জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

সিলেট মিরর ডেস্ক


আগস্ট ২৭, ২০২১
০৪:৫০ অপরাহ্ন


আপডেট : আগস্ট ২৭, ২০২১
০৪:৫০ অপরাহ্ন



জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

'গাহি সাম্যের গান/যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান/যেখানে মিশছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুস্লিম-ক্রীশ্চান।’ মহৎ এই বাণী যিনি অবলীলায় দৃঢ়কণ্ঠে উচ্চারণ করেছিলেন, তিনিই কাজী নজরুল ইসলাম। সাম্যবাদী, দ্রোহী, অথচ হৃদয়ে রোমান্টিক; এমন সম্মিলিত ভাবধারার বিরল প্রতিভা বাংলা কবিতায় আর দেখা যায় না।

মানবতার প্রতি তীব্র দরদি এমন কবি খুঁজে মেলাও ভার।’মানুষের চেয়ে বড় কিছু নয়, নহে কিছু মহীয়ান' উচ্চারণকারী কাজী নজরুল ইসলাম আজীবন অন্তরে ধারণ করেছেন 'এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো মন্দির কা'বা নাই।’

বাংলা সাহিত্যের অবিস্মরণীয় এক যুগস্রষ্টা তিনি। অসাম্প্রদায়িক চেতনার নজরুল একদিকে লিখেছেন ইসলামী গজল, অপরদিকে লিখেছেন শ্যামা সংগীত। তার বিস্ময়কর প্রতিভার জাদুস্পর্শে কেবল বাংলা কবিতা নয়, সংগীতও হয়েছে সমৃদ্ধিশালী। গানের বুলবুল তিনি। লিখেছেন উপন্যাসও। সকলে তাকে বিদ্রোহী কবি হিসেবে মান্যতা করে, কিন্তু বাংলা শিশুসাহিত্যেও তার অবদান অপরিসীম। শিশুদের মনের কথা বুঝতে পারতেন তিনি। কচি-কাঁচাদের সঙ্গে অবলীলায় মিশে যেতেন। তার সমসাময়িক মুসলিম কবি-সাহিত্যিকরা নিজেদের সুনির্দিষ্ট গÐির বাইরে যেতে সক্ষম হননি। অথচ কাজী নজরুল তার শক্তিশালী লেখনীর মধ্য দিয়ে প্রতিনিয়ত নিজেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বিশ্ব চরাচরে। কোনো গÐির মধ্যে তার সৃজনশীল প্রতিভা সীমিত থাকেনি। 

আজ ১২ ভাদ্র তার ৪৫তম প্রয়াণ বার্ষিকী। ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ অবিভক্ত বাংলার বর্ধমান জেলার চুরুলিয়ায় তিনি জন্মেছিলেন 'জ্যৈষ্ঠের ঝড়' হয়ে। সে ঝড় চিরতরে থেমে গিয়েছিল সেই সময়ের তৎকালীন পিজি হাসপাতালের কেবিনে ১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ ভাদ্রে, আজকের এই দিনে। অঙ্কের হিসাবে তার জীবনকাল ছিল ৭৭ বছর। 

রবীন্দ্র্রোত্তর সাহিত্যে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি তার কবিতায়, গানে, উপন্যাসে পরাধীন ভারতে বিশেষ করে অবিভক্ত বাংলায় সাম্প্রদায়িকতা, সামন্তবাদ, সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে আজীবন সোচ্চার ছিলেন। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তার গান-কবিতা সাহস ও প্রেরণা জুগিয়েছে মুক্তিকামী মানুষকে।

পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে কাজী নজরুলের গান ও কবিতা সমানভাবে সমাদৃত। বাঙালির হৃদয়ে তিনি 'বিদ্রোহী কবি' হিসেবে আসীন। কবিতা লিখে জেল খেটেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বাজলে লড়েছেন যুদ্ধের ময়দানে। তার রচিত 'চল্? চল্? চল্?, ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল' বাংলাদেশের রণসংগীত। সব্যসাচীর মতো দু'হাতে লিখেছেন অগ্নিবীণা, বিষের বাঁশি, চক্রবাক, সঞ্চিতা, প্রলয় শিখা, মরু ভাস্কর, দোলনচাঁপা, ভাঙ্গার গান, সাম্যবাদী, পুবের হাওয়া, ব্যথার দান, রিক্তের বেদন, বাঁধনহারা, মৃত্যুক্ষুধা, কুহেলিকা ইত্যাদি। 

ছেলেবেলায় ছিলেন দারিদ্রের কশাঘাতে জর্জরিত। তবুও কখনও মাথানত করেননি লোভ-লালসা, খ্যাতি, অর্থ, বিত্তবৈভবের কাছে। আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির জন্য। মানবতার মুক্তির পাশাপাশি সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার, ক‚পমÐূকতার বিরুদ্ধেও ছিলেন সোচ্চার। মুক্তবুদ্ধি ও চিন্তার পক্ষে কলম ধরেছেন নির্ভীক চিত্তে। ১৯৭২ সালের ২৪ মে স্বাধীন বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে ভারত সরকারের অনুমতি নিয়ে কবি নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। বঙ্গবন্ধু তাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করেন। তাকে দেওয়া হয় জাতীয় কবির মর্যাদা। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কাজী নজরুলকে ডিলিট উপাধিতে ভ‚ষিত করে। একই বছরের ২১ ফেব্রæয়ারি তাকে দেওয়া হয় একুশে পদক। ১৯৭৬ সালে মৃত্যুর পর কবির ইচ্ছানুসারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে সমাহিত করা হয় তাকে। 

জাতীয় কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবী সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় মসজিদ সংলগ্ন কবির সমাধিতে পুস্পস্তবক অর্পন। কবি নজরুল ইনস্টিটিউট এ উপলক্ষে আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের আয়োজনে আলোচনা সভা  ও নজরুল স্মৃতি বিজড়িত ‘স্মৃতি কক্ষে’র উদ্বোধন করা হবে। সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি প্রধান অতিথি হিসাবে এসব অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। 

বাংলাদেশ বেতার, টেলিভিশন ও বিভিন্ন বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে। 

আরসি-১০