সিলেট মিরর ডেস্ক
আগস্ট ২১, ২০২১
১১:৩১ অপরাহ্ন
আপডেট : আগস্ট ২১, ২০২১
১১:৩১ অপরাহ্ন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার জন্য পুনরায় তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকতাকেই অভিযুক্ত করে বলেছেন, সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এটা হতে পারে না।
তিনি বলেন, ‘আলামত ধ্বংস, খুনিদের পালাতে সহায়তা করা এবং বিচারকে অন্য খাতে প্রবাহিত করার যে অপচেষ্টা, তাতেই এটি স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়।’ খালেদা জিয়াও ঘটনা সম্পর্কে আগেই অবহিত ছিলেন, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
২১ শে আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ১৭তম বার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওই দিন রাত ১১টার দিকে চারজনকে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের একটি বিমানে করে খালেদা জিয়ার সরকার দেশ থেকে বাইরে পাঠিয়ে দেয়। তাঁদের মধ্যে তাজউদ্দীন ছিলেন, একজন কারারক্ষী এবং শোনা যায় কর্নেল রশিদ এবং ডালিম সে সময় ঢাকায় এসেছিলেন এবং খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার তত্ত্বাবধানে ছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘ডিজিএফআই, এনএসআইসহ গোয়েন্দা সংস্থা ও পুলিশ সবাই এর সঙ্গে জড়িত ছিল। কাজেই, তারাই এদের রক্ষা করে এবং দেশ থেকে বাইরে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। কারণ, যখন তারা জানল যে আমি মরি নাই, বেঁচে আছি, তখন তারা দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল।’
একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনায় তৎকালীন বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সাবেক জজ সাহেবকে দিয়ে একটা তদন্ত কমিটি করা হলো। তখন সেই তদন্ত কমিটির রিপোর্টে আবিষ্কার করল যে, পাশের দেশের গোয়েন্দা সংস্থা এসে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। পাশের দেশের গোয়েন্দা সংস্থা এসে যদি এভাবে এতগুলো গ্রেনেড শহরের ভেতরে মেরে যেতে পারে তাহলে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কী করছিল।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সে সময় সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কী করছিল? তারা কী নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছিল? তাহলে তারা দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে কীভাবে? আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষাকারী সশস্ত্র বাহিনী, আমাদের বিডিআর, আমাদের পুলিশ তারা কী করছিল?’
তিনি বলেন, ‘আক্রমণকারীদের রক্ষা করার জন্য সেদিন ভয়াবহতার মধ্যেই পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারগ্যাস মেরেছে। সব আলামত সিটি করপোরেশনের গাড়ি দিয়ে ধুয়ে নষ্ট করা হয়েছে। একটা গ্রেনেড অবিস্ফোরিত রয়ে যায়, সেটিও সংরক্ষণের কথা বলায় একজন অফিসারকে ধমকানো হয়। পরে তাকে নির্যাতনও করা হয়েছে। একটা সরকারের সহযোগিতা না থাকলে তো এমন হতে পারে না।’
২১ আগস্টের ক্ষেত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আগস্ট মাস আসেই শোক ব্যথা বেদনা নিয়ে। ১৫ আগস্ট জাতির পিতা, ভাই বোনসহ সবাইকে হারালাম। ২১ আগস্ট ২০০৪ আমাদের চরম যন্ত্রণা ও কষ্টের। বিএনপির অত্যাচারটা শুরু হয়েছে ১ অক্টোবর ২০০১ থেকেই। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মতোই নির্যাতন শুরু করেছিল। বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর হামলা হলো।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ওই ঘটনার প্রতিবাদ করলাম। সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশ ডাকলাম। মুক্তাঙ্গনে সভা হওয়ার কথা অনুমতি দেয়নি, মধ্যরাতে পার্টি অফিসের সামনে করার অনুমতি দিল। তখনই সন্দেহ হল কেনো এত রাতে অনুমতি দিল। এভাবে যে প্রকাশ্য দিবালোকে আরজেস গ্রেনেড মেরে হত্যার চেষ্টা চালাবে এটা কখনো কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তার আগে খালেদা জিয়া কিন্তু বক্তৃতাও দিয়েছে। আমার নাম ধরে বলেছে, প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা বিরোধী দলীয় নেতাও আমি কোনো দিন হতে পারব না। কোটালিপাড়ায় বোমা, তার আগে বলেছিল একশ বছরেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমি বাবার পথ ধরেই এদেশের মানুষের জন্য কাজ করছি। গ্রেনেড, বোমা, বুলেট দিয়ে বার বার হত্যাচেষ্টা হয়েছে। আল্লাহর রহমতে নেতাকর্মীরা আমাকে বাঁচিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘যারা গণতন্ত্রের কথা বলে, এটা কোন ধরনের গণতন্ত্র? যারা এভাবে গ্রেনেড হামলা করে মানুষ মারে!’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মাঝে গুম খুনের কথা বলে। তাদের হারিস চৌধুরী, সালাউদ্দিন আরও কে কে গুম হয়েছে বলে। পরে বিদেশে খোঁজ পাওয়া যায়। কেউ ভারতে, লন্ডনে বা আমেরিকায়। আসলে তারা নিজেরা নিজেদের গুম করে রাখে। এটাও এদেশে ঘটে, দুর্ভাগ্য।’
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যুক্ত হন তিনি।
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ প্রান্তে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, নির্বাহী সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন প্রমুখ।
বিএ-০২