সিলেট মিরর ডেস্ক
সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২১
০৮:০৮ অপরাহ্ন
আপডেট : সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২১
০৬:২৮ পূর্বাহ্ন
সিলেটের জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক চিকিৎসাধীন নারীর মৃত্যুর ঘটনায় নিহতের স্বজনদের সঙ্গে হাসপাতালের নিরাপত্তাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। স্বজনদের অভিযোগ ভুল চিকিৎসার জন্য ওই নারীর মৃত্যু হয়েছে। হামলার প্রতিবাদে নিহতের স্বজনসহ পরিবহন শ্রমিকরা পাঠানটুলা এলাকায় সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে রেখেছে।
আজ বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বেলা ২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত নারী রোগীর নাম ফুলজান বেগম (৭৩)। তিনি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ইসলামাবাদ এলাকার বাসিন্দা এবং সিলেট জেলা ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান-পিকআপ শ্রমিক ইউনিয়নের প্রচার সম্পাদক সামাদুর রহমানের মা।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ফুলজান বেগম চার পাঁচদিন আগে পেটে টিউমার নিয়ে রাগীব-রাবেয়া হাসপাতালে ভর্তি হন। গত সোমবার তার অস্ত্রোপচার হয়। এরপর তিনি হার্ট অ্যাটাক করলে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বুধবার দুপুরে মৃত্যু হয়।
অন্যদিকে নিহতের ছেলে সামাদুর রহমানের অভিযোগ, তার মাকে ভুল অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। এছাড়া তিনদিন আগে মারা গেলেও বিল বাড়ানোর জন্য তাকে আইসিইউতে রেখে দেওয়া হয়।
গতকাল দুপুরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ফুলজান বেগমকে মৃত ঘোষণা দিলে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন নিহতের স্বজনরা। তারা হাসপাতালের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। হাসপাতালের আইসিইউ কক্ষের জানালা এবং বাইরে গাড়ি ভাংচুর করেন। এ সময় হাসপাতালের নিরাপত্তাকর্মীরা বাঁধা দিলে দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর রোগীর স্বজনরা পাঠানটুলা পয়েন্ট এলাকায় সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করেন। এসময় সিলেট জেলা ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান-পিকআপ শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যরাও এতে যোগ দেন। তারা পাঠানটুলা পয়েন্টে আড়াআড়িভাবে ট্রাক দাঁড় করিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। এতে ব্যস্ততম এই সড়কের দুইপাশে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়। অবরোধকারীরা হাসপাতালের নিরাপত্তাকর্মীদের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ এনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাতে থাকেন। এক ঘন্টার অধিক সময় অবরোধ চলার পর সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলে বিক্ষোভকারীরা অবরোধ তুলে নেন।
সিলেট জেলা ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান-পিকআপ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু সরকার সিলেট মিররকে বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের প্রচার সম্পাদক সামাদুর রহমানের মা ভুল চিকিৎসার কারণে মারা গেছেন। তিনি তিনদিন আগে মারা গেলেও তারা বিল বাড়ানোর জন্য আইসিউতে রেখে দিয়েছিল। এতে করে নিহতের ছেলের স্বজনদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। সামাদুর কান্নাকাটি করলে আমাদের সংগঠনের অনেকে তাকে শান্তনা দিতে হাসপাতাল গেলে এক পর্যায়ে তাদের উপর হামলা চালানো হয়। এর প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করা হয়।’ দোষীদের বিচারের আশ্বাস পাওয়ায় তারা অবরোধ তুলে নিয়েছেন বলে জানান।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. আবেদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘ওই নারী পেটে টিউমার নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম এটা গাইনি সমস্যা। তবে সোমবার অস্ত্রোপাচার শুরুর পর দেখা যায়, টিউমারটি তার নাড়িভ‚ড়ির মধ্যে। পরে জেনারেল সার্জনরা এই অস্ত্রোপচার করেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘অস্ত্রোপচারের পর পর্যবেক্ষণ কক্ষে থাকা অবস্থায় ওই নারী হার্ট অ্যাটাক করেন। পরে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি শঙ্কটাপন্ন অবস্থায় ছিলেন। যা প্রতি মুহূর্তে আমরা রোগীর স্বজনদের অবগত করেছি।’ তিনদিন আগেই ওই নারী মারা গেছেন বলে স্বজনদের অভিযোগকে সম্পূর্ণ মিথ্যে দাবি করে তিনি বলেন, ‘এভাবে রোগীর মৃত্যুর পর যদি অভিযোগ তোলা হয় এবং ভাংচুর চালানো হয় তবে তো চিকিৎসকরা আর জটিল কোনো রোগীর চিকিৎসায় উৎসাহ পাবেন না। বরং রোগীর অবস্থা শঙ্কটাপন্ন হলে এড়িয়ে যাবেন।’
অবরোধের খবর পেয়ে বিকেল ৫টার দিকে ঘটনা স্থলে যান সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ। তার আশ্বাসের ভিত্তিতে শ্রমিকরা পরে অবরোধ তুলে নেন। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন, ‘শ্রমিকরা মামলা দিতে চাইলে মামলা গ্রহণ করা হবে এবং ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত শেষে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।’
বি এন-০৫