নিজস্ব প্রতিবেদক
জুন ০৮, ২০২১
০৫:০১ পূর্বাহ্ন
আপডেট : জুন ০৮, ২০২১
০৫:০১ পূর্বাহ্ন
বর্ষা এলেই শুরু হয় জলাবদ্ধতা নিয়ে দুঃশ্চিন্তা। এবার প্রাক বর্ষাকালে সিলেটে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত না হলেও বর্ষাকালে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়বে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তাই বর্ষাকাল শুরুর ঠিক পূর্ব মুহূর্তে সিলেট নগরবাসীর মন জলাবদ্ধতা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
প্রতি বছর বর্ষায় প্রায়ই কয়েক ঘণ্টা জলমগ্ন থাকে নগরের নিচু অনেক এলাকা। তাই এবারও নগরের নিচু এলাকার বাসিন্দারা জলাবদ্ধতার শঙ্কায় আছেন। একদম শঙ্কাহীন হন উচু এলাকার বাসিন্দারাও। তবে সিসিক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জলাবদ্ধতার মূল কারণ নগরের খাল-ছড়ায় মানবসৃষ্ট আর্বজনার স্তুপ। এসব পরিষ্কারে তারা কাজ করছেন। কাজ শেষ হলে এবার আগের মতো জলাবদ্ধতা হবে না।
সিলেটে বর্ষায় কয়েক ঘণ্টা একটানা বৃষ্টি হলেই নগরের অনেক অঞ্চলে বাসা-বাড়িতে পানি ঢুকে পড়ে। লোহারপাড়া, তালতলা, কাজলশাহ, শেখঘাট, কুয়ারপাড়, জামতলা, ঘাসিটুলা, হাউজিং এস্টেট, মিরাবাজার, সাপ্লাই, ভার্থখলা, বাগবাড়ি, টিলাঘর, চৌহাট্টা সড়ক ও জনপদ অফিসের সামনের সড়কসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা জলমগ্নতার ভুক্তভোগী। এছাড়া সুরমার পানি বৃদ্ধি পেয়ে সাময়িক বন্যা হয় মাছিমপুর, কুশিঘাট, কালীঘাট সহ নগরের অনেক এলাকায়।
সিলেট নগরের ওপর দিয়ে সুরমা নদী বয়ে গেছে। সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় ছোট-বড় ২৫টি ছড়া রয়েছে। উত্তরে টিলা এলাকা থেকে এসব ছড়া নগর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দক্ষিণে সুরমা নদীতে গিয়ে মিলিত হয়েছে। ছড়াগুলো নগরের প্রাকৃতিক নালা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আর এসব ছড়ার সঙ্গে সংযোগ রয়েছে ছোট-বড় ড্রেনের। ছড়া ও ড্রেনে মানবসৃষ্ট আবর্জনা ফেলা এবং অনেক জায়গায় ছড়া-নালা দলখ করে নেওয়ায় পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। এতে করে নগরে টানা কয়েকঘণ্টার বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। তবে ছড়া ও খালে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে সিসিকের অভিযান চলমান রয়েছে।
নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নগরের ছোট-বড় ছড়ার পাশেই তৈরি হয়েছে বাসা-বাড়ি ও বস্তি। এসব বাসা-বাড়ি ও বস্তির ময়লা আবর্জনা গিয়ে পড়ছে ছড়ায়। এতে করে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। জলাবদ্ধ এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, বর্ষা আসায় তারা শঙ্কায় আছেন। কারণ প্রতি বছর বর্ষায় তাদের ঘরে পানি ঢুকে আসবাবপত্র নষ্ট হয়। এছাড়া ড্রেনের পানি ঘরে ঢুকায় দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়, ছড়ায় নানা রোগজীবানুও।
সিসিক সূত্রে জানা গেছে, নগরের নিচু এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে পাম্প বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে বর্ষা চলে আসায় এ বছর কাজ করা সম্ভব নয়। তাই এসব এলাকায় জলাবদ্ধতার সমস্যা কিছুটা থাকবে। তবে এবার নগরের খাল ও ছড়া পরিষ্কারে সিসিকের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কঠোরভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, জুনের প্রথম ৬ দিনে সিলেটে ২০৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যেখানে মে মাসে হয়েছিল ৩৪২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত। সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ আবহওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী সিলেট মিররকে বলেন, ‘প্রাক বর্ষাকালে বৃষ্টিপাত কম হলেও বর্ষাকালে বৃষ্টি হবে। আসামি কয়েকদিন সিলেটে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে।’
নগরে জলাবদ্ধতা সম্পর্কে জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান সিলেট মিররকে বলেন, ‘টানা কয়েক ঘণ্টা বৃষ্টিপাত হলে কিছু এলাকায় পানি জমে যায়। কারণ আমরা যেসব নালা তৈরি করেছি তা দিয়ে পানি যেতে কিছু সময় লাগে। তবে নগরে জলাবদ্ধতার মূল কারণ হচ্ছে খাল, ছড়া, ড্রেনে মানবসৃষ্ট ময়লা আবর্জনা। ময়লা আবর্জনার কারণে পানি আটকে থাকে। তাই আমাদের পরিছন্নতাকর্মীদের বলা হয়েছে তারা যাতে খাল, ছড়া ও ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার রাখেন। তবুও অনেক জায়গায় ময়লা আবর্জনার স্তুপ দেখা যায়। তাই এখানে নগরবাসীর দায়িত্বও রয়েছে। তাদের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে তারা যাতে ময়লা আবর্জনা ছড়া-খালে না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিচু এলাকার জলাবদ্ধতার সমস্যা এ বছর নিরসন হচ্ছে না। কারণ নিচু এলাকায় পাম্প স্থাপন করে জমে থাকা বৃষ্টির পানি খালে ফেলতে হবে। এবার আমরা পাম্প বসানোর কাজ করতে পারছি না। আশাকরি শুষ্ক মৌসুমে আমরা এ কাজ করতে পারব। তবে আগে যেভাবে একটু বৃষ্টি হলে নগরের অনেক এলাকা ডুবে যেত। এবার তা হবে না। হয়ত কিছু সময় পানি থাকবে। পরে নেমে যাবে।’
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ শহিদুজ্জামান সরকার বলেন, ‘আসামি ৯, ১০ ও ১১ জুন সিলেটে ভারী বৃষ্টিপাতের শঙ্কা রয়েছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের হিসেব অনুযায়ী ১১ জুন পর্যন্ত সিলেটের সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করার শঙ্কা দেখা যাচ্ছে না।’
এনএইচ/আরসি-০৩