সীমান্তবর্তী জেলায় বাড়ছে সংক্রমণ, ঝুঁকিতে সিলেট

নিজস্ব প্রতিবেদক


মে ২৯, ২০২১
০৪:০০ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মে ২৯, ২০২১
০৪:০০ পূর্বাহ্ন



সীমান্তবর্তী জেলায় বাড়ছে সংক্রমণ, ঝুঁকিতে সিলেট

ঈদের পর থেকেই সিলেট জেলায় বাড়তে শুরু করেছে করোনার সংক্রমণ। বিশেষ করে সীমান্ত এলাকায় সংক্রমণের হার বেশি। এ অবস্থায় দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিলেটসহ ৩৭টি জেলাকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংক্রমণের হার এভাবে বাড়তে থাকলে অঞ্চলভিত্তিক লকডাউন দেওয়া প্রয়োজন হতে পারে। 

ঈদের পর করোনা সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হলেও শুরুতে মনে করা হচ্ছিল সারাদেশেই সংক্রমণ বাড়বে। অথচ সীমান্ত এলাকা চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও সিলেটে ব্যাপকহারে সংক্রমণ বাড়ছে। সিলেট জেলায় ১৪ মে থেকে ২০ মে পর্যন্ত এক সপ্তাহে ২৯২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত গত এক সপ্তাহে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৪৭০ জনের। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে সিলেটের তামাবিল, সুতারকান্দি, জকিগঞ্জ, চুনারুঘাটের বাল্লা, মৌলভীবাজারের ফুলতলা ও চাতলা দিয়ে প্রায় প্রতিদিন ভারত থেকে বাংলাদেশী নাগরিকরা প্রবেশ করছেন। আর তাদের কারণেই সিলেটের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। 

দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দেশের ৩৭টি জেলাকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এমন পরিস্থিতি আশংকাজনক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা মরে করছেন ঈদ কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানায় উদাসীনতা ও গাদাগাদি করে চলাচল করার কারণেই আশঙ্কাজনক হারে সংক্রমণ বেড়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে সংক্রমণ বাড়লেও ঈদের যাতায়াতকেন্দ্রিক নাকি নতুন ভ্যারিয়েন্টের কারণে সংক্রমণের বৃদ্ধি ঘটছে সেটি এখনও নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। আক্রান্ত এলাকার রোগীদের নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং ছাড়া এখনই এ ব্যাপারে কিছু বলা যাবে না বলে মনে করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বর্তমানে ৪০ শতাংশের ওপরে সংক্রমণ রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও খুলনায়। ২০ থেকে ২৯ শতাংশ সংক্রমণ রয়েছে সিলেট, ঝালকাঠি, রাজশাহী, নাটোর ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা এবং ফরিদপুরে। এছাড়া ১০ থেকে ১৯ শতাংশ সংক্রমণের হার রয়েছে দিনাজপুর, সিরাজগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ফেনী, রংপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, বরিশাল, সাতক্ষীরা, গাজীপুর বগুড়া, গোপালগঞ্জ, যশোর, মাদারীপুর চট্টগ্রাম, রাজবাড়ী, মাগুরা, নওগাঁ, কক্সবাজার, ভোলা, নড়াইল, লক্ষ্মীপুর, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, কুষ্টিয়া, ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া, নেত্রকোনা এবং টাঙ্গাইল। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় দত্ত সিলেট মিররকে বলেন, ‘হঠাৎ করেই সিলেটে সংক্রমণের হার বাড়ছে। গত বুধবারের রিপোর্টে সংক্রমণের হার ছিল প্রায় ২৩ শতাংশ। এটি উদ্বেগজনক। তবে যে হারে সংক্রমণ বাড়ছে সে হারে হাসপাতালে রোগী ভর্তি হচ্ছেন না। এই বিষয়টি আমাদের কাছে স্বস্তিদায়ক।’

এ অবস্থায় সিলেটে স্বতন্ত্রভাবে লকডাউন দেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা আরও কিছুদিন দেখব। যদি সংক্রমণের হার এভাবে বাড়তে থাকে তাহলে আমাদেরও অঞ্চলভিত্তিক লকডাউনের কথা চিন্তা করা লাগতে পারে।’ 

সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঈদের সময় মানুষজন স্বাস্থ্যবিধি না মেনে শপিং মল-বাজারে ভিড় করেছেন। গাদাগাদি করে বাড়ি ফিরেছেন। এটাই সংক্রমণ বাড়ার মূল কারণ। এছাড়া সিলেটের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত বন্ধ থাকলেও বেশ কয়েকজন দেশের অন্যান্য সীমান্ত দিয়ে সিলেটে এসেছেন। তাদের কেউ কেউ পজিটিভও হয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন দেশ থেকেও প্রবাসীরা দেশে এসেছেন। এটাও একটা কারণ হতে পারে।’

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) এবং করোনা সংক্রান্ত মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এসব জেলায় স্থলবন্দর ব্যতীত অন্য পথে লোক ঢুকছে বলেও শুনেছি। যদিও এখনও কোনো প্রমাণ আমাদের হাতে আসেনি। আমরা এ ব্যাপারে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর সিভিল সার্জন এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় পরিচালকদের সঙ্গে সভা করেছি। সভায় জেলাগুলোর প্রশাসনকে সীমান্তে নজরদারি আরও বাড়াতে বলা হয়েছে। 

আরসি-০১