সিলেট মিরর ডেস্ক
আগস্ট ১৩, ২০২১
০৪:৫১ পূর্বাহ্ন
আপডেট : আগস্ট ১৩, ২০২১
০৪:৫১ পূর্বাহ্ন
সারা বিশ্বেই বৈবাহিক ধর্ষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন নারীরা। বৈবাহিক ধর্ষণের অভিযোগে নারীরা মামলাও করছেন। সম্প্রতি এক নারীর করা বৈবাহিক ধর্ষণের মামলার রায়ে বলা হয়েছে, ‘স্ত্রীর সঙ্গে যৌন মিলনেও সম্মতি লাগবে।’
এক যুগান্তকারী রায়ে গত সপ্তাহে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় কেরালা রাজ্যের হাইকোর্ট বলেছে, ‘কোনো নারী এবং পুরুষের মধ্যে যৌন মিলন ঘটার ক্ষেত্রে সম্মতি থাকতেই হবে, তারা বিবাহিত হোক বা না হোক।’ যে মামলায় এই রায় দেওয়া হয়েছে - তার আবেদনকারী মহিলা বলেছিলেন, তিনি অসুস্থ থাকলেও তার স্বামী তাকে নিয়মিত যৌন মিলনে বাধ্য করতেন।
কেরালা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি কওসার এডাপ্পাগাথ এবং বিচারপতি এ মুহাম্মদ মুস্তাক তাদের রায়ে বলেন, স্ত্রীর সম্মতি ছাড়া স্বামীর এই কর্মকাণ্ড বৈবাহিক ধর্ষণের পর্যায়ে পড়ে। তারা রায়ে আরও বলেন, এই বৈবাহিক ধর্ষণ বিবাহ বিচ্ছেদেরও ন্যায়সংগত কারণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
ভারতে বৈবাহিক ধর্ষণ, অর্থাৎ যেখানে ধর্ষিতা ও ধর্ষকের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক থাকে, সেটাকে কোনো অপরাধ বলে গণ্য করা হয় না। কিন্তু কেরালা হাইকোর্ট তাদের রায়ে বলছে, এটাকে চরম নৃশংসতা বলে গণ্য করাই যায় - যার ভিত্তিতে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদনও মঞ্জুর করা সম্ভব।
কলকাতায় নারী অধিকার কর্মী ও অধ্যাপক শ্বাশ্বতী ঘোষ মনে করছেন, ভারতীয় উপমহাদেশের পটভূমিতে এই রায় অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ - কারণ এখানে যৌন মিলনের ক্ষেত্রে স্ত্রীর সম্মতিও যে জরুরি, সেই স্বীকৃতিটারই অভাব আছে।
বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘এই বিশেষ মামলাটিতে স্ত্রী অভিযোগ করেছেন ১২ বছর ধরে তিনি স্বামীর অন্যায় যৌন আকাঙ্ক্ষা মেটাতে গিয়ে ক্লান্ত - কিন্তু এর বিরুদ্ধে দু'দুবার পারিবারিক আদালতে গিয়েও তিনি কোনো প্রতিকার পাননি।’
মামলার বিবরণী উল্লেখ করে শ্বাশ্বতী ঘোষ আরও বলেন, যৌন মিলনে বাধ্য করার সময় তার স্বামী খেয়ালই করতেন না যে স্ত্রী অসুস্থ কি-না। এমন কী তার স্ত্রীর মা যেদিন মারা যান, সে দিনও তিনি তাকে যৌন মিলনে বাধ্য করেছেন - নিজেদের মেয়ের সামনেও মিলিত হয়েছেন। এমন চরম নৃশংসতাও আইনের চোখে এত দিন অপরাধ ছিল না - এটাই আক্ষেপের।
ভারতের নারী অধিকার কর্মীরা প্রায় এক সুরেই বলছেন, ভারত-সহ এ অঞ্চলের পাকিস্তান, বাংলাদেশ সব দেশেই সামাজিকভাবে একটা ধারণা প্রচলিত আছে যে বিবাহিত স্ত্রী-রা বৈবাহিক ধর্ষণের বিরুদ্ধে মুখ খুললে 'পরিবার'-এর ধারণাটাই ভেঙে পড়বে। কেরালা হাইকোর্টের রায় সেই ধারণাকে কিছুটা হলেও পাল্টাতে সাহায্য করবে বলে তাদের অনেকেই আশা করছেন।
শাশ্বতী ঘোষের কথায়, ‘ভারতের জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য জরিপেও (ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে) এই সমস্যার ব্যাপকতা বারেবারে ধরা পড়েছে। ভারতের অসংখ্য নারী পারিবারিক সংস্কারের চাপে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছেন বৈবাহিক ধর্ষণের শিকার হওয়াটাই তাদের ভবিতব্য - কারণ যে কোনও সময়, যখন খুশি যৌন মিলন স্বামীর অধিকার। তাদেরও যে কখনো কখনো অসম্মতি জানানোর অধিকার আছে, সেটাই আসলে স্ত্রীদের ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
কেরালা হাইকোর্টের ঐতিহাসিক রায় ভারতীয় সমাজ ও পরিবার ব্যবস্থার সেই 'ট্যাবু' বা নিষিদ্ধ বিষয়কে অন্তত আলোচনা ও চর্চার কেন্দ্রে আনবে বলেই অ্যাকটিভিস্টরা আশা করছেন।
আরসি-০২
সূত্রঃ বিবিসি