরমভাবে অনাহারে-অর্ধাহারে দিনযাপন করছে। গত ১৫ এপ্রিল রাত সাড়ে ৭টার দিকে জামাল আহমদকে তার বাড়ির সামনে মারধর করে জখম করা হয়। এ ঘটনার ৪/৫ দিন পরে জামাল শাহাজাহানের বাড়িতে গিয়ে তার মা খয়রুন নেসাকে জানান, শাহজাহান তাকে মারধর করেছে। তিনি মামলা দায়ের করবেন। তখন শাহাজাহানের মা ও পরিবারের লোকজন জামালের কাছে কান্নাকাটি করে রেহাই চান। তখন জামাল ৫০ হাজার টাকা চাঁদা চেয়ে তাদেরকে জানান, ঘটনাটি পুলিশসহ সাংবাদিকরা জেনে গেছেন। ৫০ হাজার টাকা দিলে সিস্টেম করে শাহজাহানকে বাঁচাতে পারবেন। কিন্তু অসহায় পরিবার জামালের চাহিদাকৃত চাঁদা দিতে না পারায় ক্ষিপ্ত হয়ে চলে যান জামাল। পরে শাহজাহানসহ অপর আরেকজনের বিরুদ্ধে থানায় ৩৪১/৩২৩/৩২৪/৩২৬/৩০৭/৩৭৯/৫০৬(২)/১১৪/৩৪ ধারায় মামলা দায়ের করেন তিনি। এ মামলায় শাহজাহানকে ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, মামলার এজাহারে উল্লেখিত ঘটনার সময় মাটিকাটার শ্রমিক শাহজাহান আহমদ সিসি ক্যামেরা দ্বারা বেষ্টিত বাবুর বাজারে ছিলেন। সিসি ক্যামেরায় শাহজাহানকে ঘটনার আগে থেকেই বাবুর বাজারে অবস্থান করতে দেখা গেছে। ঘটনাস্থল থেকে বাবুর বাজারের দূরত্ব প্রায় ২ কিলোমিটার। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বাজার বণিক সমিতির কাছ থেকে সংগ্রহ করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া ঘটনার আগে থেকেই শাহজাহানকে বাবুর বাজারে অবস্থান করতে দেখেছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল কাইয়ুম মুজিব, ইউপি সদস্য লুকন আহমদ, বাবুর বাজার বণিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ হাসান আহমদ, পশ্চিমবন্দ গ্রামের তজ্জমুল আলীর ছেলে বেবুল আহমদ, পশ্চিম গঙ্গাজল গ্রামের লতু মিয়ার ছেলে বুছুল আহমদ, পশ্চিমবন্দ গ্রামের আব্দুন নূরের ছেলে রুবেল আহমদ, সুন্দরারচক গ্রামের মৃত কালু মিয়ার ছেলে খোকনসহ বাবুর বাজারের বহু লোকজন।

অভিযোগে বলা হয়, এর আগেও জামাল অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করে শাহজাহানসহ এলাকার বেশ কয়েকজনকে মামলায় ফাঁসিয়েছেন। ওই সময়েও শাহজাহানের পরিবারের কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে ১০ হাজার টাকা আদায় করেছিলেন। কিন্তু চাহিদামতো টাকা না পাওয়ার কারণে পরে ডাকাতি মামলায় শাহজাহানকে অভিযুক্ত করেন। সেই মামলায় শাহজাহানের পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিষয়টির ব্যাপারে স্থানীয় সুলতানপুর ইউনিয়নের সদস্য তাজ উদ্দিন তাজন অবগত রয়েছেন।

জামালের দায়েরকৃত এজাহারে উল্লেখিত ঘটনার সময়ে ও এর আগে-পরে শাহজাহানের ব্যবহৃত মোবাইল ট্র্যাকিং করে এবং বাবুর বাজারের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে শাহজাহানকে হয়রানিমূলক মামলা থেকে রেহাই দেওয়ার দাবি জানিয়ে অভিযোগে বলা হয়, হয়রানির ভয়ে জামালের এহেন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পায় না। চাঁদাবাজ জামালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। জামালের বিরুদ্ধে তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে অনেক নিরীহ মানুষকে হয়রানির কথা।

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল কাইয়ুম মুজিব জানিয়েছেন, ঘটনার সময় শাহজাহান বাবুর বাজার থেকে কল করে তার কাছে এসে মাটির কাজের মজুরির টাকা গ্রহণ করেছে। সিসি ক্যামেরায়ও স্পষ্ট তাকে দেখা গেছে। নিরপরাধ মানুষকে মামলা দিয়ে হয়রানি করা কাম্য নয়।

সুলতানপুর ইউনিয়নের সদস্য তাজ উদ্দিন তাজন জানান, জামালের ঘরে ডাকাতির পর তিনি তাকে নিয়ে সিলেটের হাসপাতালে গেছেন। তখন জামাল কাউকে চিনতে পারেননি বলে জানান। এরপর শাহজাহানকে তার ডাকাতি মামলার সাক্ষী হতে চাপ দেন জামাল। কিন্তু অবশেষে শাহজাহানকে মামলার সাক্ষী না করে আসামি করে ফেলেন। ওই কথাবার্তার বিষয়ে তিনি অবগত আছেন। জামাল অযথা নিরীহ মানুষকে মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করছেন বলেও তিনি দাবি করেন।

বাবুর বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওলিউর রহমান বলেন, ঘটনার আগে থেকেই বাজারের সিসি ক্যামেরায় শাহজাহানকে দেখা গেছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পুলিশকে দেওয়া হয়েছে। শাহজাহান ঘটনার আগে থেকেই বাজারের ক্যামেরার সামনে ছিলেন। আমরা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে তাকে দেখেছি। তাই মামলার আসামি হওয়ার বিষয়টি রহস্যজনক মনে হচ্ছে।

এ ব্যাপারে মামলার বাদী জামাল আহমদ বলেন, সিসি ক্যামেরায় শাহজাহানকে দেখার কথা নয়। হয়তো সে হামলা করে বাবুর বাজারে গিয়েছে।

চাঁদা দাবির অভিযোগটি অস্বীকার করে তিনি জানান, শাহজাহানের পরিবারের কাছে তিনি চাঁদা দাবি করেননি। শাহজাহানকে ডাকাতি মামলায় তিনি সাক্ষী করার কথাও কখনও বলেননি। তাজন মেম্বার কি বলছেন না বলছেন তিনি সেটা জানেন না। মুঠোফোনে কথা বলার একপর্যায়ে তিনি উত্তেজিত হয়ে ওঠেন।

পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগকারী হেলাল আহমদ বলেন, জামালের চাহিদাকৃত চাঁদার টাকা পরিশোধ করতে পারলে এখন হয়তো মিথ্যা মামলায় তার ভাইকে হয়রানির শিকার হতে হতো না। জামাল মিথ্যা মামলা দিয়ে এলাকার বহু মানুষকে হয়রানি করেছেন। তার নাম শুনলে অসহায় মানুষ আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন। তিনি কথিত ডাকাতির ঘটনা সাজিয়ে অনেক নিরীহ মানুষকে হেনস্তা করেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তিনি এলাকায় সাধারণ মানুষকে হয়রানির হুমকি দেন। এলাকায় জামাল এক ভয়ঙ্কর নাম। জামালের চাঁদাবাজির ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে মামলা দায়ের করবেন বলে জানান।

এ বিষয়ে জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাসেম বলেন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ভালো করে দেখা হচ্ছে। ফুটেজ দিয়েছে শাহজাহানের পরিবারের লোকজন। তবে জামালের চাঁদা দাবির বিষয়ে পুলিশের কাছে কেউ অভিযোগ দেয়নি।

পুলিশ সুপারের কাছে দেওয়া অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তদন্তের জন্য এখনও অভিযোগটি আমাদের কাছে আসেনি।

এ ব্যাপারে জানতে সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন পিপিএম'র মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।


ওএফ/আরআর-০২