ওসমানীনগর প্রতিনিধি
সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২১
১২:০৯ পূর্বাহ্ন
আপডেট : সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২১
১২:০৯ পূর্বাহ্ন
সিলেটের ওসমানীনগরে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের এটিএম বুথ ভেঙে টাকা লুটের ঘটনায় রহস্য দানা বাঁধছে। ওই ঘটনায় রবিবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাতে ব্যাংকটির শেরপুর নতুন বাজার শাখার ব্যবস্থাপক সৈয়দ আশরাফুল আমিন বাদী হয়ে ওসমানীনগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। তবে এতে কাউকে অভিযুক্ত করা হয়নি। এদিকে, এ বিষয়ে অজ্ঞাত কারণে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছুক নন সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের শেরপুর শাখার নিচতলায় এই ব্যাংকের একটি এটিএম বুথ রয়েছে। ঘটনার দিন শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত সোয়া ৩টার দিকে উক্ত বুথে প্রবেশ করে মুখোশধারী চারজন। তারা বুথের নিরাপত্তাকর্মী জাকারিয়াকে (২৩) মারধর করে দুই হাত ও মুখ স্কচটেপ দিয়ে বেঁধে এবং গলায় চুরি ধরে জিম্মি করে। এরপর তারা এটিএম বুথের মেশিনটি শাবল দিয়ে ভেঙে মোট ২৪ লাখ ২৫ হাজার ৫০০ টাকা লুটে নেয়। পরবর্তীতে নিরাপত্তাকর্মী জাকারিয়া হাতের বাঁধন খুলে এটিএম বুথের দ্বিতীয় তলায় থাকা অপর নিরাপত্তাকর্মী সাহেল মিয়াকে ইশারা করলে তিনি এসে জাকারিয়ার মুখের স্কচটেপ খুলে দেন। তারপর জাকারিয়ার মুখ থেকে বিস্তারিত শুনে ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্মকতা, থানার পুলিশ, সিআইডি, পিআইবি ও ডিবি পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
সোমবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে ব্যাংককর্মীদের বুথ পর্যবেক্ষণ করতে দেখা যায়। এ সময় সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে দ্রুত তারা বুথের শাটার (দরজা) নামিয়ে দেন। বুথের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত ব্যাংকে প্রবেশ করলে কথা বলতে অনীহা প্রকাশ করেন ব্যাংক কর্মকর্তারা। পরে ভয়েস রেকর্ড ও ভিডিও ধারণ না করার শর্তে কথা বলেন শাখার ব্যবস্থাপক সৈয়দ আশরাফুল আমিন।
তিনি জানান, এটিএম বুথের ভেতরে ৫টি ও বাইরে (বুথ সংলগ্ন) ৩টি সিসি ক্যামেরা সচল রয়েছে। মুখোশধারী ৪ জন দুষ্কৃতিকারী বুথের ভেতরে প্রবেশ করে ভেতরে থাকা একমাত্র নিরাপত্তাকর্মীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সিসি ক্যামেরায় কালি ছিটিয়ে দেয়। এতে ফুটেজ ঝাপসা হয়ে গেলে তারা বুথ ভেঙে টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।
তবে বাইরে থাকা ৩টি সিসি ক্যামেরার ফুটেজের ব্যাপারে তার কাছ থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানান, শেরপুর নতুন বাজার কমিটির এক নৈশপ্রহরী ভোর পৌনে ৪টার দিকে বুথের পার্শ্ববর্তী ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে হেলমেট পরিহিত তিন যুবককে মোটরসাইকেলে বসে থাকতে দেখেন। হঠাৎ পেছন থেকে আরও একজন দৌড়ে এসে মোটরসাইকেলটিতে উঠলে তারা চারজন মৌলভীবাজারের দিকে চলে যায়। এ সময় শেরপুর টোল প্লাজার সামনে টহল পুলিশের একটি ভ্যান দাঁড়িয়ে ছিল।
আবদুস সালাম নামের এক চাকরিজীবী বলেন, প্রায়ই রাত ১০টার পর বুথে গেলে ভেতর থেকে বুথ বন্ধ পাওয়া যায়। বুথের নিরাপত্তাকর্মী ভেতর থেকে গ্লাসের দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়েন। কেউ প্রয়োজনে নক করলে তিনি বুথের দরজা খুলে দেন। ঘটনার রাতে নিরাপত্তাকর্মী ভেতর থেকে উক্ত ৪ জনকে দেখার কথা। কোনো সন্দেহ হলে তিনি তার সঙ্গে থাকা মোবাইল দিয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবগত করতে পারতেন। কিন্তু চারজন মুখোশধারীকে দেখার পরেও গভীর রাতে বুথের দরজা খুলে দেওয়ার কারণটি বোধগম্য নয়। এছাড়া ওই নিরাপত্তাকর্মী স্থানীয় পূর্ব তাজপুর গ্রামের বাসিন্দা হওয়ায় তিনিও সন্দেহের বাইরে নন।
ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামল বণিক বলেন, ঘটনাটি অবশ্যই রহস্যজনক। আমরা খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে নিরাপত্তাকর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদসহ পুরো ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করেছি। এ বিষয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিস্তারিত পরে জানানো হবে।
ইউডি/আরআর-০৩