সিলেট মিরর ডেস্ক
আগস্ট ৩১, ২০২১
০৬:২১ পূর্বাহ্ন
আপডেট : আগস্ট ৩১, ২০২১
০৬:২১ পূর্বাহ্ন
চলতি বছরের শুরুর দিকে দেশে টিকা কার্যক্রম। ইতোমধ্যে দেশের আড়াই কোটি মানুষ টিকা গ্রহণ করেছেন। তবে এর মধ্যে দেশে মিলেছে এমন একটি গ্রাম। যেখানে কেউ এখন অবধি টিকা গ্রহণ করেননি। গুজবে কান দেওয়ার ফলে টিকা থেকে তারা বঞ্চিত হয়েছেন বলে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার গোলাবাড়ী আদিবাসী গ্রামে ৩০টির মতো পরিবারে প্রায় ১৪০ জন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোক বাস করে। সারা দেশে করোনাভাইরাসের গণটিকা কার্যক্রম চললেও সোমবার (৩০ আগস্ট) পর্যন্ত ওই গ্রামের কেউ তা নেয়নি।
দিনাজপুর জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার পর্যন্ত উপজেলায় করোনা টিকা নিতে ৭৩ হাজার ১৮২ জন নিবন্ধন করেছে। এর মধ্যে ২০ হাজার ৯০৩ জন প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছে। আর সাত হাজার ৯৪৩ নিয়েছে দ্বিতীয় ডোজ।
ওই গ্রামে গেলে ষাটোর্ধ্ব সুশিলা মার্ডি বলেন, ‘আমাদের এক আত্মীয় বলেছেন, টিকা নিলে মানুষ মারা যাবে। সেই ভয়ে আমরা টিকা নিইনি।’
রমেষ মার্ডি বলেন, ‘আমার কমরত এমনিতেই ব্যথা, টিকা নিলে পাও নাকি ফুলে যাবে। আমরা গরিব মানুষ। পাও ফুলে গেলে সংসারের কাজ করবে কে? সেই কারণে আমরা টিকা নিইনি।’
গেদু হেমব্রম বলেন, ‘আমার একটু শ্বাসকষ্ট আছে। কমোরটা ব্যথা করে। প্রস্রাবের সমস্যা হয়। বিভিন্ন কারণে টিকা নিইনি।’
তাঁদের মতো ওই গ্রামের বেশ কিছু নারী জানান, গ্রামটিতে বসবাসরতদের মধ্যে অনেক পরিবার নিরক্ষর। তাদের কাছে বিভিন্ন অপপ্রচার আর গুজব ছড়ানো হয়েছে। এ কারণে অনেকে টিকা বিমুখ আছে।
গ্রামের মানুষের এমন দশা দেখে ওই গ্রামের স্থানীয় আদিবাসী মার্সাল যুব উন্নয়ন স্পোর্টিং ক্লাব উদ্যোগ নেয়। এ উপলক্ষে গত শুক্রবার গ্রামবাসীর কাছে টিকার গুরুত্ব এবং অপপ্রচারে সাড়া না দেওয়ার জন্য গ্রামের গির্জা চত্বরে আলোচনাসভার আয়োজন করে। এতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সাদিয়া কাসেম সেফা টিকার উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করেন।
গোলাবাড়ী আদর্শ মার্সাল যুব উন্নয়নের কোষাধ্যক্ষ আলমগীর মুর্মু বলেন, ‘গ্রামবাসীর এমন কথা চিন্তা করে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করি, কিন্তু তারা কোনোভাবে আয়ত্তে আসেনি। বিভিন্ন অপপ্রচারের কারণে তারা টিকা নেয়নি।’
নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা সাদিয়া কাসেম সেফা বলেন, ‘আমি এসে তাদের কথাগুলো শুনলাম। শেষে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। গ্রামবাসী সবাই টিকা নেবে বলে কথাও দিয়েছে।’
নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. শাহাজাহান আলী বলেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে পর্যাপ্ত প্রচারণা চালিয়েছি, কিন্তু ওই গ্রামের বাসিন্দারা নিরক্ষর হওয়ায় টিকা নিতে চায়নি। এখন তাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। এরই মধ্যে গ্রামের বেশির ভাগ মানুষকে নিবন্ধনের আওতায় আনা হয়েছে।’
আরসি-০৪