গোয়েন্দাদের কবজায় মডেল পিয়াসার ১৭ ভিডিও!

বিনোদন ডেস্ক


আগস্ট ০৪, ২০২১
১২:২২ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ০৪, ২০২১
১২:২৩ অপরাহ্ন



গোয়েন্দাদের কবজায় মডেল পিয়াসার ১৭ ভিডিও!

বিপথগামী মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার অধীনে ছিল ১০০ লাস্যময়ী। তাদের দিয়ে প্রভাবশালীদের নিজের ফাঁদে ফেলতেন পিয়াসা। ব্ল্যাকমেইলিংয়ের মাধ্যমে দিনের পর দিন তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অঙ্কের টাকা। পিয়াসার ব্ল্যাকমেইলিংয়ের ১৭টি ভিডিও গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে।

এসব ভিডিওতে দেশের অনেক প্রভাবশালীর উপস্থিতি থাকায় রীতিমতো বিব্রতবোধ করছেন তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা। তাঁরা বলছেন, ভিডিওগুলো প্রকৃতপক্ষেই আসল কি না তা যাচাই-বাছাই করার প্রয়োজন রয়েছে। এসব ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলারও প্রয়োজন।

অন্যদিকে, গরু আমদানির নামে মাদক চোরাচালান ব্যবসায় পিয়াসার সম্পৃক্ততার বিষয়টি উঠে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজধানীর ৩০০ ফুট এলাকায় গ্রেপ্তার পিয়াসা তার ‘ডেইরি সান’ নামের গরুর ফার্মের ব্যানারে মিয়ানমার থেকে গরু আমদানি করতেন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে এসব গরুর পেটে ইয়াবার চালান আনতেন তিনি। সোনা চোরাচালান সিন্ডিকেটের সঙ্গেও পিয়াসা সম্পৃক্ত ছিলেন।

গোয়েন্দা সূত্র বলছে, অভিজাত ফেরারি, বিএমডাব্লিউ এবং মার্সিডিস গাড়ি ব্যবহার কিংবা আলিশান জীবন যাপনের জন্য টাকার উৎসের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি পিয়াসা। তবে একটি শোরুমে রাখা পিয়াসার ফেরারি গাড়িটি জব্দ করা হবে। বারিধারায় আড়াই লাখ টাকায় চার হাজার স্কয়ারফুটের বাসার সিসিটিভি ক্যামেরায় ডিভিআর সংগ্রহ করেছেন তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা। সেই বাসায় মাঝেমধ্যেই বসত নাচ-গানের ডিজে পার্টি। বসানো হতো সুন্দরীদের হাট। অতিথিরা পছন্দ অনুযায়ী বেছে নিতেন।

কাস্টমস বিভাগের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর মেয়ে পিয়াসার লেখাপড়ার গণ্ডি মাত্র উচ্চ মাধ্যমিক। অল্প শিক্ষিত হয়েও একটি টেলিভিশন চ্যানেলের ঊর্ধ্বতন পদ বাগিয়ে নেন তিনি। চ্যানেলটির দুই শতাংশ শেয়ারও কবজায় নিয়েছিলেন পিয়াসা। যদিও অল্পদিনে পিয়াসার বিরুদ্ধে বিভিন্ন পেশার অনেককে ব্ল্যাকমেইল করার অভিযোগ ওঠায় তাকে সেই পদ থেকে বরখাস্ত করে কর্তৃপক্ষ। পরে চ্যানেলটিতে তার দুই শতাংশ শেয়ারও হস্তান্তর করতে বাধ্য করা হয় পিয়াসাকে।

ডিবির যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ গণমাধ্যমকে বলেন, পিয়াসাকে পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন এমন অনেকের নাম আমরা পেয়েছি। পিয়াসা তাদের নাম বলেছেন। পিয়াসার কাছ থেকে স্পর্শকাতর কিছু ডকুমেন্টস উদ্ধার করা হয়েছে। বিএনপিপন্থী দুই শীর্ষ ব্যবসায়ীর নাম বিভিন্নভাবে উঠে আসছে। তারা খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন পিয়াসার। এখন এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

সূত্র বলছে, শুধু মাদক নয়, অস্ত্র ব্যবসায়ও পিয়াসা জড়িয়েছিলেন- এমন অভিযোগও উঠেছে। পিয়াসা বিভিন্ন সময় ফেসবুক আইডিতে এসব ছবি পোস্ট করেছেন। তার এসব অবৈধ ব্যবসায় যাদের নাম উঠে আসছে তাদের তালিকাও হচ্ছে। শিগগিরই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের ডাকা হবে। বর্তমানে কারাবন্দি তৎকালীন প্রভাবশালী পুলিশ কর্মকর্তা ডিআইজি মিজানের সঙ্গে বিশেষ সখ্যের কারণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের থোরাই কেয়ার করতেন পিয়াসা। ২০১৮ সালে বনানীতে এসবির পরিদর্শক মামুন খুনের ঘটনায় তার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠলেও তদন্তে পিয়াসার নাম আসেনি। ডিআইজি মিজানের কারণে ব্যক্তিগত শত্রুকে পুলিশি ভয় দেখাতেন এবং হেনস্তাও করতেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেছেন, অনেক প্রভাবশালীর সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে দীর্ঘদিন ধরেই ইয়াবা ব্যবসা করতেন পিয়াসা। ভারত এবং মিয়ানমার থেকে আমদানি করা গরুর পেটে করে তিনি ইয়াবা নিয়ে আসতেন।

প্রসংগত, রবিবার (০১ আগস্ট) রাতে রাজধানীর বারিধারা এলাকার ৯ নম্বর রোডে মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় পিয়াসার ঘরের টেবিল থেকে চার প্যাকেট ইয়াবা জব্দ করে ডিবি। পরে তার রান্নাঘরের ক্যাবিনেট থেকে ৯ বোতল বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়। অভিযানের একপর্যায়ে ফ্রিজ খুলে একটি আইসক্রিমের বাক্স থেকে সিসা তৈরির কাঁচামাল ও বেশ কয়েকটি ই-সিগারেট পাওয়া যায়।

ডিবি সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের মে মাসে বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার এজাহারে নাম ছিল ফারিয়া মাহাবুব পিয়াসার। সেই মামলার আসামি তার সাবেক স্বামী বলেও দাবি করেন পিয়াসা। এনটিভির রিয়ালিটি শো ‘সুপার হিরো সুপার হিরোইন’র প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া পিয়াসা দু-একটি বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করেন। কয়েক বছর ধরে হাই সোসাইটিতে ব্ল্যাকমেইলিং কারবারে জড়িয়ে পড়েছেন তিনি। মৌ মিডিয়ায় প্রতিষ্ঠা পাননি। তবে মডেল পরিচয় দিয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কয়েকটি পরিবার পুলিশের কাছে পার্টির ফাঁদে ফেলে জিম্মি করে টাকা এবং বিভিন্ন সুবিধা আদায়ের অভিযোগ করেছে। তবে সেসব পরিবারের পরিচয় প্রকাশ করেননি ডিবির কর্মকর্তারা।

সোমবার গুলশান থানায় দায়ের করা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পুলিশের মামলায় পিয়াসাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন ডিবির তদন্ত কর্মকর্তারা। ঢাকা মহানগর হাকিম আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বর্তমানে তিনি রিমান্ডে আছেন।