সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় মসজিদের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক


জুন ১০, ২০২১
১২:৩১ অপরাহ্ন


আপডেট : জুন ১০, ২০২১
০৪:২৯ অপরাহ্ন



সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় মসজিদের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
# নয় হাজার কোটি টাকার মডেল মসজিদ

সরকারি উদ্যোগে দক্ষিণ সুরমায় নির্মিত জেলার প্রথম মডেল মসজিদটি আজ বৃহস্পতিবার (১০ জুন) উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোয়া ১১টার দিকে গণভবন থেকে একযোগে আধুনিক ও সুসজ্জিত এসব মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। 

এই মডেল মসজিদ করতে ব্যয় হচ্ছে আট হাজার ৭২২ কোটি টাকা। প্রতি জেলা, উপজেলা এবং উপকূল এলাকায় মসজিদগুলো তৈরি হচ্ছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে দক্ষিণ সুরমা ছাড়াও বিভাগে মোট ৪৩টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে দক্ষিণ সুরমা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশে ৪০ শতক জায়গার উপর নির্মিত দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি প্রথম উদ্বোধন হচ্ছে। অন্য মসজিদগুলোর নির্মাণ কাজ চলমান আছে বলে জানিয়েছে গণপূর্ত বিভাগ। 

ইসলামী শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য প্রচারের লক্ষ্যে নির্মাণাধীন প্রতিটি মসজিদে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ কোটি ৪১ লাখ থেকে ১৫ কোটি কোটি ৬১ লাখ টাকা। বিভাগে সবমিলিয়ে ৫৮৫ কোটি ৭৭ লাখ ৪৪ হাজার টাকা ব্যয়ে সিলেট বিভাগের সবগুলো মসজিদ নির্মাণ হবে। 

সারাদেশে এরকম ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। সবগুলো মসজিদের নকশা একইরকম। নির্মাণশৈলী দেখে সহজে বুঝা যায় এটি বিশেষ ধরনের মসজিদ। ইসলামিক ফাউন্ডেশন সিলেটের পরিচালক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ জানান, ইসলামী শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য প্রসারে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় মডেল মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণ করছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে প্রথমধাপে যেসব মসজিদ নির্মাণ হচ্ছে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা মসজিদ এর মধ্যে অন্যতম। 

দক্ষিণ সুরমা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইফুল আলম বলেন, ‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম ইসলামের প্রচার ও প্রসারে ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠাসহ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। তারই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসলামী শিক্ষার প্রসার ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনে মডেল মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন। এটি বাংলাদশ তথা বিশ্বের ইতিহাসে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে গণপূর্ত অধিদপ্তর এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত সুবিশাল এসব মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক ভবনে নারী ও পুরুষের আলাদা ওজু ও নামাজ আদায়ের সুবিধা থাকবে। থাকবে লাইব্রেরি, গবেষণা কেন্দ্র, ইসলামিক বই বিক্রয় কেন্দ্র, কোরআন হিফজ বিভাগ, শিশু শিক্ষা, অতিথিশালা এবং বিদেশি পর্যটকদের আবাসন। এছাড়া মৃতদেহ গোসলের ব্যবস্থা, হজযাত্রীদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণ, ইমামদের প্রশিক্ষণ, অটিজম কেন্দ্র, গণশিক্ষা কেন্দ্র, ইসলামী সংস্কৃতি কেন্দ্রও থাকবে এই কমপ্লেক্সে। ইমাম-মুয়াজ্জিনের আবাসনসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অফিসের ব্যবস্থা এবং গাড়ি পার্কিং সুবিধাও রাখা হয়েছে মডেল মসজিদে। 

ইসলামিক ফাউন্ডেশন সূত্র আরও জানায়, সিলেট বিভাগে মোট ৪৩টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হবে। প্রত্যেক উপজেলায় একটি ও জেলা সদরে একটি মডেল মসজিদ নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ১৪টি রয়েছে। যার মধ্যে ১৩ উপজেলায় ১৩টি এবং জেলা সদরে একটি। সুনামগঞ্জ জেলার ১১টি উপজেলাসহ ১২টি, হবিগঞ্জ জেলায় ৮ উপজেলাসহ ৯টি এবং মৌলভীবাজার জেলায় ৭ উপজেলাসহ ৮টি মসজিদ নির্মাণ হবে। 

সিলেট গণপূর্ত অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী ইকবাল শিকদার জানান, জেলা সদরে মডেল মসজিদ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ কোটি ৬১ লাখ ৮১ হাজার টাকা। উপজেলা মডেল মসজিদ নির্মাণ ব্যয় ১৩ কোটি ৪১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি মসজিদ একই ডিজাইনে নির্মিত হবে। 

দক্ষিণ সুরমা মসজিদ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি একনজর দেখতে ভিড় করছেন মুসল্লিরা। ছবি তোলায় ব্যস্ত অনেকে। সাইদুর রহমান নামের এক যুবক সেখানে ছবি তুলছিলেন। তিনি জানান, দৃষ্টিনন্দন এমন মসজিদ সিলেটে আর কোথাও নেই। যে লক্ষ্য নিয়ে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে তা বাস্তবায়িত হলে সবাই উপকৃত হবে। জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র হবে এই মসজিদ। 

জেলা সদর ও সিটি করপোরেশন এলাকার মসজিদগুলোতে একসঙ্গে ১ হাজার ২০০ মানুষ নামাজ আদায় করতে পারবেন। উপজেলা ও উপকূলীয় এলাকার মডেল মসজিদগুলোতে একসঙ্গে ৯০০ মানুষের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা থাকবে। 

মসজিদ নির্মাণের পর ইসলামিক ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধানে এসব মসজিদ পরিচালিত হবে। মসজিদের খতিব, ইমাম, মোয়াজ্জিন, খাদেম সবাই সরকারি বেতনভুক্ত হবেন। 

প্রকল্প পরিচালক নজিবুর গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘দুই বছরের মধ্যে ৫৬০টি মডেল মসজিদের সবগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে যাবে। নির্মাণ শেষ হওয়া ৫০টি মসজিদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন বৃহস্পতিবার। এর মধ্যে সিলেট বিভাগে কাজ শেষ হওয়া একমাত্র মডেল মসজিদ দক্ষিণ সুরমায়। সেটিও একইসঙ্গে উদ্বোধন করবেন তিনি।’

২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে উন্নত মসজিদ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন শেখ হাসিনা। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্র স্থাপন (১ম সংশোধিত) প্রকল্প গ্রহণ করা হয়; যা পদ্মাসেতুর পর দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প। 

প্রকল্প কর্মকর্তা জানান, ৪০ শতাংশ জায়গার উপর তিন ক্যাটাগরিতে এসব মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। জেলা পর্যায়ে চারতলা, উপজেলার জন্য তিনতলা এবং উপকূলীয় এলাকায় চারতলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সংস্কৃতি কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। 

‘এ’ ক্যাটাগরিতে জেলা শহর এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় ৬৯টি চারতলা মডেল মসজিদ নির্মিত হচ্ছে। এই মসজিদগুলোর প্রতি ফ্লোরের আয়তন ২ হাজার ৩৬০ বর্গমিটার। ‘বি’ ক্যাটাগরিতে উপজেলা পর্যায়ে ৪৭৫টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। এগুলোর প্রতি ফ্লোরের আয়তন ১ হাজার ৬৮০ বর্গমিটার এবং ‘সি’ ক্যাটাগরিতে উপকূলীয় এলাকায় ১৬টি মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। এগুলোর প্রতি ফ্লোরের আয়তন ২ হাজার ৫২ বর্গমিটার। 

এসএইচ/আরসি-০৭