লকডাউন নিয়ে দুই পক্ষের চাপে সরকার

সিলেট মিরর ডেস্ক


জুলাই ২৭, ২০২১
১০:০৩ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুলাই ২৭, ২০২১
১০:০৩ পূর্বাহ্ন



লকডাউন নিয়ে দুই পক্ষের চাপে সরকার

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু উর্ধ্বগতির কারণে দেশে চলছে ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধের আলোকে লকডাউন। সংক্রমণ রোধে ও মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি হ্রাসের লক্ষ্যে এই কঠোর লকডাউন প্রতিপালনে একদিকে জাতীয় কমিটি ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সরকারের ওপর চাপ আছে। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা দাবি জানাচ্ছেন কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেই কলকারখানা খুলে দেওয়ার জন্য।

জাতীয় কমিটি ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মতে, লকডাউন বাস্তবায়ন করা গেলে স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে নাগরিকদের রক্ষা করা যাবে। না হয় হাসপাতালগুলোর পক্ষে করোনা আক্রান্ত রোগীর চাপ সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। বিপরীতে ব্যবসায়ীরা কলকারখানা খুলে দেওয়ার পাশাপাশি ক্ষতি কাটাতে ব্যবসায়ীরা নতুন করে প্রণোদনার দাবিও জানাচ্ছেন।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকার পড়েছে উভয় সংকটে। এমন অবস্থার মধ্যে আজ মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) দুপুরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠক বসার কথা রয়েছে।

গার্মেন্টস শিল্পমালিকদের বেশির ভাগ আগামী ১ আগস্ট থেকে কর্মীদের কাজে যোগদানের বার্তা দিয়ে ঈদের ছুটি দিয়েছেন। অনেক কারখানার গেটেও এই বার্তা টানানো হয়েছে। এসব তথ্য সরকারের দায়িত্বশীলরা জানেন। সরকারের ওপর এটি ব্যবসায়ীদের পরোক্ষ চাপ বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সরকার ইচ্ছা করে লকডাউন দেয়নি। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ যাতে সরকারের সক্ষমতার বাইরে চলে না যায়, সে জন্যই এটি করা। পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করলে শিল্প-কলকারখানা খুলে দেবে সরকার।

এদিকে লকডাউন অব্যাহত রাখা হলে ব্যাপক ক্ষতির কথা উল্লেখ করে সরকারের কাছে নতুন করে প্রণোদনার প্রতিশ্রুতি চাইছে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো।

বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘লকডাউন শিথিল করার কোনো ইশারা আমরা এখনো পাইনি। আমদানি-রপ্তানি অব্যাহত রাখলেও কারখানা বা অফিসে গিয়ে কর্মকর্তারা কাগজপত্র তৈরি করে বন্দরে পাঠাতে পারছেন না। ফলে বন্দরে কনটেইনার জট লেগে গেছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ বাড়তি জরিমানার হুমকি দিচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘টানা এত দিন কলকারখানা বন্ধ রাখায় ঈদের আগেই আমরা সরকারকে লিখিতভাবে প্রণোদনা দেওয়ার কথা জানিয়েছি। ৫ আগস্টের পর চালু হলে কলকারখানা খুলতে আরও দু-তিন দিন লাগবে। বেতন দেওয়ার সময়ও হবে তখন। দীর্ঘদিন কারখানা বন্ধ থাকলে আমরা শ্রমিকদের বেতন দেব কোথা থেকে?’

করোনাসংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মোহাম্মদ শহিদুল্লা বলেন, ‘আমাদের কথা পরিষ্কার। সব সময় লকডাউন দেওয়া কোনো সমাধান নয়। কিন্তু বিশেষ পরিস্থিতিতে যখন প্রয়োজন তখন লকডাউন না দিয়ে উপায় নেই। বর্তমানে সেই পরিস্থিতির সম্মুখীন আমরা। তাই চলমান লকডাউন ৫ আগস্ট পর্যন্ত চালাতেই হবে।’

তিনি বলেন, ‘জীবন-জীবিকার কথা চিন্তা করে লকডাউনে ছাড় দিতে হবে। বর্তমান কঠোর লকডাউনের পর কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যবস্থা অবশ্যই করতে হবে। সরকার সেই ব্যবস্থা মানুষের মাথায় হাত বুলিয়ে করবে নাকি শাস্তি দিয়ে করবে, সেটা সরকারের বিষয়।’

হুঁশিয়ারি দিয়ে এই বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, ‘যারা কলকারখানা খোলার জন্য সরকারকে চাপ দিচ্ছেন তাঁদের কাছের মানুষ যখন আক্রান্ত হবে, মারা যাবে, তখন হয়তো তাঁদের বোধোদয় হবে।’

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, ‘মহামারি নিয়ন্ত্রণে চলমান লকডাউনের মধ্যে কোনো শিল্প-কারখানা খুললে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মাঠ প্রশাসনকে এমন নির্দেশনা দেওয়া আছে। সংক্রমণ যে গতিতে ছড়াচ্ছে, কঠোর বিধি-নিষেধের বিকল্প নেই। লকডাউনের মধ্যে পোশাক কারখানা খোলা নিয়ে সরকারের এখন পর্যন্ত কোনো চিন্তা-ভাবনাও নেই।’

সূত্র: কালের কণ্ঠ

আরসি-০৬